নীলফামারীর সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথের বিভিন্ন স্থানে ফাঁকে ফাঁকে স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকে রাখার ইলাসটিক রেল ক্লিপ (ইআরসি) নেই। এ অবস্থায় এসব পথে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন। স্থানীয়দের ধারনা সংস্কার করা হলেও রেললাইনে ক্লিপগুলো লাগানোই হয়নি। তবে রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, দুর্বৃত্তরা ক্লিপ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, লোহা বা সিমেন্টের স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকে রাখতে ক্লিপ ব্যবহার করা হয়। একটি স্লিপারের দুপাশে দুইটি ও যেখানে দুই রেললাইনের সংযোগ রয়েছে সেখানেও চারটি করে ক্লিপ থাকে। কিন্তু সৈয়দপুরে রেলপথে বিভিন্ন জায়গায় এই ক্লিপগুলো নেই।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরে বার্মাসেল, ইসলামবাগ, ঘোরাঘাট, গোলাহাটসহ প্রায় ৫ কিলোমাটার এলাকাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে রেললাইনে শতাধিক ইআরসি ক্লিপ নেই।
রেলওয়ের সৈয়দপুর প্রকৌশল (পথ) বিভাগ জানায়, সৈয়দপুর থেকে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী রুটে নিত্যদিন ছয়টি আন্তঃনগর একটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। ভৌগলিক কারণে সৈয়দপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন। সৈয়দপুর ছাড়াও ঠাকুরগাও, দিনাজপুরের খানসামা, রংপুরের তারাগঞ্জের যাত্রীরা এ রুটেই যাতায়াত করেন।
সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথ মোট ৫৯ কিলোমিটার। এছাড়া রয়েছে ৪ টি লুপ লাইন যার দৈর্ঘ ৩ কিলোমিটার। এই রেলপথগুলো সৈয়দপুর প্রকৌশল বিভাগের অধীন। ২০১২ সালে সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথটি সংস্কার করে নতুন রেললাইন বসানো হয়। সংস্কার কাজ করেন ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর লুপলাইনগুলো সংস্কার করা হয় সম্প্রতি।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটার রেলপথে ১ হাজার ৪০০ স্লিপার থাকে। আর প্রতিটি স্লিপারের সাথে রেললাইনের পাত আটকাতে চারটি করে ক্লিপ লাগানো হয়। প্রতিটি ক্লিপের সাথে থাকে লাইনার ও রাবারপ্যাড। সেই হিসেবে এসব রেলপথে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৪০০ ক্লিপ থাকার কথা। কিন্তু সব মিলিয়ে এসব রেলপথ ১২ হাজার ক্লিপ নেই। এসব ক্লিপের মূল্য প্রায় ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা। রেলস্টেশন এলাকার ইসলামবাগ বড় মসজিদ এলাকার ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘নতুন রেললাইন বসানোর পর থেকেই এমনি দেখছি। স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকে রাখার জন্য যে ক্লিপ ব্যবহার করা হয়, তা অনেক জায়গায় লাগানো হয়নি। আর এ অবস্থাতেই এ পথেই বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রেনচালক বলেন, ক্লিপ না থাকায় রেললাইন নড়বড়ে হয়ে পড়ে। যেকোনো সময় ট্রেন লাইনচ্যুত হতে পারে।
সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) সুলতান মৃধা বলেন, রেল লাইনে ক্লিপ লাগানোর পর পরই চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আবার দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন চলাচলের কারণে বেশ কিছু ক্লিপ ভেঙে গেছে। হিসেব করে দেখা গেছে লুপলাইনসহ সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথে প্রায় ১২ হাজার ইআরসি ক্লিপ নেই। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যেসব জায়গায় ক্লিপ নেই, সেখানে দ্রুত ক্লিপ লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উন নবী বলেন, এই থানায় আমি সদ্য যোগদান করেছি। ক্লিপ চুরির বিষয়টি কিংবা এ ধরণের কোনো অভিযোগ হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে যেহেতু বিষয়টি নজরে এনেছেন এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় রেলওয়ে পাকশি বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডলের সাথে। বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, রেললাইনের ক্লিপ না থাকার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফিটিংসসহ রেলপথের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে আমার জানামতে, ক্লিপ লাগানোর পর কিছু ক্লিপ চুরি হয়ে গেছে । এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।