বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি হারুন অর রশিদ হারুন বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা বলেছেন জামায়াতে ইসলামী কোন ইসলামী দল না, তারা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে তারা ধর্ম ব্যবসায়ী। তিনি জামায়াতে ইসলামের উদ্দেশে বলেন দয়া করে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেননা, ফেতনা সৃষ্টি করবেননা। সুষ্ঠ ভোট হলে রাজশাহী বিভাগে জামায়াতে ইসলাম একটি সিট ও পাবেনা। তিনি বলেন, শেখ মুজিব মারা যাবার পর ধানমন্ডির ৩২নম্বরে ইন্নালিল্লাহ পড়ার কেউ ছিলনা। বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জুলুম নির্যাতন করলেও তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি, তারেক রহমান লন্ডনে ভাড়া বাড়িতে থাকেন আর শেখ হাসিনা তার সন্তানেরি দেশের বাইরে সম্পদের পাহাড় গরেছেন। বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন রমজানের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষনা করেন নইলে ঈদের পর বৃহত্তর কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামব।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় জয়পুরহাট শহরের শহীদ ডা: আবুল কাশেম ময়দানে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হারুন অর রশিদ বলেন, ৫ আগস্টের পর তিনদিন সরকার ছিল না। নিশ্চয় আপনি লক্ষ করেছেন প্রফেসর ড. ইউনুস। আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে স্মরণ করে বলে দিতে চাই। যখন শেখ হাসিনা তার শ্বশুর বাড়ির উদ্দ্যেশে পালিয়ে গেছে, বাংলাদেশে জনতা সেদিন রাজপথে নেমে এসেছিল। শেখ মুজিবের ভাস্কর্য-মূর্তি, শেখ হাসিনার ভাস্কর্য-মূর্তি মুহূর্তের মধ্যে এ দেশের মানুষ গুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের নামের সব নামফলকগুলো চুরমার করে দিয়েছিল। এর একটিই কারণ, শেখ হাসিনা এ দেশের মানুষের উপর অন্যায় করেছিল। প্রধান উপদেষ্টা ৫ তারিখের পর আপনি সরকার গঠন করেছেন, আমরা আপনাকে সহযোগিতা করেছি। কিসের সংস্কার? শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশের ৮০ ভাগ সংস্কার হয়ে গেছে। পুলিশ মেরুদণ্ড হারিয়ে ফেলেছে, প্রশাসন বিকলঙ্গ অবস্থায় মধ্যে রয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের এই উপদেষ্টা বলেন, আজকে আপনি (উপদেষ্টা) যে বিতর্ক, অস্থিরতা তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি হচ্ছে, আপনি সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেন নাই। শেখ হাসিনা পালিয়েছে, তার কতিপয় দোসররা পালিয়েছে। কিন্তু এদেশে কি শেখ হাসিনার দোসর মুক্ত হয়েছে?-না। কেন আপনি ছয় মাস পর আয়না ঘর পরিদর্শনে গেলেন? আপনি ক্ষমতায় আসার পর আয়নাঘরের আলামত কারা নষ্ট করলো? জবাব দিতে হবে আপনাকে। আমাদের অনেক সাথী এখনও গুমের শিকার, অনেক সহকর্মীর বুকে ব্যথা। যারা স্বজন হারিয়েছে, যারা তাদের স্বজনকে রাস্তায় রাস্তায় খুঁজে বেরাচ্ছে। তাদেরকে সেদিন কেন আপনি ডাকলেন না? কারা ওই আয়নাঘরের আলামত নষ্ট করছে? যারা আয়নাঘর তৈরি করেছিল, আয়নাঘর তৈরি করে এ দেশের নিরীহ মানুষের উপর জুলুম-নিপীড়ন করেছে, হত্যা করেছিল এই আয়নাঘরে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে কেন এখনও গ্রেপ্তার করা হয় নাই? সে সেনাবাহিনীর যত বড়ই অফিসার হোক, পুলিশের যত বড়ই কর্মকর্তা হোক, যে বিভাগেরই কর্মকর্তা হোক। এতো বড় বিপ্লব, এতো রক্তপাতের মধ্যে দিয়ে আমরা কি অর্জন করলাম? আমরা সমর্থন দিয়েছি, আপনার ভয়ের কোন কারণ নাই। আপনাকে অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এইসব অপরাধীকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
হারুন অর রশিদ প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে সারা বাংলাদেশে জেলায় জেলায় সমাবেশ শুরু হয়েছে। আপনি রমজানের মধ্যেই দয়া করে নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা করেন। আর না হলে আমরা রমজানের পরে আরও বৃহত্তর কর্মসূচী দিয়ে মাঠে নামবো। আমরা এই সরকারকে অসহযোগিতা করি, তাহলে ২৪ ঘণ্টা থাকতে পারবে?-না। সুতরাং আমরা অনুরোধ করবো, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রধানদের অনুরোধ করবো আপনারা আপনাদের অতীত কর্মকাণ্ড ও অতীত চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসুন। এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রের ব্যাপারে অত্যন্ত সংগ্রামী ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা চাই বাংলাদেশ একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাক।
জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলজার হোসেনের সভাপতিত্বে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবাইদু রহমান চন্দন, নির্বাহী সদস্য সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, ফয়সল আলীম, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা প্রধান, আব্দুল ওয়াহাব। এছাড়াও স্থানীয় বিএনপি’র নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য দেন।
সভায় বিএনপি নেতৃবৃন্দরা অবিলম্বে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রনে আনা সহ অনতি বিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের দাবী জানান।
এর আগে এদিন বিকেল ৩টায় শহীদ ডা: আবুল কাশেম ময়দানে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে জেলা বিএনপি ছাড়া থানা বিএনপির মধ্যে সদর, পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর থানা বিএনপি, জেলা ও থানা জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, তাঁতীদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথক ভাবে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন।