সৈয়দপুর রেলওয়ের জমিতে নকসাবহির্ভুত ঘরবাড়ি,বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মানের হিড়িক পড়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পর থেকে মানা হচ্ছে না উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়মনীতিমালা। দখলদাররা রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও পৌরকর্তৃপক্ষের সহায়তায় ইচ্ছাধীন ভবন নির্মাণ করে চলেছেন বলে অভিযোগ অনেকের।
দেখা গেছে, রেলওয়ের জমি দখলদাররা শহরের রেললাইন সংলগ্ন, শহীদ ডাক্তার জিকরুল হক সড়কের দু-পাশ, ১ নং রেল ঘুমটির ফল আড়ত এলাকা সহ আবাসিক এলাকায় বেপরোয়া ভাবে গড়ে তুলছেন একের পর এক বহুতল ভবন। রেলওয়ে গনপুর্ত বিভাগের অসাধু কর্মচারী ও পৌর কর্তৃপক্ষ নকসা ছাড়া ভবন নির্মাণের বিষয়টি অবগত থাকলেও তারা নিরব ভূমিকা পালন করছেন। শহরের ১ নং রেল ঘুমটি এলাকায় রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মানকারী, ফল ব্যবসায়ি শাহ আলম বলেন, রেলওয়ের গনপুর্ত বিভাগের কর্মচারীদের সাথে কথা বলেই মার্কেট নির্মান করছেন তিনি এবং সেটি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন সৈয়দপুর ওলামা দলের আহবায়ক কাজি সাইদুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান,ফল ব্যবসায়ী শাহ আলম রেলওয়ের জমিতে অবৈধ ভাবে মার্কেট নির্মানের বিরুদ্ধে সৈয়দপুর রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী সরিফুল ইসলাম মামলা দেয়ার পরেও তার মার্কেট নির্মান কাজ অব্যাহত রয়েছে। তারা আরো বলেন, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৬ টা বছরে রেলওয়ের জমি যতটা দখল ও মার্কেট নির্মান হয়নি, ৫ আগষ্টের পর তার দিগুন রেলওয়ের জমিতে নকসা ছাড়া বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মান হচ্ছে।
রেলওয়ে বা পৌরসভা থেকে মার্কেট নির্মানের নকসা অনুমোদন নিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে ফল ব্যবসায়ি শাহ আলম বলেন, ৫ আগষ্টের পর সৈয়দপুর শহরে একের পর এক মার্কেট ও বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে নকসা ছাড়াই। তারা যদি নকসা অনুমোদন ছাড়াই রেলওেয়ের জমিতে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মান করতে পারে, তাহলে আমিও করবো তাতে কারো যদি কিছু করার থাকে তাহলে করতে পারেন,আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। আর টাকা থাকলে মামলা ও কিছু না বলে জানান তিনি।
একই দাপটে মার্কেট নির্মান হচ্ছে শহরের শহীদ ডাক্তার জিকরুল হক সড়কের দু-পাশে। রেলওয়ের গনপুর্ত বিভাগ কোন প্রকার পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে শহরের সাহেব পাড়া মহল্লায় মঞ্জুর হোসেনের নামের এক ব্যাক্তি রেলওয়ের জমিতে ১০ টি দোকান ও সাদরা লেন এলাকায় জলাশয় দখল করে একাধিক ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন। একই সাথে দখল হয়েছে রেলওেয়ের প্রায় সাড়ে ৪০০ একর ভুসম্পত্তি ও ২২শ রেল কোয়ার্টার। রেলবিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঘুষ বানিজ্য ও সহায়তায় রেলওয়ের বিশাল সম্পত্তি দখলদারদের দখলে চলে গেছে। রেলওয়ের গনপুর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সরিফুল ইসলাম বলেন, সৈয়দপুর পৌরসভার সাথে ২৫.৭৫ একর ভুসম্পত্তি নিয়ে রেলবিভাগের মামলা চলমান। সেক্ষেত্রে রেলওয়ের জমিতে বহুতল ভবন
নির্মাণের অনুমতি বা নকসা অনুমোদন দেয়া অসম্ভব। যারা অবৈধ ভাবে ভবন,মার্কেট বা বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন তারা অবশ্যই পৌর পরিষদ এর অনুমতি নিয়ে করতে পারেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি। সময় হলে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবিষয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের জমিতে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মান করলে রেলওয়ের কাছেই নকসার অনুমোদন নিতে হবে। এখানে পৌরসভার কিছুই করার নেই।
তবে সৈয়দপুর রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মুরসালিন রহমান জানান, ২৫.৭৫ একর ভুসম্পত্তি নিয়ে পৌরসভার সাথে মামলা চলমান থাকলেও এই জমিতে গড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স তারাই নিচ্ছেন, অথচ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় তারা নির্বোধ ভুমিকা
দেখাচ্ছেন। অন্য দিকে দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়ার কথা পাকশির ষ্টেট বিভাগের। আমরা বিভাগীয় ষ্টেট বিভাগ পাকশিকে দখলদার দের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেই কিন্তু তারা ও কোন ভুমিকাই রাখছেন না। ফলে দখলদাররা দাপটের সাথে অবৈধ ভাবে রেলওয়ের জমি দখল ও নকসা ছাড়া বহুতল ভবন নির্মাণ করেই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে সৈয়দপুর রেলবিভাগের সব সম্পত্তি দখলদাররা দখলে চলে যাবে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নুর-ই আলম সিদ্দিক বলেন, যেহেতু রেলওয়ের জমিতে ভবন নির্মাণে নকসা দেয়ার ক্ষমতা নেই পৌরসভার, সেখানে ভবন নির্মাণে বাধা দিতেও পারে না পৌরসভা।