Dhaka ০১:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্রাইয়ের কুমড়া বড়ির খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে

উত্তর জনপদের জেলা নওগাঁর আত্রাইয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যের পাশাপাশি খ্যাতি রয়েছে আত্রাইয়ের গৃহবধূদের হাতে তৈরি সুস্বাদু খাবার কুমড়া বড়ির।

শীতের মৌসুমে কুমড়ার বড়ির কদরটা একটু বেশি। এ অঞ্চলে সুস্বাদু কুমড়ো বড়ির চাহিদা রয়েছে দেশ জুড়ে। তাই প্রতি বছরের মতো আত্রাইয়ের বিভিন্ন গ্রামে কুমড়ার বড়ি তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগর ও ব্যবসায়ীরা।

মাশকালাই ও কুমড়া দিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি খাবারটির চাহিদা শুধু স্থানীয়ভাবেই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেও এর চাহিদা রয়েছে।

কুমড়া বড়ি তৈরি ও বাজারজাত করা হয় শীতকালে। তবে শীত আসার আগেই শুরু হয়ে যায় এই বড়ি তৈরির ব্যস্ত। গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের গৃহবধূরা মৌসুমি খাদ্য হিসেবে কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। এর দ্বারা তারা আত্মনির্ভরশীলও হচ্ছেন।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গৃহবধূদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চালকুমড়া ও মাশকালাইয়ের ডালই এই বড়ি তৈরির প্রধান উপাদান। এছাড়াও কিছু মসলার সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় ‘কুমড়া-বড়ি‘। খাবারের আলাদা স্বাদ আনতে যার জুড়ি মেলা ভার। চাল-কুমড়ার মিশ্রণ থাকায় সম্ভবত এর নাম হয়েছে ‘কুমড়া-বড়ি‘। এই বড়ি শীত মৌসুমে তৈরি এবং বিক্রি করা হয়ে থাকে। যা সারা বছরের খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সবজি তরকারি ছাড়াও প্রায় সব তরকারিতে এই খাদ্য সহযোগী উপাদান হিসাবে ব্যবহার হয়। আলাদাভাবে ভর্তা করেও কুমড়া বড়ি খাওয়া যায়।

আত্রাই উপজেলার পালপাড়া গ্রামের কয়েকজন গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীত মৌসুমে তাদের পাড়ার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। এটি তৈরির পর স্থানীয় ও পার্শ^বর্তী উপজেলাসহ নাটোর, বগুড়া, পাবনা, জয়পুরহাট, রাজশাহী জেলার দোকানিরা এসে পাইকারি কিনে নিয়ে যায়। এতে করে নিজেদের খাবারের পাশাপাশি বিক্রি করে বাড়তি আয় হয় বলেও জানান তারা।

উপজেলার সাহেবগঞ্জ পালপাড়া গ্রামের গৃহবধূ অঞ্জলী রানী বলেন, কুমড়া বড়ি তৈরিতে প্রধান উপাদান হিসেবে মাশকালাইয়ের ডাল ব্যবহার করা হয়। প্রথমে সারা রাত পানিতে মাশকালাই ডাল ভিজিয়ে রাখার পর তা পাটাতে পিষে প্রতিদিন রোদে পাতলা কাপড়ের উপর শুকাতে দিতে হয়। দেড় থেকে দুই সপ্তাহ রোদে শুকানোর পর কুমড়া বড়ি খাওয়ার উপযোগী হলে বিভিন্ন দোকানে পাইকারি এবং খুচরা বিক্রয় করা হয়। আবার কখনো কখোন বড় বড় মহাজন ও ছোট ছোট দোকানিরা নিজেরাই এসে কিনে নিয়ে যায়।

একই গ্রামের কুমড়া বড়ি বিক্রেতা নারায়ণ চন্দ্র বৈরাগী, কালী চন্দ্র, পরেশ চন্দ্র বলেন, মাশকালাই দিয়ে তৈরি কুমড়া বড়ি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মানের কুমড়া বড়ি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে কুমড়া বড়ি তৈরির উপযুক্ত সময়। এই দুই মাসে যে পরিমাণ কুমড়া বড়ি সংগ্রহ করা হয় তা বছরজুড়ে বিক্রি করা হয় বলে তারা জানান।

উপজেলার সচেতন মহল মনে করে ঐতিহ্যবাহী এই খাদ্যটি তৈরি করে যারা জীবিকা নির্বাহ করছে সরকার স্থানীয়ভাবে সহজ শর্তে ঋণদান করলে তারা এটাকে আরও বিস্তৃত পরিসরে করতে পারেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

আত্রাইয়ের কুমড়া বড়ির খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে

Update Time : ১২:৪৫:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

উত্তর জনপদের জেলা নওগাঁর আত্রাইয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যের পাশাপাশি খ্যাতি রয়েছে আত্রাইয়ের গৃহবধূদের হাতে তৈরি সুস্বাদু খাবার কুমড়া বড়ির।

শীতের মৌসুমে কুমড়ার বড়ির কদরটা একটু বেশি। এ অঞ্চলে সুস্বাদু কুমড়ো বড়ির চাহিদা রয়েছে দেশ জুড়ে। তাই প্রতি বছরের মতো আত্রাইয়ের বিভিন্ন গ্রামে কুমড়ার বড়ি তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগর ও ব্যবসায়ীরা।

মাশকালাই ও কুমড়া দিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি খাবারটির চাহিদা শুধু স্থানীয়ভাবেই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেও এর চাহিদা রয়েছে।

কুমড়া বড়ি তৈরি ও বাজারজাত করা হয় শীতকালে। তবে শীত আসার আগেই শুরু হয়ে যায় এই বড়ি তৈরির ব্যস্ত। গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের গৃহবধূরা মৌসুমি খাদ্য হিসেবে কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। এর দ্বারা তারা আত্মনির্ভরশীলও হচ্ছেন।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গৃহবধূদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চালকুমড়া ও মাশকালাইয়ের ডালই এই বড়ি তৈরির প্রধান উপাদান। এছাড়াও কিছু মসলার সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় ‘কুমড়া-বড়ি‘। খাবারের আলাদা স্বাদ আনতে যার জুড়ি মেলা ভার। চাল-কুমড়ার মিশ্রণ থাকায় সম্ভবত এর নাম হয়েছে ‘কুমড়া-বড়ি‘। এই বড়ি শীত মৌসুমে তৈরি এবং বিক্রি করা হয়ে থাকে। যা সারা বছরের খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সবজি তরকারি ছাড়াও প্রায় সব তরকারিতে এই খাদ্য সহযোগী উপাদান হিসাবে ব্যবহার হয়। আলাদাভাবে ভর্তা করেও কুমড়া বড়ি খাওয়া যায়।

আত্রাই উপজেলার পালপাড়া গ্রামের কয়েকজন গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীত মৌসুমে তাদের পাড়ার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। এটি তৈরির পর স্থানীয় ও পার্শ^বর্তী উপজেলাসহ নাটোর, বগুড়া, পাবনা, জয়পুরহাট, রাজশাহী জেলার দোকানিরা এসে পাইকারি কিনে নিয়ে যায়। এতে করে নিজেদের খাবারের পাশাপাশি বিক্রি করে বাড়তি আয় হয় বলেও জানান তারা।

উপজেলার সাহেবগঞ্জ পালপাড়া গ্রামের গৃহবধূ অঞ্জলী রানী বলেন, কুমড়া বড়ি তৈরিতে প্রধান উপাদান হিসেবে মাশকালাইয়ের ডাল ব্যবহার করা হয়। প্রথমে সারা রাত পানিতে মাশকালাই ডাল ভিজিয়ে রাখার পর তা পাটাতে পিষে প্রতিদিন রোদে পাতলা কাপড়ের উপর শুকাতে দিতে হয়। দেড় থেকে দুই সপ্তাহ রোদে শুকানোর পর কুমড়া বড়ি খাওয়ার উপযোগী হলে বিভিন্ন দোকানে পাইকারি এবং খুচরা বিক্রয় করা হয়। আবার কখনো কখোন বড় বড় মহাজন ও ছোট ছোট দোকানিরা নিজেরাই এসে কিনে নিয়ে যায়।

একই গ্রামের কুমড়া বড়ি বিক্রেতা নারায়ণ চন্দ্র বৈরাগী, কালী চন্দ্র, পরেশ চন্দ্র বলেন, মাশকালাই দিয়ে তৈরি কুমড়া বড়ি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মানের কুমড়া বড়ি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে কুমড়া বড়ি তৈরির উপযুক্ত সময়। এই দুই মাসে যে পরিমাণ কুমড়া বড়ি সংগ্রহ করা হয় তা বছরজুড়ে বিক্রি করা হয় বলে তারা জানান।

উপজেলার সচেতন মহল মনে করে ঐতিহ্যবাহী এই খাদ্যটি তৈরি করে যারা জীবিকা নির্বাহ করছে সরকার স্থানীয়ভাবে সহজ শর্তে ঋণদান করলে তারা এটাকে আরও বিস্তৃত পরিসরে করতে পারেন।