Dhaka ১২:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই; দাবিতে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীর রক্তে রঞ্জিত রাজপথ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসনের শৃঙ্খল ভেঙে দেয় এবং বাঙালি জাতিসত্তা বিনির্মাণের প্রথম সোপান রচিত হয়। ১৯৫২ সালের এই দিনে শহীদদের আত্মত্যাগ যে আলোকিত পথের উন্মোচন করেছিল, সেই পথ ধরেই এসেছিল স্বাধীনতা।

পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’- এই গানের আবহে আজ সারা জাতি অন্তহীন প্রেরণায় দিবসটি পালন করছে। দেশের সব স্থায়ী ও অস্থায়ী শহীদ মিনারের বেদি আজ ফুলে ফুলে ভরে উঠবে।

দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও বাণী প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় বক্তারা ভাষাশহীদ ও সংগ্রামীদের তালিকা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, আমাদের সব অর্জন রক্ত ও ত্যাগের মাধ্যমে এসেছে, তাই এসব ইতিহাস সংরক্ষণ করা জরুরি। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের তালিকা করা উচিত।

উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলে। সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা এ দেশের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়।

এদিকে আজ একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে সর্বসাধারণের জন্য শহীদ মিনার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

প্রতি বছরের মতো এবারও একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি থাকবে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসহ সব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনসহ দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় ভাষাশহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শহীদ মিনার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো বাংলা ভাষার বর্ণমালাসংবলিত ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং অন্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করা হবে।

এর আগে গত বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে তথ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম সাহাবুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট রুট নির্ধারণ করেছে ডিএমপি। নির্ধারিত রুটগুলো হলো পলাশী ক্রসিং-ভাস্কর্য ক্রসিং-জগন্নাথ হল ক্রসিং হয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ এবং শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রমনা ক্রসিং-দোয়েল চত্বর হয়ে প্রস্থান। শাহবাগ, নীলক্ষেত, শহীদুল্লাহ হল, চানখাঁরপুল, পলাশী ও বকশীবাজার ক্রসিংয়ে ট্রাফিক ডাইভারশন থাকবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

Update Time : ১১:১৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই; দাবিতে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীর রক্তে রঞ্জিত রাজপথ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসনের শৃঙ্খল ভেঙে দেয় এবং বাঙালি জাতিসত্তা বিনির্মাণের প্রথম সোপান রচিত হয়। ১৯৫২ সালের এই দিনে শহীদদের আত্মত্যাগ যে আলোকিত পথের উন্মোচন করেছিল, সেই পথ ধরেই এসেছিল স্বাধীনতা।

পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’- এই গানের আবহে আজ সারা জাতি অন্তহীন প্রেরণায় দিবসটি পালন করছে। দেশের সব স্থায়ী ও অস্থায়ী শহীদ মিনারের বেদি আজ ফুলে ফুলে ভরে উঠবে।

দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও বাণী প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় বক্তারা ভাষাশহীদ ও সংগ্রামীদের তালিকা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, আমাদের সব অর্জন রক্ত ও ত্যাগের মাধ্যমে এসেছে, তাই এসব ইতিহাস সংরক্ষণ করা জরুরি। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের তালিকা করা উচিত।

উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলে। সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা এ দেশের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়।

এদিকে আজ একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে সর্বসাধারণের জন্য শহীদ মিনার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

প্রতি বছরের মতো এবারও একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি থাকবে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসহ সব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনসহ দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় ভাষাশহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শহীদ মিনার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো বাংলা ভাষার বর্ণমালাসংবলিত ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং অন্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করা হবে।

এর আগে গত বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে তথ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম সাহাবুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট রুট নির্ধারণ করেছে ডিএমপি। নির্ধারিত রুটগুলো হলো পলাশী ক্রসিং-ভাস্কর্য ক্রসিং-জগন্নাথ হল ক্রসিং হয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ এবং শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রমনা ক্রসিং-দোয়েল চত্বর হয়ে প্রস্থান। শাহবাগ, নীলক্ষেত, শহীদুল্লাহ হল, চানখাঁরপুল, পলাশী ও বকশীবাজার ক্রসিংয়ে ট্রাফিক ডাইভারশন থাকবে।