জীবিকার প্রয়োজনে ভোলার মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে জান মো. হাসান। নদীতে জলদস্যুর গুলিতে মারা যান তিনি। তার বাড়ী ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নে। শনিবার সন্ধ্যায় ভোলার মেঘনায় জেলেদের ট্রলারে হামলা চালায় জলদস্যু। এক পর্যায়ে জলদস্যুদের গুলিতে নৌকার মধ্যেই মারা যান হাসান। এই ঘটনায় আরো ৩ জন গুরতর আহত হন। আহতদের মধ্যে ২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্ত্রী সন্তানদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ইলিশার ওই এলাকার আশপাশ। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী মুক্তা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি বলে জানান পুলিশ। তবে নদীতে জলদস্যুসহ বিভিন্ন চক্রকে দমন করতে যৌথভাবে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গুপ্তমুন্সী গ্রামের প্রতিবন্ধী মো. হাসান। শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়াতে অন্য কোন কাজ করতে না পারায় জেলেদের সাথে নদীতে মাছ ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। অন্য দিনের মত শনিবারও মেঘান নদীতে মাছ শিকারে যান তিনি। কে জানতো নদীতে এই যাওয়াই তার শেষ যাওয়া। মাছ শিকার করতে গিয়ে জলদত্যুর গুলিতে নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় মা হারিয়েছে সন্তানকে ও স্ত্রী হারিয়েছেন তার স্বামীকে। আর হাসানের সন্তানরা হারিয়েছে তার বাবাকে। হাসানকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে হাসানের পরিবার। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। শোকে পাগলপ্রায় পরিবারের স্বজনরা। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না তাদের কান্না। তাদের আহাজারিতে পাড়া-প্রতিবেশিরাও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কি বলে সান্তনা দিবেন সেই ভাষাও খুজে পাচ্ছেন না তারা। ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্তমুন্সী গ্রামে দেখা যায় এ দৃশ্য।
হাসানের মা মমতাজ বেগম বলেন, হাসান আমার নিরহ একটা পোলা আসিল। ও ছিল শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, নিজে চলতেই ওর কষ্ট হইতো। তেমন কোন কাজ করতে পারতোনা। পরিবারের কারণে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। ওর ২টা সন্তান আছে এহন ওগোরে কে দেখবো। ওরা তো এতিম হয়ে গেলো। শুক্রবার বাড়ি থেকে দুগা (অল্প) ভাত খেয়ে নদীতে মাছ ধরতে গেছে। তারপরে আর বাড়িতে আসে নাই, তবে আইলো লাশ হয়ে। এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন মা মমতাজ বেগম।
হাসানের স্ত্রী মুক্তা বলেন, আমার স্বামীকে মেরে আমাকে যারা বিধবা করলো, আমার সন্তানদেরকে এতিম করলো সরকারের কাছে আমি তাদের বিচার চাই। আমার স্বামী যা আয় করতো তা দিয়েই কোন মতে আমাদের সংসার চলতো। এখন আমার সংসার কিভাবে চলবো ? আমার পোলাইনের কিভাবে পড়া-লেহার খরচ চালামু। আমার বাবাও নেই, এহন আর আমার কেউ নাই সংসারে। ভবিষ্যত এখন কে দেখবো। এখন আমি সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাব, কীভাবে স্বামীর ধার-দেনা পরিশোধ করব। বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে কীভাবে সংসার চালাব ?
হাসানের একমাত্র কন্যা সাদিয়া বলেন, আমরা দুই ভাই-বোন। বাবা মারা গেছে এখন আমাদেরকে দেখার মতো কেউ রইল না। আমরা খাবো কিভাবে, চলবো কিভাবে, কে আমাগো পড়াশোনার খরচ চালাইবো ?
প্রিয়জন হারানোর ব্যথায় শোকে স্তব্দ পুরো পরিবার। মাছ ধরেই জীবিকা চলছিলো হাসানের পরিবারের। এখন ছোট ২টি ছেলে-মেয়ে নিয়ে এই পরিবারে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় সরকারি সহযোগিতার দাবি নিহতের পরিবারের স্বজনদের। পাশাপাশি এই হত্যার বিচারের দাবি জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রিপন কুমার সরকার জানান, নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নদীতে জলদস্যুসহ বিভিন্ন ডাকাত দমন করতে যৌথ-বাহিনী কাজ করছে।