Dhaka ০২:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জ সীমান্তে লাখলাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি: মদ ও গরুসহ ৪ জন গ্রেফতার

সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা সরকারের লাখলাখ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে গরু, মহিষ, কয়লা, পাথর, কসমেটিকস, ফুছকা, চিনি, জিরা, নাসির উদ্দিন বিড়ি, অস্ত্র, কম্বল ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করাসহ পাচাঁরকৃত মালামাল থেকে বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে লাখলাখ চাঁদা উত্তোলন করছে। এতকিছুর পরও সোর্স পরিচয়ধারী ও তাদের মদতদাতা প্রশাসনের অসৎ ব্যক্তিদের গ্রেফতারের জন্য নেওয়া হয়না কোন পদক্ষেপ। তবে বিজিবি পরিত্যক্ত অবস্থায় মদ জব্দ করাসহ ইউএনও অভিযান চালিয়ে পাচাঁরকৃত গরুর চালানসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারী) ভোর থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তে ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ৩/৪ গজ ভারতের ভিতর থেকে ৪/৫শ লোক দিয়ে কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী চোরাকারবারীরা। এরআগে ভোর রাত সাড়ে ৪টায় বডার বাজার ও দশঘর এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা প্রায় ১০লাখ টাকার ফুছকা ও মদ পাচাঁর করে সীমান্তের বিভিন্ন বাড়িঘরের ভিতর মজুত করে। এছাড়াও জাদুকাটা নদী দিয়ে দিনে ও রাতে সোর্স বাহিনী অবাধে কয়লা ও পাথরসহ ফুছকা, চিনি, কম্বল, জিরা, বিড়ি, কসমেটিকস ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করাসহ করছে চাঁদাবাজি। একই ভাবে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর, ১২০৩ পিলার, কড়ইগড়া, রাজাই, নয়াছড়া এলাকা লাখলাখ টাকার ফুছকা, জিরা, কম্বল, বিড়ি ও কয়লা পাচাঁর করার পর সোর্সরা বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকের নামে চাঁদা উত্তোলন করছে।

অন্যদিকে চারাগাঁও সীমান্তের জংড়লবাড়ি, কলাগাঁও মাইজহাটি, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে সংঘবদ্ধ সোর্স পরিচয়ধারীরা প্রতিদিন শতশত মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের চারপাশে অবস্থিত ১০/১৫টি ডিপুতে ও সোর্স পরিচয়ধারীদের বসতবাড়ি উঠানে মজুত করা ও পাথরঘাট নামকস্থানে নিয়ে ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করাসহ মাদকদ্রব্য ওপেন পাচাঁর করে চাঁদা উত্তোলন করছে। সম্প্রতি সীমান্ত গডফাদার তোতলা আজাদের পিএস সোর্স রফ মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর পর, অন্যান্য সোর্সদের চাঁদাবাজি ও চোরাচালান দ্বিগুন বেড়ে গেলেও তাদেরকে গ্রেফতারের কোন উদ্যোগ নেই।

একই ভাবে সোর্সরা চাঁদা নিয়ে পাশের বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট ও লাকমা এলাকার পাচাঁরকৃত শতশত মেঃটন কয়লা বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত পাটলাই নদীর তীরেসহ দুধের আউটা, নতুন বাজার, তেলিগাঁও, বানিয়াগাঁও, জামালপুর ও শ্রীপুর এলাকায় নিয়ে ওপেন মজুত করতেছে। আর টেকেরঘাট সীমান্তের হাইস্কুল ও পুলিশ ফাঁড়ির পিছন দিয়েসহ নীলাদ্রী লেকপাড়, বড়ছড়া, বুরুঙ্গাছড়া, রজনী লাইন এলাকা দিয়ে দিনরাত অবাধে কয়লা করে নীলাদ্রী লেকপাড় অবস্থিত চোরাকারবারীদের জায়গাসহ কয়লার ঘাট ও শুল্কস্টেশনে বিভিন্ন ডিপুতে মজুত করে ওপেন বিক্রি করেছে সোর্স ও চোরাকারবারীরা। এছাড়াও এই সীমান্তে দিয়ে পাচাঁর করা হয় চুনাপাথর, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র। অন্যদিকে সোর্স পরিচয়ধারীরা চাঁদা নিয়ে একই ভাবে জেলার দোয়ারাবাজার, বিশ^ম্ভরপুর ও মধ্যনগর সীমান্তের কচুয়া ছড়া, বাংগালভিটা ও মাটিরান এলাকা দিয়ে অবাধে গরু, চিনি, কসমেটিকস ও মাদকদ্রব্য দীর্ঘদিন যাবত পাচাঁর করেছে জানা গেছে।

এদিকে চোরাচালান ও চাঁদাবাজির খবর পেয়ে গত সোমবার (২৭ জানুয়ারী) রাতভর ট্্রাস্কফোর্সের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল রায় পুলিশ ও আনসার বাহিনী নিয়ে অভিযান চালিয়ে মধ্যনগর সীমান্তের বাংগালভিটা ও মাটিরাবন এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে পাচাঁরকৃত ৪০টি গরুসহ চোরাকারবারী মহর আলী (৪৮), আয়নাল হক (৪০), দুদু মিয়া (৩৪) ও আবুল কালাম (৫৮)কে গ্রেফতার করেছেন।

আর বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর সীমান্তে ৩লাখ ২৮হাজার ৫শ টাকা মূল্যের ২১৯ বোতল ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ পরিত্যক্ত অবস্থায় জব্দ করেছে বিজিবি। কিন্তু সীমান্ত চোরাচালান নিয়ন্ত্রণকারী সোর্স ও চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। সম্প্রতি এই সীমান্তে এক চোরাকারবারীকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় বিএসএফ। এছাড়াও কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে তাহিরপুরের বালিয়াঘাট সীমান্তে আরো এক চোরাকারবারীর মৃত্যু হওয়াসহ লাউড়গড় সীমান্তে অর্ধশতাধিক, চাঁনপুর সীমান্তে ১৭জন, টেকেরঘাট সীমান্তে ২২জন, বালিয়াঘাট সীমান্তে ৩৫জন, চারাগাঁও সীমান্তে ১৫জন ও বীরেন্দ্র নগর সীমান্তে ৬জনের এই পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

মধ্যনগর থানার ওসি সজীব রহমান সাংবাদিকদের জনান- সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে পাচাঁর হওয়া আটককৃত ২০লাখ টাকা মূল্যের ৪০টি গরুসহ গ্রেফতার হওয়া ৪জন চোরাকারবারী নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাত আরো ৭জনকে আসামী করে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ক্রেতাদের জন্য পরিবেশবান্ধব বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ নিয়ে এলো অনার বাংলাদেশ

সুনামগঞ্জ সীমান্তে লাখলাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি: মদ ও গরুসহ ৪ জন গ্রেফতার

Update Time : ০৯:০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা সরকারের লাখলাখ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে গরু, মহিষ, কয়লা, পাথর, কসমেটিকস, ফুছকা, চিনি, জিরা, নাসির উদ্দিন বিড়ি, অস্ত্র, কম্বল ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করাসহ পাচাঁরকৃত মালামাল থেকে বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে লাখলাখ চাঁদা উত্তোলন করছে। এতকিছুর পরও সোর্স পরিচয়ধারী ও তাদের মদতদাতা প্রশাসনের অসৎ ব্যক্তিদের গ্রেফতারের জন্য নেওয়া হয়না কোন পদক্ষেপ। তবে বিজিবি পরিত্যক্ত অবস্থায় মদ জব্দ করাসহ ইউএনও অভিযান চালিয়ে পাচাঁরকৃত গরুর চালানসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারী) ভোর থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তে ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ৩/৪ গজ ভারতের ভিতর থেকে ৪/৫শ লোক দিয়ে কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী চোরাকারবারীরা। এরআগে ভোর রাত সাড়ে ৪টায় বডার বাজার ও দশঘর এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা প্রায় ১০লাখ টাকার ফুছকা ও মদ পাচাঁর করে সীমান্তের বিভিন্ন বাড়িঘরের ভিতর মজুত করে। এছাড়াও জাদুকাটা নদী দিয়ে দিনে ও রাতে সোর্স বাহিনী অবাধে কয়লা ও পাথরসহ ফুছকা, চিনি, কম্বল, জিরা, বিড়ি, কসমেটিকস ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করাসহ করছে চাঁদাবাজি। একই ভাবে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর, ১২০৩ পিলার, কড়ইগড়া, রাজাই, নয়াছড়া এলাকা লাখলাখ টাকার ফুছকা, জিরা, কম্বল, বিড়ি ও কয়লা পাচাঁর করার পর সোর্সরা বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকের নামে চাঁদা উত্তোলন করছে।

অন্যদিকে চারাগাঁও সীমান্তের জংড়লবাড়ি, কলাগাঁও মাইজহাটি, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে সংঘবদ্ধ সোর্স পরিচয়ধারীরা প্রতিদিন শতশত মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের চারপাশে অবস্থিত ১০/১৫টি ডিপুতে ও সোর্স পরিচয়ধারীদের বসতবাড়ি উঠানে মজুত করা ও পাথরঘাট নামকস্থানে নিয়ে ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করাসহ মাদকদ্রব্য ওপেন পাচাঁর করে চাঁদা উত্তোলন করছে। সম্প্রতি সীমান্ত গডফাদার তোতলা আজাদের পিএস সোর্স রফ মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর পর, অন্যান্য সোর্সদের চাঁদাবাজি ও চোরাচালান দ্বিগুন বেড়ে গেলেও তাদেরকে গ্রেফতারের কোন উদ্যোগ নেই।

একই ভাবে সোর্সরা চাঁদা নিয়ে পাশের বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট ও লাকমা এলাকার পাচাঁরকৃত শতশত মেঃটন কয়লা বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত পাটলাই নদীর তীরেসহ দুধের আউটা, নতুন বাজার, তেলিগাঁও, বানিয়াগাঁও, জামালপুর ও শ্রীপুর এলাকায় নিয়ে ওপেন মজুত করতেছে। আর টেকেরঘাট সীমান্তের হাইস্কুল ও পুলিশ ফাঁড়ির পিছন দিয়েসহ নীলাদ্রী লেকপাড়, বড়ছড়া, বুরুঙ্গাছড়া, রজনী লাইন এলাকা দিয়ে দিনরাত অবাধে কয়লা করে নীলাদ্রী লেকপাড় অবস্থিত চোরাকারবারীদের জায়গাসহ কয়লার ঘাট ও শুল্কস্টেশনে বিভিন্ন ডিপুতে মজুত করে ওপেন বিক্রি করেছে সোর্স ও চোরাকারবারীরা। এছাড়াও এই সীমান্তে দিয়ে পাচাঁর করা হয় চুনাপাথর, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র। অন্যদিকে সোর্স পরিচয়ধারীরা চাঁদা নিয়ে একই ভাবে জেলার দোয়ারাবাজার, বিশ^ম্ভরপুর ও মধ্যনগর সীমান্তের কচুয়া ছড়া, বাংগালভিটা ও মাটিরান এলাকা দিয়ে অবাধে গরু, চিনি, কসমেটিকস ও মাদকদ্রব্য দীর্ঘদিন যাবত পাচাঁর করেছে জানা গেছে।

এদিকে চোরাচালান ও চাঁদাবাজির খবর পেয়ে গত সোমবার (২৭ জানুয়ারী) রাতভর ট্্রাস্কফোর্সের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল রায় পুলিশ ও আনসার বাহিনী নিয়ে অভিযান চালিয়ে মধ্যনগর সীমান্তের বাংগালভিটা ও মাটিরাবন এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে পাচাঁরকৃত ৪০টি গরুসহ চোরাকারবারী মহর আলী (৪৮), আয়নাল হক (৪০), দুদু মিয়া (৩৪) ও আবুল কালাম (৫৮)কে গ্রেফতার করেছেন।

আর বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর সীমান্তে ৩লাখ ২৮হাজার ৫শ টাকা মূল্যের ২১৯ বোতল ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ পরিত্যক্ত অবস্থায় জব্দ করেছে বিজিবি। কিন্তু সীমান্ত চোরাচালান নিয়ন্ত্রণকারী সোর্স ও চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। সম্প্রতি এই সীমান্তে এক চোরাকারবারীকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় বিএসএফ। এছাড়াও কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে তাহিরপুরের বালিয়াঘাট সীমান্তে আরো এক চোরাকারবারীর মৃত্যু হওয়াসহ লাউড়গড় সীমান্তে অর্ধশতাধিক, চাঁনপুর সীমান্তে ১৭জন, টেকেরঘাট সীমান্তে ২২জন, বালিয়াঘাট সীমান্তে ৩৫জন, চারাগাঁও সীমান্তে ১৫জন ও বীরেন্দ্র নগর সীমান্তে ৬জনের এই পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

মধ্যনগর থানার ওসি সজীব রহমান সাংবাদিকদের জনান- সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে পাচাঁর হওয়া আটককৃত ২০লাখ টাকা মূল্যের ৪০টি গরুসহ গ্রেফতার হওয়া ৪জন চোরাকারবারী নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাত আরো ৭জনকে আসামী করে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।