Dhaka ০১:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুষ্ঠ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার পর্যটন শহর

অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে  সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার। যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, সড়কের পাশের ময়লা এবং সমুদ্র সৈকতের ঝাউবনে জমে থাকা বর্জ্য শুধু পরিবেশকে দূষিত করছে না, পর্যটকদের জন্যও অসহনীয় হয়ে উঠছে। পর্যটন সেবীদের দাবি, বর্জ্য অপসারণে অবহেলা এবং নির্ধারিত স্থানের অভাব শহরের পরিবেশ এবং পর্যটন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।সাগরের স্বচ্ছ নীল জলরাশি, একের পর এক ঢেউ গর্জন; যা আছড়ে পড়ছে সাগরতীরে। কিন্তু এই সাগরতীরের বালুচরে ফেলা হয়েছে ময়লা। পড়ে রয়েছে পানির বোতল, চায়ের কাপ, চিপসের প্যাকেট ও পলিথিন। বালুচরে দুই কন্যা নিয়ে হাঁটতে গিয়ে বিব্রত ভ্রমণে আসা মুমিনুল ইসলাম।তিনি বলেন, দুই কন্যা নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছি।

সকালে সৈকতের বালিয়াড়ি পাড় ধরে যখন হাটছি তখন দেখছি প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, চায়ের কাপসহ নানা বর্জ্য পড়ে রয়েছে। যা খুবই বিব্রতকর লেগেছে। একদিকে সচেতনতার কথা বলে বালিয়াড়িতে প্লাস্টিকের রোবট দানব করা হয়েছে, কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না এমনটাই মনে হচ্ছে।  পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রতিদিনই ময়লা কুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলেন লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর। তিনিও বলছেন, বালুচরে প্রতিদিনই ফেলা হয় প্রচুর ময়লা-আবর্জনা। মূলত পর্যটকরাই বালিয়াড়িতে এসে এসব বর্জ্য ফেলছে প্রতিদিনই। তাদের বললেও কাজ হয় না।এই তো গেলো বালুচরের অবস্থা। কিন্তু সরেজমিনে তার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা দেখা যায় সুগন্ধা পয়েন্টের। যেখানে বালিয়াড়ির সাগর লতায় ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিকসহ নানা ময়লা-আবর্জনা, রাখা হচ্ছে টিউব। প্লাস্টিকের ময়লা-আবর্জনা খাচ্ছে গবাদি পশু আর বালিয়াড়িতে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিকের বর্জ্যে। এতে ধ্বংস হচ্ছে সাগরলতাও।

সমুদ্রসৈকত এলাকায় যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, সড়কের পাশের ময়লা এবং সমুদ্র সৈকতের ঝাউবনে জমে থাকা বর্জ্য শুধু পরিবেশকে দূষিত করছে না, পর্যটকদের জন্যও অসহনীয় হয়ে উঠছে।ঢাকার মতিঝিল এলাকা থেকে আসা পর্যটক হুমায়ুন কবির বলেন, যেখানেই হাটছি সেখানেই দেখতে পাচ্ছি শুধু ময়লা-আবর্জনা। যেমন রাস্তার পাশে, বালিয়াড়ির সাগরলতায়, ঝাউবাগান ও সাগরতীরে। সবখানে ময়লা-আবর্জনা। এসব দেখে একজন পর্যটক হিসেবে বিব্রতবোধ করছি।ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক রিজিয়া রহমান বলেন, হতাশ হয়ে গেলাম। কোন জায়গা আসলাম এত টাকা খরচ করে।আরেক পর্যটক রবিন বলেন, ঝাউবাগানের ভেতরে ময়লা যে স্তুপ। মনে হয়, ঝাউবাগানের ভেতরে পিকনিক করে খাবারের প্যাকেটগুলো ফেলে রেখেছে। আসলে তো এসব ঠিক না।

নারী পর্যটক সোনিয়া আক্তার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এটা সারাদিন পরিষ্কার করতে থাকবে না। আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে এবং এখানে যারা ব্যবসা করছেন তাদেরও এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করা উচিত।পর্যটন সেবীদের দাবি পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অপরিকল্পিত, রয়েছে সমন্বয়হীনতাও।তারকামানের হোটেল কক্স-টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, এটা হচ্ছে পর্যটকদের রাজধানী কক্সবাজার। এটা বরাবরের মতোই আমরা আশা করি, ক্লিন এবং গ্রীন সিটি হবে। কিন্তু এখানে সেটা দেখা যাচ্ছে না। যার কারণে কক্সবাজারের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এটা সমন্বয়হীনতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।কক্সবাজার রেস্তোরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন সভায় এসব বিষয় উত্থাপন করা হয়।

যেন সৈকত এলাকা এবং হোটেল-মোটেল জোনের সড়ক থেকে দ্রুত ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয় এবং ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বলার পরও কোন কার্যকর কোন কাজ হচ্ছে না।তবে প্রশাসন জানিয়েছে, স্থায়ী সমাধানের জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান রয়েছে। তবে স্থায়ী কোন সমাধানের জন্য পরিকল্পনার বিষয় রয়েছে।পর্যটন নগরী কক্সবাজারে রয়েছে ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস। আর রেস্তোরাও রয়েছে চার’শোরও বেশি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

সুষ্ঠ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার পর্যটন শহর

Update Time : ০৭:৪৫:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে  সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার। যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, সড়কের পাশের ময়লা এবং সমুদ্র সৈকতের ঝাউবনে জমে থাকা বর্জ্য শুধু পরিবেশকে দূষিত করছে না, পর্যটকদের জন্যও অসহনীয় হয়ে উঠছে। পর্যটন সেবীদের দাবি, বর্জ্য অপসারণে অবহেলা এবং নির্ধারিত স্থানের অভাব শহরের পরিবেশ এবং পর্যটন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।সাগরের স্বচ্ছ নীল জলরাশি, একের পর এক ঢেউ গর্জন; যা আছড়ে পড়ছে সাগরতীরে। কিন্তু এই সাগরতীরের বালুচরে ফেলা হয়েছে ময়লা। পড়ে রয়েছে পানির বোতল, চায়ের কাপ, চিপসের প্যাকেট ও পলিথিন। বালুচরে দুই কন্যা নিয়ে হাঁটতে গিয়ে বিব্রত ভ্রমণে আসা মুমিনুল ইসলাম।তিনি বলেন, দুই কন্যা নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছি।

সকালে সৈকতের বালিয়াড়ি পাড় ধরে যখন হাটছি তখন দেখছি প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, চায়ের কাপসহ নানা বর্জ্য পড়ে রয়েছে। যা খুবই বিব্রতকর লেগেছে। একদিকে সচেতনতার কথা বলে বালিয়াড়িতে প্লাস্টিকের রোবট দানব করা হয়েছে, কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না এমনটাই মনে হচ্ছে।  পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রতিদিনই ময়লা কুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলেন লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর। তিনিও বলছেন, বালুচরে প্রতিদিনই ফেলা হয় প্রচুর ময়লা-আবর্জনা। মূলত পর্যটকরাই বালিয়াড়িতে এসে এসব বর্জ্য ফেলছে প্রতিদিনই। তাদের বললেও কাজ হয় না।এই তো গেলো বালুচরের অবস্থা। কিন্তু সরেজমিনে তার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা দেখা যায় সুগন্ধা পয়েন্টের। যেখানে বালিয়াড়ির সাগর লতায় ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিকসহ নানা ময়লা-আবর্জনা, রাখা হচ্ছে টিউব। প্লাস্টিকের ময়লা-আবর্জনা খাচ্ছে গবাদি পশু আর বালিয়াড়িতে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিকের বর্জ্যে। এতে ধ্বংস হচ্ছে সাগরলতাও।

সমুদ্রসৈকত এলাকায় যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, সড়কের পাশের ময়লা এবং সমুদ্র সৈকতের ঝাউবনে জমে থাকা বর্জ্য শুধু পরিবেশকে দূষিত করছে না, পর্যটকদের জন্যও অসহনীয় হয়ে উঠছে।ঢাকার মতিঝিল এলাকা থেকে আসা পর্যটক হুমায়ুন কবির বলেন, যেখানেই হাটছি সেখানেই দেখতে পাচ্ছি শুধু ময়লা-আবর্জনা। যেমন রাস্তার পাশে, বালিয়াড়ির সাগরলতায়, ঝাউবাগান ও সাগরতীরে। সবখানে ময়লা-আবর্জনা। এসব দেখে একজন পর্যটক হিসেবে বিব্রতবোধ করছি।ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক রিজিয়া রহমান বলেন, হতাশ হয়ে গেলাম। কোন জায়গা আসলাম এত টাকা খরচ করে।আরেক পর্যটক রবিন বলেন, ঝাউবাগানের ভেতরে ময়লা যে স্তুপ। মনে হয়, ঝাউবাগানের ভেতরে পিকনিক করে খাবারের প্যাকেটগুলো ফেলে রেখেছে। আসলে তো এসব ঠিক না।

নারী পর্যটক সোনিয়া আক্তার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এটা সারাদিন পরিষ্কার করতে থাকবে না। আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে এবং এখানে যারা ব্যবসা করছেন তাদেরও এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করা উচিত।পর্যটন সেবীদের দাবি পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অপরিকল্পিত, রয়েছে সমন্বয়হীনতাও।তারকামানের হোটেল কক্স-টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, এটা হচ্ছে পর্যটকদের রাজধানী কক্সবাজার। এটা বরাবরের মতোই আমরা আশা করি, ক্লিন এবং গ্রীন সিটি হবে। কিন্তু এখানে সেটা দেখা যাচ্ছে না। যার কারণে কক্সবাজারের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এটা সমন্বয়হীনতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।কক্সবাজার রেস্তোরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন সভায় এসব বিষয় উত্থাপন করা হয়।

যেন সৈকত এলাকা এবং হোটেল-মোটেল জোনের সড়ক থেকে দ্রুত ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয় এবং ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বলার পরও কোন কার্যকর কোন কাজ হচ্ছে না।তবে প্রশাসন জানিয়েছে, স্থায়ী সমাধানের জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান রয়েছে। তবে স্থায়ী কোন সমাধানের জন্য পরিকল্পনার বিষয় রয়েছে।পর্যটন নগরী কক্সবাজারে রয়েছে ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস। আর রেস্তোরাও রয়েছে চার’শোরও বেশি।