Dhaka ০২:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন: সিরাজগঞ্জের দুই থানার ওসিসহ ১৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে সিরাজগঞ্জের দুই থানার ওসিসহ ১৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এক ট্রাক চালক। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানা ও সলঙ্গা থানার সাবেক ওসিসহ চার পুলিশ কর্মকর্তা ও অজ্ঞাত ১০ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে ওই মামলাটি দায়ের করা হয়। গত মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জ আমলী আদালতে ট্রাক চালক রোকন মোল্লা (৩৬) নিজেই মামলাটি দায়ের করেন। তিনি পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার নেছরাপাড়া এলাকার রহমত মোল্লার ছেলে।

বাদী পক্ষের আইনজীবী গোলাম হাদী কিরন গণমাধ্যমকে জানান,আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপারকে (এসপি) রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন,উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক, সলঙ্গা থানার সাবেক তদন্ত ওসি শেখ তাজউদ্দিন আহমেদ, উল্লাপাড়া থানার সাবেক সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুস ছালাম, সলঙ্গা থানার সাব-ইন্সপেক্টর মনসুর রহমান, সলঙ্গা থানার সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুল কুদ্দুস ও অজ্ঞাতনামা আরও ৯ পুলিশ সদস্য।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ,গত ২০২৪ সালের ৫ মে রাত ১টার দিকে বগুড়া থেকে পাবনা যাওয়ার পথে উল্লাপাড়ার কাওয়াক মোড়ে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে রোকন মোল্লর ট্রাকের ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লাপাড়া থানার তৎকালীন ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম রোকনের দিকে অস্ত্র তাক করেন।  ভয়ে রোকন দ্রুত ট্রাক ঘুরিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উল্লাপাড়া ও সলঙ্গা থানার পুলিশ তার পিছু নেয়। পরে রাজশাহী-পাবনা মহাসড়কের হরিণচড়া এলাকায় তাকে আটক করে মারধর করা হয়। ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম তার ডান পায়ে গুলি করেন এবং সলঙ্গা থানায় নিয়ে গিয়ে তিনটি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরবর্তীতে তাকে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকার অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তিতে সেখানে তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়।

ভুক্তভোগী রোকন মোল্লার মতে,ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম তাকে পঙ্গু করে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কারণে মামলা করতে না পারাতে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।

এবিষয়ে অভিযুক্ত ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম (বর্তমান কর্মস্থল রাজবাড়ি জেলার রেলওয়ে থানার ওসি ) অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,এই মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। তারমতে রোকন মোল্লা একজস দুধর্ষ ডাকাত। দেশের বিভিন্ন খানায় তার নামে ডাকাতি,টুরি,অস্ত্রসহ ২৮ টি মামলা আছে। ট্রাক চালকের আড়ালে ডাকাতি তার মুল পেশা। আমি পাবনা জেলার সাথিয়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে থাকাকালিন একটি বাড়ি থেকে গরু ডাকাতি করে পালানোর পর তাকে আটক করে ৫টি গরু উদ্ধারসহ গ্রেঢকার করেছিলাম সম্ভবত সেই ক্ষোভ থেকে এমন অভিযোগ এনে মামলা করেছে।

অপরদিকে আদালতের নির্দেশনার কথা স্বীকার করে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো.ফারুক হোসেন জানান,আমি ইতোমধ্যে আদালত কর্তৃক নির্দেশনা পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে আদালতকে জানানো হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন: সিরাজগঞ্জের দুই থানার ওসিসহ ১৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

Update Time : ০৭:২৩:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে সিরাজগঞ্জের দুই থানার ওসিসহ ১৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এক ট্রাক চালক। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানা ও সলঙ্গা থানার সাবেক ওসিসহ চার পুলিশ কর্মকর্তা ও অজ্ঞাত ১০ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে ওই মামলাটি দায়ের করা হয়। গত মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জ আমলী আদালতে ট্রাক চালক রোকন মোল্লা (৩৬) নিজেই মামলাটি দায়ের করেন। তিনি পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার নেছরাপাড়া এলাকার রহমত মোল্লার ছেলে।

বাদী পক্ষের আইনজীবী গোলাম হাদী কিরন গণমাধ্যমকে জানান,আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপারকে (এসপি) রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন,উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক, সলঙ্গা থানার সাবেক তদন্ত ওসি শেখ তাজউদ্দিন আহমেদ, উল্লাপাড়া থানার সাবেক সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুস ছালাম, সলঙ্গা থানার সাব-ইন্সপেক্টর মনসুর রহমান, সলঙ্গা থানার সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুল কুদ্দুস ও অজ্ঞাতনামা আরও ৯ পুলিশ সদস্য।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ,গত ২০২৪ সালের ৫ মে রাত ১টার দিকে বগুড়া থেকে পাবনা যাওয়ার পথে উল্লাপাড়ার কাওয়াক মোড়ে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে রোকন মোল্লর ট্রাকের ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লাপাড়া থানার তৎকালীন ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম রোকনের দিকে অস্ত্র তাক করেন।  ভয়ে রোকন দ্রুত ট্রাক ঘুরিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উল্লাপাড়া ও সলঙ্গা থানার পুলিশ তার পিছু নেয়। পরে রাজশাহী-পাবনা মহাসড়কের হরিণচড়া এলাকায় তাকে আটক করে মারধর করা হয়। ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম তার ডান পায়ে গুলি করেন এবং সলঙ্গা থানায় নিয়ে গিয়ে তিনটি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরবর্তীতে তাকে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকার অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তিতে সেখানে তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়।

ভুক্তভোগী রোকন মোল্লার মতে,ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম তাকে পঙ্গু করে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কারণে মামলা করতে না পারাতে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।

এবিষয়ে অভিযুক্ত ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম (বর্তমান কর্মস্থল রাজবাড়ি জেলার রেলওয়ে থানার ওসি ) অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,এই মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। তারমতে রোকন মোল্লা একজস দুধর্ষ ডাকাত। দেশের বিভিন্ন খানায় তার নামে ডাকাতি,টুরি,অস্ত্রসহ ২৮ টি মামলা আছে। ট্রাক চালকের আড়ালে ডাকাতি তার মুল পেশা। আমি পাবনা জেলার সাথিয়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে থাকাকালিন একটি বাড়ি থেকে গরু ডাকাতি করে পালানোর পর তাকে আটক করে ৫টি গরু উদ্ধারসহ গ্রেঢকার করেছিলাম সম্ভবত সেই ক্ষোভ থেকে এমন অভিযোগ এনে মামলা করেছে।

অপরদিকে আদালতের নির্দেশনার কথা স্বীকার করে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো.ফারুক হোসেন জানান,আমি ইতোমধ্যে আদালত কর্তৃক নির্দেশনা পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে আদালতকে জানানো হবে।