সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা সরকারের লাখলাখ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে পাচাঁর করছে মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন প্রকার মালামাল। সেই সাথে পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামাল থেকে বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে লাখলাখ চাঁদা উত্তোলন করছে। তারপরও সোর্স পরিচয়ধারী ও তাদের মদতদাতা প্রশাসনের অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে র্যাব অভিযান চালিয়ে মদের চালানসহ ২জনকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে।
গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা হলো- জেলার ছাতক উপজেলার দিগলী কালীদাস পাড়ার এলাকার নোমান মিয়া (৩৮) ও তার সহযোগী একই এলাকার রিমন মিয়া (৩৫)। গতকাল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় পুলিশ তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। র্যাব ৯ এর মিডিয়া কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান- ১১ বোতল বিদেশী মদসহ ওই ২ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে ছাতক থানায় হস্থান্তর করা হয়।
এদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো গতকাল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ১১টা থেকে আজ শনিবার (১লা ফেব্রুয়ারী) ভোর পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তের নীলাদ্রী লেকপাড়, পুলিশ ফাঁড়ি ও হাইস্কুলের পিছন দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা প্রায় ২শ মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নীলাদ্রী লেকপাড় ও কয়লা ঘাট নামকস্থানে চোরাকারবারীদের জায়গায় ওপেন মজুত করে। এরআগে গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারী) রাত ১ট থেকে গতকাল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারী) ভোর পর্যন্ত প্রায় ১শ মেঃটন কয়লা পাচাঁরের খবর পাওয়া গেছে। একই ভাবে এই সীমান্তের রজনী লাইন ও বুরুঙ্গাছড়া এলাকা দিয়ে অবাধে কয়লা ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করছে সোর্স বাহিনী।
আরো জানা গেছে- আজ শনিবার (১লা ফেব্রুয়ারী) ভোর থেকে প্রতিদিনের মতো লাউড়গড় সীমান্তে ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ৩/৪ গজ ভারতের ভিতর থেকে ৪/৫শ লোক দিয়ে ওপেন কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী চোরাকারবারীরা। তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন যাবত এই বাণিজ্য ওপেন ভাবে করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একই ভাবে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর, ১২০৩ পিলার, কড়ইগড়া, রাজাই, নয়াছড়া এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা চাঁদা নিয়ে প্রতিদিন লাখলাখ টাকার ফুছকা, জিরা, কম্বল, বিড়ি ও কয়লা পাচাঁর করছে। এছাড়াও পাশের বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে এপর্যন্ত ৩৫জনের মৃত্যু হলে বন্ধ হয়নি কয়লা ও মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর।
অন্যদিকে চারাগাঁও সীমান্তের জংড়লবাড়ি, কলাগাঁও মাইজহাটি, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে সংঘবদ্ধ সোর্স পরিচয়ধারীরা প্রতিদিন শতশত মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের চারপাশে অবস্থিত ১০/১৫টি ডিপুতে ও সোর্স পরিচয়ধারীদের বসতবাড়ি উঠানে মজুত করাসহ পাথরঘাট নামকস্থানে নিয়ে ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করছে ও মাদকদ্রব্য ওপেন পাচাঁর করে চাঁদা উত্তোলন করছে। পাশের বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা ও সুন্দরবনসহ কচুয়াছড়া এলাকা দিয়ে পৃথক ভাবে পাচাঁর করা হচ্ছে মদ, ফুছকা, চিনি ও সুপারীসহ বিভিন্ন মালামাল। সম্প্রতি সীমান্ত গডফাদার তোতলা আজাদের পিএস সোর্স রফ মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর পর, অন্যান্য সোর্সদের চোরাচালান ও চাঁদাবাজি দ্বিগুন বেড়ে গেলেও তাদেরকে গ্রেফতারের কোন উদ্যোগ নেই। অথচ সুনামগঞ্জে বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এহসান ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান কর্মরত থাকাকালীন সময় পাচাঁরকৃত শতশত মেঃটন অবৈধ কয়লা ও পাথর বোঝাই ১০-১২টি ট্রাক ও ১৫-২০টি স্ট্রিলবডি ইঞ্জিনের নৌকা আটক করাসহ প্রায় ২শতাধিক ঠেলাগাড়ি ও বারকি নৌকা জব্দ করেছেন।
গ্রেফতার করেছেন অনেক সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীদের। কিন্তু তারা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার পর থেকে এই উপজেলা সীমান্ত দিয়ে গরু, ঘোড়া, বিড়ি, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও মাছসহ ফুছকা, চিনি, কসমেটিকস, বিড়িসহ বিভিন্ন পন্য সামগ্রী পাচাঁর বেড়ে যায়। একই ভাবে জেলার দোয়ারাবাজার, বিশ^ম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদর ও মধ্যনগর সীমান্তের বাংগালভিটা ও মাটিরান এলাকা দিয়ে গরু, চিনি, কসমেটিকস ও মাদক বাণিজ্য দীর্ঘদিন যাবত জমজমাট ভাবে চলছে বলে জানা গেছে। তাই সোর্স পরিচয়ধারী ও তাদের মদতদাতাদের গ্রেফতারের জন্য র্যাব ও সেনাবাহিনী সহযোগীতাসহ বিজিবির উপরস্থ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ জরুরী প্রয়োজন।