Dhaka ১১:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাথরঘাটায় চাপিলা মাছের নামে নির্বিচারে বিক্রি হচ্ছে ইলিশের পোনা

প্রশাসনের তেমন নজরদারী না থাকায় এবং কিছু অসাধু মৎস্য কর্মকর্তাদের যোগসাজসে চাপিলা মাছের নামে ইলিশের পোনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করে তা বাজারজাত করছে পাথরঘাটার কিছু অসাধু জেলেরা। এভাবে ইলিশের পোনা মাছ নিধন হলে নদীতে আগামী মৌসুমে ইলিশ মাছ আহরণে চরম সংকট দেখা দেবে।

সরেজমিনে বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় গিয়ে দেখা গেছে, এ নদীর প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিষিদ্ধ বাঁধা, গড়া ও বেহুন্দি জাল দিয়ে জেলেরা মাছ শিকারা করে। এসব জালের ফাঁস আধা ইঞ্চি থেকে পৌনে এক ইঞ্চি। ওই ছোট ফাঁসের এ নিষিদ্ধ জালে অবাধে পোনা মাছ নিধন চলছে। সাধারণত জেলেরা ইলিশ, পোয়া, টেংরা, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে থাকেন।

মনির হোসেন, কালাম, এমাদুল হোসেনসহ একাধীক জেলে অভিযোগ করে বলেন, জাটকা বিক্রি করা ও ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও মৎস্য বিভাগের নজরদারি বা অভিযান না থাকায় এবং মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের যোগসাজসে জেলেরা ইলিশের পোনাসহ নানা মাছের পোনা নিধনের পাশাপাশি বাজারজাত করছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে ইলিশের এই পোনা। এছাড়াও এই ইলিশের পোনা পরবর্তীতে শুঁটকি বানিয়ে চাপিলা মাছ বলেও বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন কী পরিমাণ পোনা মাছ নিধন হচ্ছে, তা নিজের চোখে না দেখলে কল্পনা করাও কঠিন। প্রশাসন যদি ভালো করে নজরদারি করে, তাহলে ইলিশ মাছ রক্ষা করা অসম্ভব হবে।

গভীর সমুদ্রগামী ট্রলারের মালিক আবুল হোসেন ফরাজী জানান, বঙ্গোপসাগরের বিষখালী-বলেশ্বর নদীর মোহনায় অসাধু জেলেরা মাছের পোনা নিধন করছে। এ ব্যাপারে মৎস্য বিভাগকে জানানো হলেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। নাম মাত্র অভিযান পরিচালনা করলেও পরে তা অভ্যাহত থাকে না। যে কারণে প্রজননকালীন ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া সব উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার যে সকল নিষেধাজ্ঞা চালু করেছে, ওই সময়ে যেসব মাছ ডিম ছাড়ে, সেই ডিম ফুটে যে বাচ্চা বের হয়, সেগুলো সব এ জালে ধরা পড়ে। এই জাল এতটাই ঘন যে এর ভেতর থেকে পানি ছাড়া আর কিছুই যেতে পারে না। সবকিছু আটকা পড়ে। এভাবে চলতে থাকলে জেলেদের আর সাগরে যাওয়ার প্রয়োজনই পড়বে না। এক সময় সাগর মাছ শূন্য হয়ে পড়বে। ইলিশের পোনা নিধনের বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

বাজারে প্রকাশ্যে ইলিশের পোনা বিক্রির বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসিবুল হক বলেন, এ অঞ্চলের কিছু অসাধূ জেলে রয়েছে যারা অবৈধ জাল দিয়ে ছোট মাছগুলো ধ্বংশ করছে। নদীতে কোস্টগার্ড, পুলিশকে নিয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতমধ্যে অভিযানে অবৈধ জাল এবং খুটি ধ্বংস করেছি। তবে এই মাছগুলো যে বাজারে বিক্রি করছে তা জানা ছিলো না, এব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাথরঘাটায় চাপিলা মাছের নামে নির্বিচারে বিক্রি হচ্ছে ইলিশের পোনা

Update Time : ১২:৫৪:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রশাসনের তেমন নজরদারী না থাকায় এবং কিছু অসাধু মৎস্য কর্মকর্তাদের যোগসাজসে চাপিলা মাছের নামে ইলিশের পোনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করে তা বাজারজাত করছে পাথরঘাটার কিছু অসাধু জেলেরা। এভাবে ইলিশের পোনা মাছ নিধন হলে নদীতে আগামী মৌসুমে ইলিশ মাছ আহরণে চরম সংকট দেখা দেবে।

সরেজমিনে বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় গিয়ে দেখা গেছে, এ নদীর প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিষিদ্ধ বাঁধা, গড়া ও বেহুন্দি জাল দিয়ে জেলেরা মাছ শিকারা করে। এসব জালের ফাঁস আধা ইঞ্চি থেকে পৌনে এক ইঞ্চি। ওই ছোট ফাঁসের এ নিষিদ্ধ জালে অবাধে পোনা মাছ নিধন চলছে। সাধারণত জেলেরা ইলিশ, পোয়া, টেংরা, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে থাকেন।

মনির হোসেন, কালাম, এমাদুল হোসেনসহ একাধীক জেলে অভিযোগ করে বলেন, জাটকা বিক্রি করা ও ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও মৎস্য বিভাগের নজরদারি বা অভিযান না থাকায় এবং মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের যোগসাজসে জেলেরা ইলিশের পোনাসহ নানা মাছের পোনা নিধনের পাশাপাশি বাজারজাত করছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে ইলিশের এই পোনা। এছাড়াও এই ইলিশের পোনা পরবর্তীতে শুঁটকি বানিয়ে চাপিলা মাছ বলেও বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন কী পরিমাণ পোনা মাছ নিধন হচ্ছে, তা নিজের চোখে না দেখলে কল্পনা করাও কঠিন। প্রশাসন যদি ভালো করে নজরদারি করে, তাহলে ইলিশ মাছ রক্ষা করা অসম্ভব হবে।

গভীর সমুদ্রগামী ট্রলারের মালিক আবুল হোসেন ফরাজী জানান, বঙ্গোপসাগরের বিষখালী-বলেশ্বর নদীর মোহনায় অসাধু জেলেরা মাছের পোনা নিধন করছে। এ ব্যাপারে মৎস্য বিভাগকে জানানো হলেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। নাম মাত্র অভিযান পরিচালনা করলেও পরে তা অভ্যাহত থাকে না। যে কারণে প্রজননকালীন ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া সব উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার যে সকল নিষেধাজ্ঞা চালু করেছে, ওই সময়ে যেসব মাছ ডিম ছাড়ে, সেই ডিম ফুটে যে বাচ্চা বের হয়, সেগুলো সব এ জালে ধরা পড়ে। এই জাল এতটাই ঘন যে এর ভেতর থেকে পানি ছাড়া আর কিছুই যেতে পারে না। সবকিছু আটকা পড়ে। এভাবে চলতে থাকলে জেলেদের আর সাগরে যাওয়ার প্রয়োজনই পড়বে না। এক সময় সাগর মাছ শূন্য হয়ে পড়বে। ইলিশের পোনা নিধনের বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

বাজারে প্রকাশ্যে ইলিশের পোনা বিক্রির বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসিবুল হক বলেন, এ অঞ্চলের কিছু অসাধূ জেলে রয়েছে যারা অবৈধ জাল দিয়ে ছোট মাছগুলো ধ্বংশ করছে। নদীতে কোস্টগার্ড, পুলিশকে নিয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতমধ্যে অভিযানে অবৈধ জাল এবং খুটি ধ্বংস করেছি। তবে এই মাছগুলো যে বাজারে বিক্রি করছে তা জানা ছিলো না, এব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।