গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নানা অপকর্মের হোতা মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সেই ওসি’র অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অপকর্মের নানা অভিযোগ উঠলে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন। এ স্ট্যান্ড রিলিজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ।
এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুলাইয়ের পর কালিয়াকৈর মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন ওসি মহিদুল ইসলাম। এরপর নানা অপকর্মে জড়িয়ে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ওই এলাকার ঝুঁট ব্যবসার হাত বদলের পর ঝুঁটের দাম কমানোর কথা বলে স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৬লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন ওসি মহিদুল। এ ঘটনায় বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হলে গত নভেম্বর মাসে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য খুটির জোরে সেই প্রত্যাহার ঠেকিয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন ওই ওসি ও তার টিম।
তার অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ হলে ওই ওসি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং ওই ব্যবসায়ী ও তার স্বজনদের ভয়ভীতিসহ নানা হুমকি দেন। এরপর তার সহযোগী ইউসুফ আলী রানাকে বাদী করে আদালতে একটি সিআর মামলা করান ওই ওসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ফেব্রুয়ারী কালিয়াকৈর থানায় ওই ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ও তার শ^শুর কালিয়াকৈর পৌর শ্রমিকদলের সভাপতি এ.কে আজাদকে আসামী করে একটি মামলা রেকর্ড করা হয়। এছাড়াও ওই ওসির নির্দেশে এএসআই হাবিবুর রহমান হাবিব ফোনে যমুনা কোম্পানির কর্ভারভ্যান চালক সবুজ সরকারকে ফাঁড়িতে যেতে বলেন।
পরে তিনি গত ১০ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে ওই ফাঁড়িতে যান। তালাকপ্রাপ্ত ২য় স্ত্রী অভিযোগ দিয়েছে জানিয়ে তার কাছে ২লক্ষ টাকা দাবী করে ফাঁড়ি পুলিশ। এতো টাকা দিতে অনিহা প্রকাশ করায় পুলিশ তাকে মারধর করে। খবর পেয়ে তার ১ম স্ত্রী সেলিনা ফাঁড়ি পুলিশকে ৫০হাজার টাকা দেন। কিন্তু দাবীকৃত টাকার কম দেয়ায় ওসি মহিদুল, এএসআই হাবিবুরসহ তিন পুলিশ তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ১ম স্ত্রীর সামনে অমানবিক নির্যাতন করে। ওই সময় মারধর থামানোর জন্য আরো ১০হাজার টাকা পুলিশ দাবী করলে তার স্ত্রী আরো ৫হাজার টাকা ব্যবস্থা করে দেয়। তারপরও শান্ত হননি ওসি মহিদুল ও তার টিম।
দাবীকৃত টাকা না পেয়ে দু’দিন আটকে রেখে গত ১১ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাদের স্বামী-স্ত্রীকে কালিয়াকৈর থানায় হস্তান্তর করে ফাঁড়ি পুলিশ। ২য় স্ত্রী ইতি মামলা করতে অস্বীকার করলে ফাঁড়ি পুলিশ রাতেই তার বড় বোন হাফিজা বেগমকে বাদী করে একটি ধর্ষণ মামলা করায়। ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৬নভেম্বর সবুজকে তালাক দেন তার ২য় স্ত্রী ইতি। তালাকের পর প্রলোভন দেখিয়ে ৭নভেম্বর এবং ২৬নভেম্বর একাধিকবার ধর্ষক করে তালাকপ্রাপ্ত সবুজ। গত ১২ডিসেম্বর সবুজকে গাজীপুর জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।
৪৩দিন জেল খাটার পর ২২ জানুয়ারী আপোষনামার মাধ্যমে জামিনে বেড়িয়ে আসেন সবুজ। এরপর ফাঁড়ি পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে ওইদিন ভুক্তভোগী সবুজ সরকারের ১ম স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে গাজীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি জানতে পেরে ওই মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশ ও তাদের সমর্থিত লোক দিয়ে বাদী ও তার পরিবারকে নানা ধরণের ভয়ভীতিসহ হুমকি দেন। এছাড়াও ওই ওসির বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় লোকজন।
নানা অভিযোগে প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নানা অপকর্মের হোতা মৌচাক পুলিশের ইনচার্জ সেই ওসি’র অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। তবে এব্যাপারে জানতে ওই ওসির মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ জানান, মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ওসি মহিদুল ইসলামকে স্ট্যান্ড রিলিজ করার বিষয়টি শুনেছি। তবে কি কারণে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে? সেটা জানা নেই।