গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়ার ৬ মাস পর পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে হাসানকে। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের শাহামাদার গ্রামে তাকে শায়িত করা হয়। হাসান শাহামাদার গ্রামের মো. মনির হোসেনের ছেলে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ওইদিন বিকেলে সারাদেশে বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় সেই বিজয় মিছিলে যোগ দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান ভোলার ছেলে মো. হাসান। দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস পর ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে হাসানের লাশ শনাক্ত করেন তার পরিবার। এরপর ঢামেক কর্তৃপক্ষ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে হাসানের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্র্যের সামনে হাসানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা লাশ নিয়ে কফিন মিছিল করেন। এরপর হাসানের লাশ নিয়ে পরিবারের স্বজনরা বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। রাত ১২টার দিকে তার লাশ গ্রামের বাড়ীতে এসে পৌছে। শনিবার তার লাশ ভোলায় নিজ এলাকায় আনা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাচিয়া শাহামাদার মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে তার ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে হাসানের বাবা-ভাইসহ স্থানীয়রা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভোলার সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন। হাসান শাহামাদার গ্রামের মো. মনির হোসেনের ছেলে। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে হাসান ছিলেন মনির-গোলেনুর দম্পত্তির ২য় সন্তান।
হাসানের বাবা মনির হোসেন জানান, দীর্ঘ ৬ মাস হাসানকে খোঁজা-খুঁজি করে কোথাও না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের ফরেনসিক বিভাগে আমরা একটি লাশ শনাক্ত করি। এরপর তারা আমাদের ডিএনএর নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্তপূর্বক আমাদের কাছে শুক্রবার দুপুরে হাসানের লাশ হস্তান্তর করেন।
হাসানের বড় বোন শাহনাজ বেগম জানান, আমার ভাই কী দোষ করল, তাকে প্রাণে মেরে ফেলতে হয়েছে। আমরা দীর্ঘ ৬ মাস পর ভাইয়ের লাশ পেয়েছি। আমার ভাইয়ের হত্যার সঠিক বিচার চাই। হাসানকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন মা গোলেনুর বেগম। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। শেষবারের মতো হাসানকে একনজর দেখতে ভিড় করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, হাসান ছেলে হিসেবে অনেক ভালো ছিলেন। অভাব-অনটনে থাকা পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে জীবনের তাগিদে ঢাকায় গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তণ ঘটাতে গিয়ে নিজেই চিরতরে হারিয়ে গেলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এ ব্যক্তিটি। সরকার পতনের আন্দোলনে গিয়ে হাসান শহীদ হয়েছেন, সেহেতু বর্তমান সরকারের কাছে এই পরিবারের জন্য আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
ভোলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. রাহিম বলেন, দীর্ঘ ৬ মাস পরে হলেও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের সহযোদ্ধাকে ফিরে পেয়েছি। লাশ শনাক্তের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। জাতীয় শহীদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে শহীদ পরিবারদের পাওয়া সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অন্তবর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবী যারা এখনও নিখোঁজ রয়েছে তাদের জীবিত না হলেও যেন তাদের মরদেহটি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ভোলার সংগঠক মো. শাহাদাৎ খন্দকার জানান, জুলাই-আগস্টের সব হত্যাকান্ডের বিচার ও শহীদ পরিবারের পাশে সব সময় সরকারকে পাশে থাকার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। পাশাপাশি শহীদ পরিবারের সব সুযোগ-সুবিধা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে হাসানের দাফন শেষে দুপুর ১২টার দিকে হাসানের কবরস্থানের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিক্ষোভ মিছিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার ও আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধের দাবি করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও সমন্বয়করা।