Dhaka ০২:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৈয়দপুরে গরীবের ফার্নিচারের হাট হলো ঢেলাপীর

oppo_2

সৈয়দপুর-নীলফামারী সড়ক সংলগ্ন  ঢেলাপীর হাট। শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে এই হাটটি। সেখানে বিক্রি হচ্ছে গরিব মানুষের সব ধরনের ফার্নিচার। আর এ কারনেই ঢেলাপীর হাটকে গরীবের ফার্নিচার হাট বলা হয়।

সপ্তাহের দুইদিন শুক্রবার ও মঙ্গলবার এই হাটে চলে ফার্নিচারের জমজমাট বেচা-কেনা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই হাটে খাট, চৌকি, আলনা, শো-কেস, আলমিরা, সোফা, ডাইনিং টেবিল, বেঞ্চ, চেয়ার- টেবিল থেকে শুরু করে পিঠা তৈরির পিড়ি-বেলুন ওঠতে শুরু হয়। আর কেনা বেচা শুরু হয় দুপুরের পর থেকে। দূর-দূরান্ত থেকে কারিগররা ফার্নিচার নিয়ে আসেন এই হাটে। এভাবে প্রতি হাটে প্রায় ২/৩ লাখ টাকার ফার্নিচার বিক্রি হয়ে থাকে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ ফার্নিচারেই আম, পাকুর, বট বা অসাড় কাঁঠাল কাঠ ব্যবহার করা হয়। সৈয়দপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী খানসামা, পাকেরহাট, নীলফামারী, চড়াইখোলা, বড়ুয়া, তারাগঞ্জ, চিরিবন্দর, রানীরবন্দর, চম্পাতলী, বাবড়িঝাড়সহ বিভিন্ন স্থান থেকে ফার্নিচারগুলো আনেন কারিগররা।

হাটে আসা কাঠমিস্ত্রী আব্দুল মজিদ (৫৫) জানান, সৈয়দপুর শহরের রেললাইনের ধারে তার কাঠের ফার্নিচারের দোকান ছিল। রেল কর্তৃপক্ষ বাড়িঘর উচ্ছেদ করার কারনে বেকার হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন যেহেতু কাঠের ফার্নিচার তৈরির কাজ জানা আছে তাই বাড়িতে চৌকি, খাট, চেয়ার-বেঞ্চ তৈরি করে ঢেলাপীর হাটে বিক্রি করছেন। বর্তমানে এই কাজ করে তার ৭ জনের সংসার ভালোই চলছে। বাংগালীপুর নীজ পাড়ার কাঠমিস্ত্রী মজনু (৪০) জানান, বাড়িতে ফার্নিচার বানিয়ে হাটে নিয়ে যান। এতে বিক্রিও ভালো হয়। তিনি বলেন, আমার মতো প্রায় ২০/২৫ জন কাঠমিস্ত্রী নিজ বাড়িতে ফার্নিচার তৈরি করার পর ঢেলাপীর বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।

কামারপুকুর ইউনিয়নের বাজার সংলগ্ন লোকমান আলী (৬০) জানান, বড় জামাতা  সাদেক আলীর দাবি একটা খাট, আলনা ও চেয়ার লাগবে। বিয়ের সময় কিছুই দিতে পাইনি তাঁকে। জামাইয়ের আবদার পুরন করতে গত শুক্রবার হাটে গিয়ে সামর্থ্য অনুয়ায়ী সাড়ে ৩ হাজার টাকায় সেমি বক্স খাট, একটি সোফা সারে ৩ হাজার টাকা এবং আলনা ৪শত টাকায় কিনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি। কষ্ট হলেও মেয়ের সুখের জন্য ফার্নিচারগুলো কিনে দিলেন।

রোদ বৃষ্টি ঝড় হলেও উঁচু ও বালু মাটিতে হাটটি হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয় না। এছাড়া হাটে ধানের বাজার, রিকশা এবং নতুন,পুরাতন সাইকেলও বিক্রি হয়ে থাকে একেবারেই কম দামে। তবে ধানের বাজারে সকাল ৮টার মধ্যে বেচা-কেনা শেষ হয়ে যায়। আর সাইকেল-রিকশা কেনা-বেচা চলে বিকেল পর্যন্ত।

হাট ইজাদারের প্রতিনিধি আব্দুল মোত্তালেব হক জানান,নীলফামারী জেলার মধ্যে ঢেলাপীর হাটটির সুনাম রয়েছে। বিশেষ করে ফার্নিচার, নতুন-পুরনো সাইকেল, রিকশা, ভ্যান বেচা-কেনা জমজমাট ভাবে চলে। আর ধানের বাজারে বগুড়া, জয়পুরহাট, শেরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বড় বড় ব্যবসায়ী এখানে আসেন ধান কেনার জন্য। অনেকে আবার কম দামে ফার্নিচার নিয়ে যায় চড়া দামে বিক্রি করার জন্য। নীলফামারী সহ বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার যুবকরাও এই হাটের ফার্নিচার কিনে অনত্র বিক্রি করে তাদের সংসারের সচ্ছলতা এনেছেন। বেকার না থেকে ঢেলাপীর বাজারের ফার্নিচার কিনে ব্যবসা করার জন্য যুবকদের পরামর্শ দেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

সৈয়দপুরে গরীবের ফার্নিচারের হাট হলো ঢেলাপীর

Update Time : ০৪:১৪:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

সৈয়দপুর-নীলফামারী সড়ক সংলগ্ন  ঢেলাপীর হাট। শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে এই হাটটি। সেখানে বিক্রি হচ্ছে গরিব মানুষের সব ধরনের ফার্নিচার। আর এ কারনেই ঢেলাপীর হাটকে গরীবের ফার্নিচার হাট বলা হয়।

সপ্তাহের দুইদিন শুক্রবার ও মঙ্গলবার এই হাটে চলে ফার্নিচারের জমজমাট বেচা-কেনা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই হাটে খাট, চৌকি, আলনা, শো-কেস, আলমিরা, সোফা, ডাইনিং টেবিল, বেঞ্চ, চেয়ার- টেবিল থেকে শুরু করে পিঠা তৈরির পিড়ি-বেলুন ওঠতে শুরু হয়। আর কেনা বেচা শুরু হয় দুপুরের পর থেকে। দূর-দূরান্ত থেকে কারিগররা ফার্নিচার নিয়ে আসেন এই হাটে। এভাবে প্রতি হাটে প্রায় ২/৩ লাখ টাকার ফার্নিচার বিক্রি হয়ে থাকে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ ফার্নিচারেই আম, পাকুর, বট বা অসাড় কাঁঠাল কাঠ ব্যবহার করা হয়। সৈয়দপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী খানসামা, পাকেরহাট, নীলফামারী, চড়াইখোলা, বড়ুয়া, তারাগঞ্জ, চিরিবন্দর, রানীরবন্দর, চম্পাতলী, বাবড়িঝাড়সহ বিভিন্ন স্থান থেকে ফার্নিচারগুলো আনেন কারিগররা।

হাটে আসা কাঠমিস্ত্রী আব্দুল মজিদ (৫৫) জানান, সৈয়দপুর শহরের রেললাইনের ধারে তার কাঠের ফার্নিচারের দোকান ছিল। রেল কর্তৃপক্ষ বাড়িঘর উচ্ছেদ করার কারনে বেকার হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন যেহেতু কাঠের ফার্নিচার তৈরির কাজ জানা আছে তাই বাড়িতে চৌকি, খাট, চেয়ার-বেঞ্চ তৈরি করে ঢেলাপীর হাটে বিক্রি করছেন। বর্তমানে এই কাজ করে তার ৭ জনের সংসার ভালোই চলছে। বাংগালীপুর নীজ পাড়ার কাঠমিস্ত্রী মজনু (৪০) জানান, বাড়িতে ফার্নিচার বানিয়ে হাটে নিয়ে যান। এতে বিক্রিও ভালো হয়। তিনি বলেন, আমার মতো প্রায় ২০/২৫ জন কাঠমিস্ত্রী নিজ বাড়িতে ফার্নিচার তৈরি করার পর ঢেলাপীর বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।

কামারপুকুর ইউনিয়নের বাজার সংলগ্ন লোকমান আলী (৬০) জানান, বড় জামাতা  সাদেক আলীর দাবি একটা খাট, আলনা ও চেয়ার লাগবে। বিয়ের সময় কিছুই দিতে পাইনি তাঁকে। জামাইয়ের আবদার পুরন করতে গত শুক্রবার হাটে গিয়ে সামর্থ্য অনুয়ায়ী সাড়ে ৩ হাজার টাকায় সেমি বক্স খাট, একটি সোফা সারে ৩ হাজার টাকা এবং আলনা ৪শত টাকায় কিনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি। কষ্ট হলেও মেয়ের সুখের জন্য ফার্নিচারগুলো কিনে দিলেন।

রোদ বৃষ্টি ঝড় হলেও উঁচু ও বালু মাটিতে হাটটি হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয় না। এছাড়া হাটে ধানের বাজার, রিকশা এবং নতুন,পুরাতন সাইকেলও বিক্রি হয়ে থাকে একেবারেই কম দামে। তবে ধানের বাজারে সকাল ৮টার মধ্যে বেচা-কেনা শেষ হয়ে যায়। আর সাইকেল-রিকশা কেনা-বেচা চলে বিকেল পর্যন্ত।

হাট ইজাদারের প্রতিনিধি আব্দুল মোত্তালেব হক জানান,নীলফামারী জেলার মধ্যে ঢেলাপীর হাটটির সুনাম রয়েছে। বিশেষ করে ফার্নিচার, নতুন-পুরনো সাইকেল, রিকশা, ভ্যান বেচা-কেনা জমজমাট ভাবে চলে। আর ধানের বাজারে বগুড়া, জয়পুরহাট, শেরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বড় বড় ব্যবসায়ী এখানে আসেন ধান কেনার জন্য। অনেকে আবার কম দামে ফার্নিচার নিয়ে যায় চড়া দামে বিক্রি করার জন্য। নীলফামারী সহ বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার যুবকরাও এই হাটের ফার্নিচার কিনে অনত্র বিক্রি করে তাদের সংসারের সচ্ছলতা এনেছেন। বেকার না থেকে ঢেলাপীর বাজারের ফার্নিচার কিনে ব্যবসা করার জন্য যুবকদের পরামর্শ দেন তিনি।