বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী-১(তানোর -গোদাগাড়ী) আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দীনের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে বিএনপির মহাসচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী-১ আসনের গোদাগাড়ী ও তানোর এলাকায় নাচ ও গান-বাজনার আয়োজন করায় শরীফ উদ্দীনের বিরুদ্ধে এ লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া অভিযোগটির অনুলিপির কপি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ গণমাধ্যম কর্মীদের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার সুস্থতা কামনায় সারা দেশে যখন দোয়া মাহফিল হচ্ছে, ঠিক সেই সময় রাজশাহী-১ আসনের গোদাগাড়ী ও তানোর এলাকায় নাচ ও গান-বাজনার আয়োজন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত ১৪ জানুয়ারি গোদাগাড়ীর প্রেমতলি ডিগ্রি কলেজ ও গত ১৮ জানুয়ারি তানোরের গোল্লাপাড়া ফুটবল মাঠে ওই সব নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন শরীফ উদ্দিন; কিন্তু এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি।
এলাকায় শরীফ উদ্দিনের কোনো জনপ্রিয়তা নেই দাবি করে লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে- গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। গত ৫ আগস্টের আগে তিনি এলাকায় আসেননি। শরীফ উদ্দিন দলীয় কোনো কর্মসূচিতে নেতাকর্মী জমায়েত করতে পারছেন না। তাই তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ঘরানার নেতাকর্মী দিয়ে নাচ গান-বাজনার অনুষ্ঠান করে লোকজন জমায়েত করছেন। এ নিয়ে এলাকার জনগণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে; যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। শুধু তাই না মঞ্চে তার স্ত্রী গান গেয়েছেন। যা সাধারণ মানুষ ভালো ভাবে নিতে পারেননি। এসব নিয়ে সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে তৃনমুলের দল পাগল কর্মীরা বিব্রত। এক নেতা জানান, মেজর জেনারেল (অব) শরীফ উদ্দিনের ব্যক্তিগত সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। ১৯৯১ সাল থেকে বিগত ২০১৮ সাল পর্যন্ত তানোর গোদাগাড়ীর আপামর জনতার প্রিয় নেতা ছিলেন প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হক। তিনি কখনো পরিবারের কাউকে মঞ্চে তুলতেন না। তার এত জনপ্রিয়তা ছিল কল্পনা তীত। যতই দ্বন্দ্ব ফাসাদ থাক তিনি ডাকলেই সবাই এক কাতারে আসত। অথচ তার ছোট ভাই শরীফ উদ্দিন প্রয়াত ব্যারিস্টারের দোহায়ে রাজনীতি করছে। কিন্তু তার মত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা কম। এসব এলাকার জনসাধারণ নাচ গান পছন্দ করে না। আসলে মেজরকে ভুলভাল বুঝিয়ে কিছু সুবিধা ভোগী নেতারা এসব অনুষ্ঠান করছেন। যা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক ভাবে প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে তানোরে যাকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতি করছেন সেটাও ভুল করছেন। কোনভাবেই এক করতে পারছেনা। এসময় এক করতে না পারলে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন এই নেতা। যখন ম্যাডামের সুস্থতা কামনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি বারবার বলছে দোয়া করেন। আর তিনি কনসার্ট করতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন।
তানোর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শামসুল আলম বলেন, বিএনপির এমন অবস্থা তৈরি হয়নি যে নাচ-গানের আয়োজন করে লোকজন জমায়েত করতে হবে। তাও আবার দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড নিয়ে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে; যা খুবই দু:খজনক। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের ভেবে দেখা দরকার। এ কারণেই শরীফ উদ্দিনের বিষয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম সাওয়াল বলেন, দলের চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনা করে সারা দেশে যখন দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে তখন আমাদের এলাকায় দলীয় অনুষ্ঠানে গান-বাজনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীসহ এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার নির্ধারিত মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত বলেন, অভিযোগের একটি কপি আমিও পেয়েছি। এলাকার দলীয় নেতাকর্মীরা হাইকমান্ডকে পাঠিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেবেন।
সুত্র যুগান্তর