শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুতির পর দেশব্যাপী মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নের পাশাপাশি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মনোনীত পরিচালনা কমিটি সঠিকভাবে কাজ না করায় সারা দেশে স্কুল পরিচালনার জন্য নতুন করে কমিটি গঠন করতে উদ্যোগ গ্রহন করেছে। গত ২৬ নভেম্বর সারা দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি গঠন প্রবিধিমালা অনুসারে এডহক কমিটি গঠনকল্পে পরিপত্র জারি করে। ওই বিধি অনুযায়ী, কক্সবাজার জেলার ১৪৯ টি এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯৪টি নন- এমপিও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৬৫টি দাখিল মাদ্রাসায় শিগগিরই পেতে যাচ্ছে নতুন পরিচালনা কমিটি।
ইতোমধ্যে উপজেলা ভিত্তিক একটি তালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে যাছাই বাছাই চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন। তিনি বলছেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ তালিকা প্রস্তুত করে নিজেরা সব তথ্য উপাত্ত নিয়ে পাঠিয়েছেন এবং আরো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাকি রয়েছে। সেগুলো আসার সাথে সাথে কমিটির অনুমোদন সম্পন্ন করে পরবর্তী কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ২৬ নভেম্বর পরিপত্র জারি করা হয়েছে সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা প্রবিধি ২০২৪ অনুসারে ৪ সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করার জন্য।
ওই এডহক কমিটিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, সমাজসেবক, স্থানীয় সংসদের সাথে আলোচনা করে তিনজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করবেন। পাশাপাশি শিক্ষক প্রতিনিধি হবেন একই প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক যিনি উপজেলা পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা জেলা শহরে হলে জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত। এছাড়াও অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তিনিও সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা জেলা প্রশাসক কর্তৃক যাচাই-বাছাই করে অন্তর্ভুক্ত করবেন। চার সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটির সদস্য সচিব হবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এডহক কমিটির সভাপতিকে অবশ্যই স্নাতক পাস হতে হবে। বিধিমালাটি গত ২৬ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সারা দেশের জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ ঘরে ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলেও কক্সবাজারের ১৫৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত কমিটি গঠন না হওয়ার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা দিয়েছে চরম নৈরাজ্য, শিক্ষকদের অন্ত:কোন্দল, শিখন শিখনের মারাত্মক ঘাটতি।এদিকে এডহক কমিটি গঠন নিয়ে নানা সমস্যার কথা জানালেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হোসাইনুল ইসলাম মাতবর।
তিনি জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রধান শিক্ষকগণ এডহক কমিটির সভাপতি বাছাই করে ৩ জনের নাম প্রস্তাবনার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবরের প্রেরণ করলেও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি ফাইলগুলো যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় যথাসময়ে কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না।তিনি জানান, পেকুয়া এবং কুতুবদিয়া থেকে অন্তত ১৫ জন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটির কার্যালয় এসে ফাইল আটকের কথা জানান। যথা সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করাই হতাশ অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান।
তিনি কয়েকজন প্রধান শিক্ষকসহ জেলা প্রশাসকের কাছে সরাসরি উপস্থিত হয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান।এদিকে জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমূহে নিয়মিত পরিচালনা কমিটি না থাকার কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রমে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অনেকে। অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের দলাদলির কারণে একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এমনিতেই বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা বই না পাওয়ায় ভালোভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। নিয়মিত পরিচালনা কমিটির অভাবে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ হযবরল অবস্থায় রয়েছে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে এডহক কমিটি গঠন করা না হলে শিক্ষার সুশৃংখল পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার চরম উদ্দেশ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর এর আগে গঠিত হওয়া সকল পরিচালনা কমিটি বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এরপর ছয় মাসের মধ্যে এডহক কমিটি গঠন করে স্কুল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা জারি করে মাউশি।