বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচনী রোডম্যাপ নির্ধারণের জন্য সংস্কারের নাম করে সময়ক্ষেপনের দরকার নেই। সংস্কার হবে বিএনপির দেয়া ৩১ দফার ভিত্তিতে। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া মাত্র। জনগণের পালস বুঝে ডিসেম্বরের আগেই দ্রুত নির্বাচন দিন।অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনার কিছু উপদেষ্টা জনগণের পালস বুঝেনা। তাদের নসিহত করুন। অথবা বিদায় দিন। জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না। গণ-অভ্যুত্থানের স্প্রিড অনুযায়ী নিত্যপণ্যের মূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করুন।
আইনশৃংখলা পরিস্থতির উন্নতিতে নজর দিন। পতিত হাসিনার দোসরদের অস্থিরতার অপচেষ্টা শক্ত হাতে দমন করুন।তিনি বলেন, ‘অনুপাত-অনুপাত নির্বাচন যারা চান, তাদের রাজনৈতিক অনুপাতের জ্ঞান নেই। স্থানীয় নির্বাচন রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসায়না। জাতীয় সংসদেই নির্ধারিত হবে গণতান্ত্রিক সংস্কারের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও গণতন্ত্র রক্ষার সকল কর্ম।সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজার গোল চত্বর মাঠে (মুক্তিযোদ্ধা মাঠ) কক্সবাজার জেলা বিএনপি আয়োজিত এক বিশাল জনসমুদ্রে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্ত, অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জন দাবিতে সারা দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই বিশাল জনসভার আয়োজন করে জেলা বিএনপি।
জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান পাকিস্তানের স্বপ্ন ধুলিস্যাত করে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান রাজনৈতিক মৃত্যুবরণ করেন। আর ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব নিজেই নিজের কবর রচনা করেন। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগের কবর রচনা করে আওয়ামীলীগের দাফন কার্য সম্পন্ন করে গেছেন। এখন আওয়ামীলীগের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে, আর দাফন হয়েছে দিল্লীতে। মুর্দা হাসিনা কাফন পরে কথা বলছে দিল্লীতে বসে। পতিত ফ্যাসিবাদের প্রবক্তা হাসিনা নতুন বাংলাদেশে কাফন পরে কথা বলে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। মুর্দার কথা বলা জায়েজ নাই।তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং গণতন্ত্র পরস্পর বিরোধী শব্দ। আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনা এদেশে রাজনীতি করেনি। করেছে সংসদীয় একনায়ক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি খুন, গুম, লুটপাট। যার কারণে শেখ হাসিনা এখন জাতিসংঘ স্বীকৃত, বিশ্ব স্বীকৃত একজন খুনী।কক্সবাজারের লবণ শিল্প রক্ষায় তিনি বলেন, সারাদেশের সিংহভাগ লবণ উৎপাদিত হয় কক্সবাজারে। লবণের ন্যায্য মূল্য বজায় রাখুন। দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংস করতে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির পায়তারা হচ্ছে। দেশের লবণ শিল্পকে বাঁচাতে কক্সবাজারের লবণ চাষীদের জন্য আলাদা পরিকল্পনা করুন। নচেৎ লবনচাষীরা উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ ও হুইপ আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশের গণতন্ত্র চরম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়ে নিজেই দলকে ডুবিয়ে সেইফ এক্সিট করেছে। একটি মিনিট ও ভাবেনি তাদের দলও নেতাকর্মীর কথা। ভারত বসে দেশকে অস্থিতিশীল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। আমাদের পতিত সরকারের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে।দলের কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো এই বিশাল মাঠে জনসভা করার সাহস পায়না। শুধুমাত্র বিএনপি বলে এই মাঠে জনসভা করার সাহস দেখিয়েছে। তিনি বলেন বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা অন্যতম চারটি বিষয় আমি তুলে ধরতে চাই। এর মধ্যে অন্যতম হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে তা দ্রুত উন্নতি করতে হবে। জনগণের আকাঙ্খা হলো দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। এজন্য বর্তমান সরকারকে অনতিবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
পাশাপাশি পতিত হাসিনা সরকারের গত ১৫ বছর যে নির্যাতন চালিয়েছে তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া এই সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে আপনাদের এখন থেকে আরো সোচ্ছার হতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে পুণরায় ফ্যাসিষ্টদের যদি উত্থান হয় তাহলে কারো অস্তিত্ব থাকবে না। দিল্লিতে বসে হাসিনা প্রতিনিয়ত যে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে সে বিষয়ে বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।মহেশখালী-কুতুবদিয়া থেকে নির্বাচিত সাবেক সাংসদ আলমগীর মোঃ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ বলেন, পতিত হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছর দলীয় নেতাকর্মীদের উপর যে নির্যাতন চালিয়েছে তা দেশের রাজনীতির ইতিহাসে নজীর নেই। এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে পতিত হাসিনা।
ড. ইউনুস সরকারকে জাতীয় ঐক্যমত্য সৃষ্টি করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। অন্যতায় দেশে পুণরায় দোসরদের উত্থান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন এ নেতা।বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, পৌর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব রফিকুল হুদা চৌধুরী, সদর বিএনপির আহবায়ক আবদুল মাবুদ, উখিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী, মহেশখালী উপজেলা বিএনপির আবু বক্কর ছিদ্দিক।কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্নার সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব এনামুল হক, মমতাজুল ইসলাম, এডভোকেট নুরুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট ছৈয়দ আহমদ উজ্জ্বল, জেলা কৃষকদলের আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন আফসেল, জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তফা, জেলা ছাত্রদল নেতা ফাহিমুর রহমানসহ জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ।এদিকে সোমবার বিএনপির এই সমাবেশ ঘিরে দুপুর ১টার পর বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি বহর ও মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এ সময় রং-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে সমাবেশস্থল। দুপুর ২টায় শুরু হয় সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা।
মাথার উপরে কড়া রোদ উপেক্ষা করে সমাবেশ শুরুর আগেই নেতা-কর্মীদের ঢল কক্সবাজার শহরের গোলচত্ত্বর মাঠে। খোলা মাঠে অধীর আগ্রহে লক্ষাধিক মানুষ। মাঠ ছাড়িয়ে জনসমুদ্রের ঢেউ পৌঁছে যায় প্রবেশপথের ওপরে, এমনকি সীমানা দেয়ালের বাইরেও।গত ১৬ বছরে রাজনীতির মাঠে এত বড় পরিসরে কক্সবাজারে সমাবেশ করার সুযোগ পায়নি বিএনপি। তাই নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল অন্তহীন। জেলার ৯ উপজেলার ১৪টি সাংগঠনিক ইউনিটের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও যোগ দেন সমাবেশে।