Dhaka ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাজের সন্ধানে রাশিয়া, অতঃপর যুদ্ধের প্রস্তুতি: মেহেরপুরের ৪ যুবকের লোমহর্ষক বর্ণনা

স্বল্প খরচ সেই সাথে মোটা অঙ্কের বেতনে রাশিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন দেশের অনেক যুবক। কিন্তু পৌছে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে চুক্তিপত্রে সই করে যেতে হচ্ছে যুদ্ধে। সম্প্রতি রাশিয়ায়-ইউক্রেন যুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে ফিরে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন মেহেরপুরের ৪ যুবক। কাজের অনুমোদন বাদে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে যুদ্ধ করছে অনেকে।  তবে পুলিশ প্রশাসন বলছে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তারা।

বছরখানেক আগে স্থানীয় দালাল  আরফানের সহায়তায় এসপি গ্লোবাল রিসোর্স ঢাকা নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে রাশিয়া পাড়ি জমিয়েছিলেন মেহেরপুরের শিলন, মফিজুর, সোহেল ও আশিকুর। ১১ লাখ টাকার চুক্তিতে ক্লিনারের মৌখিক চুৃক্ত হলেও তাদের নেওয়া হয়েছিলো রাশিয়ান সেনাবহীনির একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। সেখানে জোরপূর্বক রাশিয়ান ভাষার একটি চুক্তিপত্রে সাক্ষরও করানোর চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে পরিবার কাছ থেকে আরো দুই লাখ টাকা করে খরচ করে দেশে ফিরেছেন তারা।

ফিরে আসা চারজনের ভাষ্য অনুযায়ি একবার চুক্তিপত্রে সাক্ষর করলেই আর দেশে ফেরার কোন সূযোগ নেই। ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার কথা বলে বিজনেস ভিসাতে নেওয়া হয় তাদের।  সেখানে গিয়ে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে রাত কাটাতে হয় তাদের। খাবার ও পানির অভাব সাথে গোলাগুলি ও মটারসেলের  আক্রমণের সময় যুদ্ধের বাঙ্কারগুলোতে অবস্থানের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তারা। রাশিয়ায় ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে বাংলাদেশীদেরকে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়ান সেনাবাহীনি।  বাংলাদেশ থেকে নাম ডাকওয়ালা এজেন্সি  থেকে প্রতারিত হয়ে রাশিয়ায় যাচ্ছেন শত শত যুবক।

আর কেউ রাশিয়ায় যাচ্ছে কিনা এমন খোঁজ করতে গেলে শুধুমাত্র মেহেরপুর সদরের আমঝুপি গ্রামের  অন্ততঃ ৫০ জনের সাথে দালাল চক্রের চুক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে।   তিন কিস্তিতে ৬ লাখ টাকা খরচ করলেই যাওয়া যাচ্ছে রাশিয়া। বেতন হবে ৭০ হাজার থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত। এমন প্রলোভনে প্রতারণার জাল বুনেছেন দালাল চক্রটি। সাথে দেওয়া হচ্ছে ওয়ার্ক পারমিটও। এমন সত্যতা পাওয়া গেছে চুক্তিপত্র হাতে পাওয়া দুই যুবক সিহাব আলী ও জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে। তারা জানান, স্থানীয় দালাল আরফান খানের মাধ্যমে রাশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

স্থানীয় দালাল আরফান খানের সাথে তো ফোনে কথা বললে তিনি ১৫ জনকে রাশিয়া নিয়ে যাচ্ছে বলে স্বীকার করে।  আর এসপি গ্লোবাল রিচার্জ এর দালাল শামসুল ইসলামের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। দালাল চক্রের সন্ধান করতে গিয়ে দু’টি এ্যাজেন্সির কল রেকর্ড আসে আমাদের হাতে। দেশে ফিরে আনার আশ্বাস আর নানান অযুহাতের সুর তাদের বক্তব্যে।

এ ব্যাপারে মেহেরপুর পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম জানান,  পুলিশ বাহিনী বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। দালাল চক্রকে আইনের আওতায় এনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।  বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতারকের ফাঁদে পা দিয়ে রাশিয়ায় না যাওয়ার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

কাজের সন্ধানে রাশিয়া, অতঃপর যুদ্ধের প্রস্তুতি: মেহেরপুরের ৪ যুবকের লোমহর্ষক বর্ণনা

Update Time : ১২:৩৩:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

স্বল্প খরচ সেই সাথে মোটা অঙ্কের বেতনে রাশিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন দেশের অনেক যুবক। কিন্তু পৌছে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে চুক্তিপত্রে সই করে যেতে হচ্ছে যুদ্ধে। সম্প্রতি রাশিয়ায়-ইউক্রেন যুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে ফিরে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন মেহেরপুরের ৪ যুবক। কাজের অনুমোদন বাদে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে যুদ্ধ করছে অনেকে।  তবে পুলিশ প্রশাসন বলছে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তারা।

বছরখানেক আগে স্থানীয় দালাল  আরফানের সহায়তায় এসপি গ্লোবাল রিসোর্স ঢাকা নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে রাশিয়া পাড়ি জমিয়েছিলেন মেহেরপুরের শিলন, মফিজুর, সোহেল ও আশিকুর। ১১ লাখ টাকার চুক্তিতে ক্লিনারের মৌখিক চুৃক্ত হলেও তাদের নেওয়া হয়েছিলো রাশিয়ান সেনাবহীনির একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। সেখানে জোরপূর্বক রাশিয়ান ভাষার একটি চুক্তিপত্রে সাক্ষরও করানোর চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে পরিবার কাছ থেকে আরো দুই লাখ টাকা করে খরচ করে দেশে ফিরেছেন তারা।

ফিরে আসা চারজনের ভাষ্য অনুযায়ি একবার চুক্তিপত্রে সাক্ষর করলেই আর দেশে ফেরার কোন সূযোগ নেই। ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার কথা বলে বিজনেস ভিসাতে নেওয়া হয় তাদের।  সেখানে গিয়ে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে রাত কাটাতে হয় তাদের। খাবার ও পানির অভাব সাথে গোলাগুলি ও মটারসেলের  আক্রমণের সময় যুদ্ধের বাঙ্কারগুলোতে অবস্থানের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তারা। রাশিয়ায় ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে বাংলাদেশীদেরকে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়ান সেনাবাহীনি।  বাংলাদেশ থেকে নাম ডাকওয়ালা এজেন্সি  থেকে প্রতারিত হয়ে রাশিয়ায় যাচ্ছেন শত শত যুবক।

আর কেউ রাশিয়ায় যাচ্ছে কিনা এমন খোঁজ করতে গেলে শুধুমাত্র মেহেরপুর সদরের আমঝুপি গ্রামের  অন্ততঃ ৫০ জনের সাথে দালাল চক্রের চুক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে।   তিন কিস্তিতে ৬ লাখ টাকা খরচ করলেই যাওয়া যাচ্ছে রাশিয়া। বেতন হবে ৭০ হাজার থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত। এমন প্রলোভনে প্রতারণার জাল বুনেছেন দালাল চক্রটি। সাথে দেওয়া হচ্ছে ওয়ার্ক পারমিটও। এমন সত্যতা পাওয়া গেছে চুক্তিপত্র হাতে পাওয়া দুই যুবক সিহাব আলী ও জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে। তারা জানান, স্থানীয় দালাল আরফান খানের মাধ্যমে রাশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

স্থানীয় দালাল আরফান খানের সাথে তো ফোনে কথা বললে তিনি ১৫ জনকে রাশিয়া নিয়ে যাচ্ছে বলে স্বীকার করে।  আর এসপি গ্লোবাল রিচার্জ এর দালাল শামসুল ইসলামের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। দালাল চক্রের সন্ধান করতে গিয়ে দু’টি এ্যাজেন্সির কল রেকর্ড আসে আমাদের হাতে। দেশে ফিরে আনার আশ্বাস আর নানান অযুহাতের সুর তাদের বক্তব্যে।

এ ব্যাপারে মেহেরপুর পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম জানান,  পুলিশ বাহিনী বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। দালাল চক্রকে আইনের আওতায় এনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।  বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতারকের ফাঁদে পা দিয়ে রাশিয়ায় না যাওয়ার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।