রেলওয়ের রানিং স্টাফদের দাবি পূরণের আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে শ্রমিক নেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান রাত আড়াইটার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপদেষ্টা মহোদয় কথা দিয়েছেন, আগামীকালের (বুধবার) মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত আমাদের বিষয়টি সমাধান করবেন। আমরা জনদুর্ভোগ চাই না। দুঃখ প্রকাশ করছি। এখন থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলাম। রানিং স্টাফ ভাইদের বলব, তারা যেন কাজে ফিরে যান। এর আগে রাত সোয়া ২টার দিকে রানিং স্টাফদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করার কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনান আবদুল্লাহ। ফেসবুক স্ট্যাটাসে হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন, রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধর্মঘট প্রত্যাহার। শ্রমিক নেতাদের সাথে নিয়ে আমরা রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমস্যার সমাধান করতে রেল উপদেষ্টার সাথে দেখা করেছি। এ বিষয়ে প্রেস কনফারেন্স রাত ২টা ৩০ মিনিটে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এদের মধ্যে রয়েছেন লোকো মাস্টার, গার্ড, সহকারী চালক এবং ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই)। কর্মবিরতি থেকে সরে আসতে বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি রুমে রানিং স্টাফদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও। কিন্তু বৈঠকে কোনো সুরাহা না হওয়ায় রানিং স্টাফরা বেরিয়ে আসেন। রানিং স্টাফদের যেসব দাবি- রেলের রানিং স্টাফ রয়েছেন প্রায় দুই হাজার। তারা সাধারণত দীর্ঘসময় ট্রেনে দায়িত্বপালন করে থাকেন। দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিক (মূল বেতন) হিসাবে বাড়তি অর্থ পেতেন তারা। যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ।
মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ মনে করা হয়। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। এছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এই সুবিধা সীমিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই সময়ের পর নতুন করে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা পুরোনোদের চেয়ে আরও কম সুবিধা পাবেন বলেও সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২২ সালের পর নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা চলন্ত ট্রেনে দায়িত্বপালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না। এ ছাড়া অবসরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পাবেন।