৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা আকড়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হয়। স্বৈরাচার অপবাদ মাথায় নিয়ে দেশ ত্যাগ করলেও রেখে গেছেন নিজের আস্থাভাজন কিছু কর্মকর্তা। ফলে তিনি দেশের বাহিরে থাকলেও শেখ হাসিনার স্লোগান দুই জেলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
“শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” এমন স্লোগান লেখা সংবলিত বিদ্যুৎ বিলের কাগজে বিভিন্ন গ্রামের গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা সেই সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককে। তবে এবিষয়ে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার স্বদেশ কুমার ঘোষ বলেছেন, অর্থ অপচয় রোধ করতে তিনি এ উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
জানা গেছে, মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় মেহেরপুরের ৩টি ও চুয়াডাঙ্গার ৪ টি উপজেলার ৫ লক্ষাধিক গ্রাহক রয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকে সারাদেশে শেখ হাসিনার নাম ফলক, ছবিসহ বঙ্গবন্ধুর চিহ্ন পর্যন্ত সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু হিতে বিপরিত ভুমিকা পালন করছে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। প্রতি মাসের বিদ্যুৎ বিলের কাগজে শেখ হাসিনার উন্নয়নের প্রচার বার্তা চালানো হচ্ছে।
অক্টোবর-নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসের বিলেও এখনো দৃশ্যমান রয়েছে “শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ”। এ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক, বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে চলছে ক্ষোভ ও আলোচনা-সমালোচনা। মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার স্থানীয় মানুষেরা অভিযোগ করে বলেন ৫ আগষ্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ৬ মাস অতিবাহিত হলেও বিদ্যুৎ বিলের কাগজের পরিবর্তন করা হয়নি।
নানা সময়ে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের মাধ্যমে গ্রাহক হয়রানী, বিনা নোটিশে লাইন কেটে হয়রানীসহ সরাসরি দলবাজির অভিযোগ রয়েছে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার স্বদেশ কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে। একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করে বলেন মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিতি তৈরী করেছিলেন এই জেনারেল ম্যানেজার। আওয়ামীলীগের সময় কেউ কোন কথাই বলতে পারতো না। এখন মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে। হাসিনা সরকারের পতন হলেও তার নামে বিদ্যুৎ বিল থাকে কি করে? এমন প্রশ্ন সবার মনে।
মেহেরপুর জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোনের নেতা নাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ৫ আগষ্টে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন হলেও বিভিন্ন দপ্তরে তার পেতাত্মা রয়ে গেছে। মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিলের কপিতে “শেখ হাসিনার উদ্দ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” স্লোগানটি অদ্যবধি পরিবর্তন করা হয়নি। মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একাধিক বার বলার পরেও তারা ব্যবস্থা নেইনি। মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারীকে জানানো হলেও তাদের কথাটিও আমলেও নেননি বর্তমান জিএম। এঘটনায় আমরা মেহেরপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানায় সেই সাথে এ কর্মকর্তার দ্রুত অপসারণ চাই।
মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও ধানখোলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আখেরুজামান বলেন, বিগত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো আছে সেই আগের মত। যার কারণে মায়া-মমতা ত্যাগ করতে পারছে না এখনো। আওয়ামীলীগের সরকারের স্লোগান বিলের কাগজ এখনো বাদ না দিয়ে তা ব্যবহার করছে। এবিষয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টি আর্কষন করছি দ্রুত এসব কর্মকর্তাকে সরিয়ে ফেলতে হবে । তা না হলে আরও বড় ক্ষতি হবে।
গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, ছাত্র-জনতা বিপ্লবের পরে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার পেতাত্মা দেশে রয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিলে এ ধরনের প্রচার দেখে আমরা গাংনী অফিসে যায়। গাংনী অফিসারের নজরে আনার পরও কোন পরিবর্তন হয়নি। জিএম সাহেব এগুলো ত্যাগ না করলে সারাদেশে যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। বর্তমান জিএম সেই ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে পড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর এগুলো বাদ না দিলে যেকোন সময়ে অঘটন ঘটতে পারে।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) স্বদেশ কুমার ঘোষ জানান, আগে থেকে যেহেতু বিলের কাগজ ছাপানো ছিল তাই অর্থ অপচয় রোধে আমরা এটা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এরপর থেকে আমরা এগুলো মুছে দেবো। ইতোমধ্যে আমাদের নিকট বিভিন্ন মানুষ এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করায় আমরা আর এই স্লোগান রাখবো না।