বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, স্বাধীনতা পেলাম ৫৪ বছর। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় একটি জাতি বিশ্বের দরবারে মার্যাদাবান জাতি হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য যথেষ্ট সময় ছিল। কেউ যদি বলে স্বাধীনতার পরে এ জাতির জন্য ভালো কিছুই হয়নি। আমি একমত হবো না। অনেক কিছুই ভালো হয়েছে। কিন্তু যদি দুর্নীতি ও দুঃশাসন না থাকতো, তাহলে অকল্পনীয়ভাবে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতো। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে আমরা স্বাধীনতার সেই ফসলটুকু ভোগ করতে পারলাম না। সম্প্রতি দুঃশাসন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জয়পুরহাট সার্কিট হাউজ মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এই মাঠে জয়পুরহাট জেলা জামায়তে ইসলামী কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করেন। এতে জেলা জামায়তে ইসলামীর আমীর ডা: ফজলুর রহমান সাঈদ সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, বিগত জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশকে তারা নরকে পরিণত করেছিল। ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত তারা মানুষ খুন করেছেন। তারা সুস্পষ্ট গণহত্যাকারী। গণহত্যার বিচার আমরা চাই। প্রত্যেকটি গণহত্যার বিচার হতে হবে। আমরা সরকারে বলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গণহত্যাকারীদের বিচার করুন। এতে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। আহতরা একটু শান্তি খুঁজে পাবে। আঠারো কোটি মজলুম মানুষ খুশি হবেন।
তিনি বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে নয় দেশ পরিচালিত হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে, যৌক্তিক সংস্কার শেষে এ দেশে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে, নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গনতান্ত্রিক সরকার দেশ পরিচালিত করবে।
তিনি আরও বলেন, একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখতে যারা জীবন দিয়েছে। এই দেশে আবার দুঃশাসন ফিরে না আসুক, তা তারা দেখতে চায়। তাই যদি করতে হয় তাহলে অর্থবহ নির্বাচনের দিকে যেতে হবে জাতিকে। আর সেই নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার সাধন করতে হবে। এজন্য জামায়াতে ইসলামী ৫ তারিখেই বলে দিয়েছে। এই সরকারকে আমরা যৌতিক সময় দিতে চাই। প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের জন্য। তাড়াহুড়ো করে আমরা নিজেরাও ক্ষমতায় যেতে চাই না। কেউ তাড়াহুড়ো করে ক্ষমতায় যাক, সেটিও আমরা চাই না।
তিনি বলেন, বিগত সরকার দেশের অর্থনীতিসহ সব অচল করে দিয়েছে। মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদিসহ কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর ১১জন সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে ফ্যাসীবাদী সরকার হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন এ দেশে মোট জনগনের অর্ধেক নারী তাদের সন্মান দিতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রত্যেকটি গনহত্যার বিচার করতে হবে।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি গোলাম কিবরিয়া মন্ডল এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বগুড়া অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক আব্দুর রহিম, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বগুড়া জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক, বগুড়া শহর আমীর আবিদুর রহমান সোহেল, সিরাজগঞ্জ জেলা আমীর অধ্যক্ষ শাহিনুর আলম, দিনাজপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ড এনামুল হক, জয়পুরহাট জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি হাসিবুল আলম লিটন, এ্যাড. মামুনুর রশীদ, রাশেদুল আলম সবুজ, জেলা ওলামা বিভাগ এর সভাপতি মাহমুদুল হাসান, আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন এর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, শহর আমীর আনোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা আমীর ইমরান হোসেন, আইডিইবির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুল বাতেন, জেলা শিবিরের সভাপতি জুয়েল হোসেন, কালাই উপজেলা আমীর মনছুর রহমান, পাঁচবিবি উপজেলা আমীর ডাঃ সুজাউল করিম, ক্ষেতলাল উপজেলা আমীর আমিনুল ইসলাম, আক্কেলপুর উপজেলা আমীর শফিউল হাসান দিপু, সাবেক শিবির সভাপতি আব্দুল খালেক, শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন সাধারন সম্পাদক এ্যাডঃ আসলাম হোসেন, ৪নং ওয়ার্ড সভাপতি শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন সভাপতি তাপস কুমার মন্ডল প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা মোঃ রফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা ছেচরা চোরের মত দেশ ছেড়ে পালিয়েছে এবং সাথে ৩শত এমপি, মন্ত্রীই পালিয়ে গেছে। তারা মানুষের ভোটার অধিকার নষ্ট করেছে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে তাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবে, তারা যেখানেই থাক সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা সরকারে ঘাপটি মেরে আছে তাদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। ভোটার তালিকা প্রসঙ্গে বলেন ২ কোটি ভোটার তালিকা সংশোধন করুন, সঠিক ভাবে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করনের জন্য আহব্বান জানান তিনি।
২০০৮ সালের পর জামায়াতে ইসলামীর এটাই বড় সন্মেলন বলে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পরে শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাত করেন। আমীর।