রাজশাহীর তানোর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ও চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি শরীফ মুন্সীর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চাতাল দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখলকৃত চাতাল উদ্ধারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লিপি রানী ও ছেলে সেতু কুমার মন্ডল বাদী হয়ে শরীফ মুন্সী কে বিবাদী করে গত মঙ্গলবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন ইউপির বা তানোর টু চৌবাড়িয়া রাস্তার মালশিরা মোড়ের পশ্চিমে চাতাল দখলের ঘটনা ঘটে রয়েছে। যুবদলের নেতার এমন দখল কান্ডে চরম বিব্রত সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে ইউপির তৃনমুলের নেতা কর্মীরা। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তৃনমুলের নেতাকর্মীরা, সেই সাথে দলীয় ভাবে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি তুলেছেন জনসাধারণ ও সিনিয়র নেতারা।
জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরের দিকে উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন ইউপির মালশিরা মোড় ও মুল রাস্তার পশ্চিমে বাঁশের খুটি বেড়া দিয়ে জায়গা দখল করছেন যুবদল নেতা শরীফ মুন্সী বাহিনী। জায়গা দখলের খবরে জায়গার মালিক সেতু মন্ডল ৯৯৯ কল করেন। এর প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। পুলিশ চলে আসার পর পুনরায় কাজ শুরু করেন। সংবাদ পেয়ে পুনরায় ঘটনাস্থলে পুলিশ যান। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শরীফ বাহিনীর পালিয়ে যায়। ওই দিন রাতেই টিন দিয়ে পুরো জায়গা দখলে নেয় যুবদলের নেতা। পরদিন মঙ্গলবার দখলকৃত জায়গায় মালামাল রাখা হয়। পুলিশের কঠোর পদক্ষেপের বিপরীতে নমনীয় ভূমিকার কথা জানিয়ে মালিক সেতু মন্ডল জানান, বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নি। পুলিশ যদি মনে করত তাহলে জায়গা টিন বাঁশ দিয়ে ঘিরে দখল নিতে পারত না। তিনি আরো বলেন, আমার পিতা দিলিপ মন্ডল বিগত ২০১২ সালে চাতাল সহ বেশকিছু জমি আমার ও মায়ের কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু গত সোমবার দুপুরের আগ থেকে শরীফ মুন্সী তার বাহিনী দিয়ে দখল করা শুরু করেন। নিষেধ করা মাত্রই সে এবং তার বাহিনী প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে ৯৯৯ কল করি। পুলিশ গেলে কাজ বন্ধ করে দুরে সরে যায়, আবার পুলিশ চলে আসলে কাজ শুরু করে দেয়। শুধু তাই না শরীফ মুন্সী সবাইকে ম্যানেজ করে ফেলেছে। অভিযোগ দেয়ার পর থেকে চরম আতঙ্কে দিন পার করছি।
শরীফ মুন্সী কিসের বিনিময়ে জমি দখল করছে জানতে চাইলে তিনি জানান, শুনেছি আমার পিতা তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল। টাকা দিতে না পারার কারনে জমি দখল করেছে। পাওনা টাকার জন্য জায়গা দখলে নিবে এটা কোন অরাজকতা। টাকা দিতে না পারলে সে আইনগত ব্যবস্থা নিবে। তাই বলে জায়গা কেন দখল করবে। কতদিন আগে টাকা নিয়েছিল এবং কত টাকা জানতে চাইলে তিনি জানান, বাবা বলছে ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। কিন্তু শরীফ মুন্সীসহ তার লোকজন বলছে ৩/৪ লাখ টাকা। বিগত ২০১৬/১৭ সালের দিকে টাকা নিয়েছে। আর এখন ক্ষমতার দাপটে জায়গা দখল করছে। সেতুর বাড়ি কামারগাঁ ইউপির মির্জাপুর গ্রামে। একই এলাকার ভবানীপুর গ্রামে যুবদল নেতা শরীফ মুন্সীর বাড়ি। তার পিতার নাম মৃত বুদু হাজি।
সেতুর পিতা দীলিপ কুমার মন্ডলের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিগত ২০১৬/১৭ সালের দিকে ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ধার নেয়া হয়েছিল। নানা সমস্যার কারনে টাকা ফেরত দিতে পারিনি। তাই বলে কোটি টাকা মূল্যের চাতালের জায়গা দখল করবে এটা কোন অরাজকতা। আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি অবহিত করেছি। থানা পুলিশ উভয়কে ডাকার কথা বলেছে
। আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বলে গায়ের জোরে জায়গা দখল করবে, এটা হতে পারেনা। শরীফ মুন্সীর মত এত বড় নেতা কিভাবে দখলবাজি করেন বুঝে আসেনা। আমার কাছ থেকে টাকা পাবে এটা সত্য ঘটনা। আমি তো তাকে জায়গা রেজিস্ট্রি করে দিই নি। তাহলে রেজিস্ট্রি না নিয়ে কেন দখল করবেন। এজন্যই কি ছাত্র জনতা আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়েছে। তাহলে আমার পরিবার কি এলাকায় থাকতে পারবে না, নাকি বাড়ি ছাড়া হতে হবে। দিন দুপুরে প্রকাশ্যে জায়গা দখল করেছে শরীফ মুন্সী।
অভিযোগে উল্লেখ বাদী ১। সেতু কুমার মন্ডল (১৯), পিতা- দিলীপ কুমার মন্ডল, ২। লিপী রানী (৩২), স্বামী- দিলীপ কুমার মন্ডল, সাং- মির্জাপুর, ডাকঘর- মালশিরা, থানা/উপজেলা তানোর, জেলা- রাজশাহী। এই মর্মে তানোর থানায় হাজির হইয়া লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করছি যে, বিবাদী মোঃ শরিফ মুন্সী (৪৫), পিতা- মৃত বুদু হাজী, সাং- ভবানীপুর, ডাকঘর- মালশিরা, থানা/উপজেলা- তানোর, জেলা- রাজশাহী। নিম্ন তফসীল বর্ণিত সম্পত্তি আমাদের ক্রয়কৃত সম্পত্তি। যাহা আমরা প্রায় ১৩ বছর আগে আমার পিতার থেকে ক্রয় করি। উক্ত সম্পত্তির উপর চাতাল নির্মান রয়েছে। বর্তমানে উক্ত চাতাল বিবাদী জোর-পূর্বক ভাবে দখল করেছে। বিবাদীকে বিষয়টি বলতে গেলে উক্ত বিবাদী আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করেন। উক্ত বিবাদী অত্যন্ত দুর্ধস্ব প্রকৃতির লোক। বিবাদীর সহিত দ্বন্দে লিপ্ত হইলে আইন ভঙ্গের সম্ভাবনা রয়েছে। বিধায় মর্মে জনাব সুষ্ঠ বিচারের আশায় আপনার সরনাপন্ন হইলাম। অতএব, মহোদয় উপরোক্ত বিষয়াদি বিবেচনা করতঃ ঘটনাস্থলটি সরজমিনে তদন্ত পূর্বক বিবাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে আপনার সদয় মর্জি হয়। তফসীল থানা/উপজেলা- তানোর, জেলা- রাজশাহী, মৌজা- মালশিরা, জে.এল.নং-১৪৪। খতিয়ান ৩১৫ দাগ ৬৬৩, ৬৬৪ রকম চাতাল পরিমান ২০.৩৩ শতাংশ। নিবেদক (সেতু কুমার মন্ডল) মোবা: ০১৭৭৩-৭৩৯৭৫৪।
ইউপির নেতাকর্মীরা জানান, এখনো বিএনপি ক্ষমতায় আসেনি। আগামীতে জাতীয় নির্বাচন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে এ আসনের মনোনায়ন প্রত্যাশী চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মেজর জেনারেল (অব) শরীফ উদ্দিন বারবার বলছেন আমরা ক্ষমতায় যেতে পারিনি। বর্তমান সরকারের স্টেক হোল্ডার মাত্র। জনগণ থেকে কোন ভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দখলবাজি করা যাবে না। কারন আগামীতে যে নির্বাচন হবে সেটা অত্যান্ত কঠিন নির্বাচন হবে। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না, যাতে মানুষ বিরক্ত হয়, বিভক্ত হয়। কিন্তু নেতাদের কথায় কোন কর্নপাত করেননি শরীফ মুন্সী। নেতাদের কথা বা নির্দেশ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের চাতাল দখল করেছেন। এটা নিয়ে সবাই মর্মাহত। আবার শরীফ মুন্সী নাকি জেলা যুবদলের সভাপতি হবেন। এসব দখল বাজ পদ লোভী নেতা ও বাহিনীর জন্য দলের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। সমালোচনা থেকে বাদ পড়ছেনা মেজর জেনারেলও। সুতরাং দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামীতে সাধারণ মানুষের কাছে ভোটের কথা বলা যাবে না। কারন শরীফ মুন্সী শুধু সংখ্যা লঘুর জায়গা দখল না গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ বানিজ্য, আলুর প্রজেক্ট বানিজ্য করেছেন। আবার সরকার পতনের পর পরই উপজেলা চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি বনে গিয়ে চাল সিন্ডিকেটে মেতে উঠেছে। এখানেই শেষ না জেলা বিএডিসি সার বীজ সমিতির সভাপতির পদও দখলে নিয়েছেন। এসব নিয়েও চলছে দ্বিধা দ্বন্দ্ব। হক ফাউন্ডেশনের এক প্রতিষ্ঠান রয়েছে মুন্সির। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে দেদারসে ঋন দিচ্ছে। যা বিধিবহির্ভূত। এক ব্যক্তির আর কত পদের প্রয়োজন হয় এমন প্রশ্ন নেতাকর্মী দের।
তবে শরীফ মুন্সী অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, জায়গা আমার এজন্য ঘিরে দিচ্ছি। হিন্দু সম্প্রদায়ের জায়গা আপনার কিভাবে হল এবং পুলিশ নিষেধ করছে কেন জানতে চাইলে তিনি জানান পরে কথা বলা হবে বলে এড়িয়ে যান।
কিন্তু শরীফ মুন্সীর কিছু ব্যক্তিগত লোকেরা জানান, দিলিপের সাথে টাকা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে জামেলা চলে আসছে। কয়েকবার বসেও সমাধান হয়নি। হয়তো সমাধানের জন্যই জায়গা দখল করতে পারে। তবে এভাবে দখল করা সঠিক কাজ না।
থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মিজানুর রহমান মিজান জানান, অভিযোগ হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।