Dhaka ০৬:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজারে বিমানবাহিনী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে নিহত-১

কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়া এলাকায় চেকপোস্ট থেকে এক ব্যক্তিকে আটকের জেরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাথে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষনের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত ৬ জন। আহতদের মধ্যে শিহাব কবির নাহিদ (৩০) নামে এক ব্যবসায়ী যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

গত সোমবার বেলা ১২ টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার সমিতি পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়াসহ আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিত নিয়ন্ত্রনে ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও বিমান বাহিনী। এ ঘটনায় একজন নিহত এবং ৬ জন চিকিৎসাধীন থাকার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের পুলিশ বক্সের কর্তব্যরত ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম।নিহত শিহাবের বাবা নাছির উদ্দিন কক্সবাজার পিটিআইয়ের সাবেক সুপার। মা আমেনা খাতুন কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে কয়েক বছর আগে অবসর গ্রহণ করেন। থাকেন সমিতিপাড়ায়। গুলিতে ছেলের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে আমেনা খাতুন বলেন, ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় ছেলে (শিহাব) ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ একটি গুলি মাথায় এসে লাগে।

গুলিতে মাথার খুলি উপড়ে মগজ বেরিয়ে আসে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।পরিবারের পক্ষে বিমান বাহিনীর গুলিতে শিহাবের মৃত্যু হয়েছে দাবি করা হলেও আইএসপিআর বলছে, অভিযোগটি সত্য নয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আইএসপিআর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কক্সবাজারে অবস্থিত বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত সোমবার বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিয়াম স্কুলের পাশে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট হতে একজন স্থানীয় লোকের মটর সাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমান বাহিনীর প্রভোস্ট কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিকেরও বেশি স্থানীয় লোকজন বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাঁধা দেয়।

পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমান বাহিনীর সদস্যদের উপর ইট পাটকেল ছুড়ে। এসময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন যার মধ্যে বিমান বাহিনীর ৪ জন সদস্য (১ জন অফিসার ও ৩ জন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক বিমান বাহিনীর Rules of Engagement অনুযায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়, তবে স্থানীয় জনসাধারণের উপর কোন প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমান বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

স্থানীয় জনগণের ইটপাটকেলের আঘাতে বিমান বাহিনীর গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছিল যা পরবর্তীতে বেশি সম্প্রসারিত হয়নি। এমতাবস্থায়, একটি কুচক্রী মহল বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান বাহিনীর গুলিতে ওই যুবক নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি নয়। এক্ষেত্রে প্রচারিত গুলির খোসার ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, উক্ত খোসাটি ফাঁকা গুলির (Blank Cartridge) যা প্রাণঘাতি নয় এবং শুধুমাত্র শব্দ তৈরি করে। যুবক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।

এছাড়াও লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, উক্ত ঘটনা প্রকাশে কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার এর নাম বিমান বাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে- যা সত্য নয়।উক্ত ঘাঁটির নাম ০২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনে পরিবর্তন করে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার রাখা হয়। যা বর্তমানেও বহাল রয়েছে।  বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের আকাশসীমা রক্ষার পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশের মানুষের কল্যাণে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। দেশের জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।

স্থানীয়রা কি বলছেন-সমিতি পাড়ার বাসিন্দা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সোমবার দুপুরে বিমানবন্দর সম্প্রসারণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য এলাকাবাসীকে অন্যত্রে সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে বিমান বাহিনী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং এলাকাবাসীর প্রতিনিধিদের সাথে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকের সময় নির্ধারণ ছিল। এ লক্ষ্যে বেলা ১২ টার দিকে সমিতি পাড়ার বাসিন্দা জনৈক মোঃ জাহিদ হোসেনসহ আরও কয়েকজন ইজিবাইক ও মোটর সাইকেল যোগে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে আসছিল। তাদের বহনকারি গাড়ীটি ডায়াবেটিক পয়েন্ট এলাকাস্থ বিমান বাহিনীর চেকপোস্টে পৌঁছালে থামানো হয়। এসময় জাহেদ হোসেনের হেলমেট পরা নিয়ে কর্তব্যরত বিমানবাহিনীর সদস্যদের সাথে কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। পরে তাকে বিমান বাহিনীর ঘাটিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে খবর পেয়ে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়।

এসময় এলাকাবাসী জাহেদকে নিয়ে যেতে বাধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।তিনি বলেন, এসময় বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটি ও সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। থেমে থেমে আধা ঘণ্টা ধরে চলা ওই পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। তাতে গুলিবিদ্ধ হন শিহাব কবির নাহিদ। স্থানীয় লোকজন শিহাবকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।১ নম্বর ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, স্থানীয় কুতুবদিয়া পাড়ার জাহেদ নামের মোটরসাইকেল আরোহী এক তরুণের হেলমেট না পরার ঘটনা নিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।কক্সবাজার সদর থানার ওসি মোঃ ইলিয়াস খান বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।

হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহী একজনকে বিমানবাহিনীর তল্লাশিচৌকিতে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।এদিকে সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, এঘটনায় একজন নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনার বিষয়ে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুবক্তগীন মাহমুদ বলেন, দুপুরে হাসপাতালে আনার কয়েক মিনিটের মধ্যে শিহাবের মৃত্যু হয়েছে। আঘাতে তাঁর মাথার পেছনের অংশ (খুলি) উড়ে গেছে। গুলিতে নাকি ইটপাটকেলের আঘাতে মাথায় জখম হয়েছে, তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।উল্লেখ্য কক্সবাজার বিমানবন্দরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়া পাড়াসহ ১৯টি গ্রাম-মহল্লা নিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড। ৭০ হাজার বাসিন্দার ৯০ শতাংশ জলবায়ু উদ্বাস্তু। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি হারিয়ে কুতুবদিয়া, পেকুয়া, মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাসজমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন।

কয়েক বছর ধরে কিছু এলাকায় বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়া লোকজনের জন্য তিন কিলোমিটার দূরে খুরুশকুলে ১৩৭টি পাঁচতলা ভবনের বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। দুই বছর আগে ২০টি ভবনে ৬০০ পরিবারের ঠাঁই হয়েছে। এখন আরও ৮৫টি ভবন প্রস্তুত করা হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি সকালে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে উচ্ছেদ বন্ধের দাবি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

রাজধানীতে গ্রেফতার ১৬৯, মামলা ৫৪

কক্সবাজারে বিমানবাহিনী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে নিহত-১

Update Time : ০২:৪৬:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়া এলাকায় চেকপোস্ট থেকে এক ব্যক্তিকে আটকের জেরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাথে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষনের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত ৬ জন। আহতদের মধ্যে শিহাব কবির নাহিদ (৩০) নামে এক ব্যবসায়ী যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

গত সোমবার বেলা ১২ টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার সমিতি পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়াসহ আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিত নিয়ন্ত্রনে ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও বিমান বাহিনী। এ ঘটনায় একজন নিহত এবং ৬ জন চিকিৎসাধীন থাকার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের পুলিশ বক্সের কর্তব্যরত ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম।নিহত শিহাবের বাবা নাছির উদ্দিন কক্সবাজার পিটিআইয়ের সাবেক সুপার। মা আমেনা খাতুন কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে কয়েক বছর আগে অবসর গ্রহণ করেন। থাকেন সমিতিপাড়ায়। গুলিতে ছেলের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে আমেনা খাতুন বলেন, ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় ছেলে (শিহাব) ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ একটি গুলি মাথায় এসে লাগে।

গুলিতে মাথার খুলি উপড়ে মগজ বেরিয়ে আসে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।পরিবারের পক্ষে বিমান বাহিনীর গুলিতে শিহাবের মৃত্যু হয়েছে দাবি করা হলেও আইএসপিআর বলছে, অভিযোগটি সত্য নয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আইএসপিআর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কক্সবাজারে অবস্থিত বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত সোমবার বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিয়াম স্কুলের পাশে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট হতে একজন স্থানীয় লোকের মটর সাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমান বাহিনীর প্রভোস্ট কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিকেরও বেশি স্থানীয় লোকজন বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাঁধা দেয়।

পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমান বাহিনীর সদস্যদের উপর ইট পাটকেল ছুড়ে। এসময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন যার মধ্যে বিমান বাহিনীর ৪ জন সদস্য (১ জন অফিসার ও ৩ জন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক বিমান বাহিনীর Rules of Engagement অনুযায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়, তবে স্থানীয় জনসাধারণের উপর কোন প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমান বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

স্থানীয় জনগণের ইটপাটকেলের আঘাতে বিমান বাহিনীর গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছিল যা পরবর্তীতে বেশি সম্প্রসারিত হয়নি। এমতাবস্থায়, একটি কুচক্রী মহল বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান বাহিনীর গুলিতে ওই যুবক নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি নয়। এক্ষেত্রে প্রচারিত গুলির খোসার ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, উক্ত খোসাটি ফাঁকা গুলির (Blank Cartridge) যা প্রাণঘাতি নয় এবং শুধুমাত্র শব্দ তৈরি করে। যুবক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।

এছাড়াও লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, উক্ত ঘটনা প্রকাশে কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার এর নাম বিমান বাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে- যা সত্য নয়।উক্ত ঘাঁটির নাম ০২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনে পরিবর্তন করে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার রাখা হয়। যা বর্তমানেও বহাল রয়েছে।  বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের আকাশসীমা রক্ষার পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশের মানুষের কল্যাণে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। দেশের জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।

স্থানীয়রা কি বলছেন-সমিতি পাড়ার বাসিন্দা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সোমবার দুপুরে বিমানবন্দর সম্প্রসারণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য এলাকাবাসীকে অন্যত্রে সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে বিমান বাহিনী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং এলাকাবাসীর প্রতিনিধিদের সাথে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকের সময় নির্ধারণ ছিল। এ লক্ষ্যে বেলা ১২ টার দিকে সমিতি পাড়ার বাসিন্দা জনৈক মোঃ জাহিদ হোসেনসহ আরও কয়েকজন ইজিবাইক ও মোটর সাইকেল যোগে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে আসছিল। তাদের বহনকারি গাড়ীটি ডায়াবেটিক পয়েন্ট এলাকাস্থ বিমান বাহিনীর চেকপোস্টে পৌঁছালে থামানো হয়। এসময় জাহেদ হোসেনের হেলমেট পরা নিয়ে কর্তব্যরত বিমানবাহিনীর সদস্যদের সাথে কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। পরে তাকে বিমান বাহিনীর ঘাটিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে খবর পেয়ে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়।

এসময় এলাকাবাসী জাহেদকে নিয়ে যেতে বাধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।তিনি বলেন, এসময় বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটি ও সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। থেমে থেমে আধা ঘণ্টা ধরে চলা ওই পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। তাতে গুলিবিদ্ধ হন শিহাব কবির নাহিদ। স্থানীয় লোকজন শিহাবকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।১ নম্বর ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, স্থানীয় কুতুবদিয়া পাড়ার জাহেদ নামের মোটরসাইকেল আরোহী এক তরুণের হেলমেট না পরার ঘটনা নিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।কক্সবাজার সদর থানার ওসি মোঃ ইলিয়াস খান বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।

হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহী একজনকে বিমানবাহিনীর তল্লাশিচৌকিতে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।এদিকে সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, এঘটনায় একজন নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনার বিষয়ে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুবক্তগীন মাহমুদ বলেন, দুপুরে হাসপাতালে আনার কয়েক মিনিটের মধ্যে শিহাবের মৃত্যু হয়েছে। আঘাতে তাঁর মাথার পেছনের অংশ (খুলি) উড়ে গেছে। গুলিতে নাকি ইটপাটকেলের আঘাতে মাথায় জখম হয়েছে, তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।উল্লেখ্য কক্সবাজার বিমানবন্দরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়া পাড়াসহ ১৯টি গ্রাম-মহল্লা নিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড। ৭০ হাজার বাসিন্দার ৯০ শতাংশ জলবায়ু উদ্বাস্তু। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি হারিয়ে কুতুবদিয়া, পেকুয়া, মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাসজমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন।

কয়েক বছর ধরে কিছু এলাকায় বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়া লোকজনের জন্য তিন কিলোমিটার দূরে খুরুশকুলে ১৩৭টি পাঁচতলা ভবনের বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। দুই বছর আগে ২০টি ভবনে ৬০০ পরিবারের ঠাঁই হয়েছে। এখন আরও ৮৫টি ভবন প্রস্তুত করা হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি সকালে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে উচ্ছেদ বন্ধের দাবি জানান।