Dhaka ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামের রৌমারীর স্কুলে আছে শিক্ষক নেই শিক্ষার্থী

Exif_JPEG_420

উপজেলার ধনারচর বেশ জনবসতী এলাকা। যোগাযোগ মাধ্যম কিছুটা অবহেলিত। এখানে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কাগজ কলমে ৫৭ জন শিক্ষার্থী  থাকলেও বাস্তবে শন্য। শ্রেণীকক্ষে শুন্য শিক্ষার্থী পাওয়া গেলো হাসেঁর খামারের খাদ্য ও ডিম। তবুও ৪ জন শিক্ষক নিয়মিত বেতন ভাতা তুলছেন। স্কুলের সামনে হাসের খামার। স্কুলের স্টোর রুম ডিমের আড়ত ও ৪ র্থ রুমটি হাসের খাবারের রুম এবং বারান্দায় কারেন্ট জাল রাখার হয়েছে। এমন একটি  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেখা মেলে রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নে। বিদ্যালয়টির নাম ধনারচর সিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির সবগুলো শ্রেনীকক্ষে শিক্ষার্থী শুন্য। বেঞ্চগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। শুধু অফিস কক্ষে ৪ জন শিক্ষককে খোস গল্প ও মোবাইল ফোন টিপতে দেখা গেছে। এই চিত্র প্রতিদিনের কার্য দিবসের।

খোজ নিয়ে জানা যায়, চরাঞ্চল এলাকার শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর ২০১৩ সালে সরকার জাতীয় করন করেন। এরপর থেকে কনো মতো শিক্ষাক্রম চলছিল। পরবর্তীতে চরাঞ্চল থেকে নদী ভাঙ্গনের কারনে নদীর পুর্বপারে স্থানান্তরিত হয়। এখানেও জমিদাতার মালিকের জমিতেই স্কুলটি নির্মিত হয়।

জমিদাতা চাঁন মন্ডল (টিও) মৃত্যুর পর ছেলে চঞ্চল ও মনোয়ার হোসেন রাজু এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক সামছুল আলমের (চাচা ভাতিজা) সাথে পারিবারিক অর্ন্তদন্দ থাকায় যাতে প্রতিষ্ঠানটি অচল হয়ে যায় সে কারনে প্রষ্ঠিানটি উচ্ছেদের হুমকি ও জোরপুর্বক বিদ্যালয়ে হাসের খামারের ডিম ও খাদ্য রাখার ঘর হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন পরিবেশে প্রতিষ্ঠানে এলাকার অভিভাবকগণ তাদের ছেলে মেয়েদেরকে ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাচ্ছেন না। যে কারনে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আছে,নেই শিক্ষার্থী। কাগজে কলমে ৫১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি দেখানো হলেও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী শন্য। এই বিদ্যালয়ে নেই কোন ম্যানেজিং কমিটি। নেই বিদুৎ সংযোগ ও নিরাপত্তা বেষ্টনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছে। শিক্ষক আছে, কাগজ কলমে ৫১ শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী নেই। কয়েক বছর থেকেই চলছে এই প্রতিষ্ঠানের এমন কার্যক্রম।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নাই এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক সামছুল আলম বলেন, প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ। অভিভাবকগণ বিদ্যালয়ে তাদের ছেলে মেয়েদেরকে দিতে চায় না। বর্তমানে বিদ্যালয়ে কাগজ কলমে ৫১ জন শিক্ষার্থী থাকলেও উপস্থিত হয় না। আমরা সকল শিক্ষকগন মিলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে এসেছি, তবুও আসে না।  বিদ্যালয়ের রুম দখল করে হাসের ডিম ও খাবার রাখার ঘর হিসাবে ব্যবহারের কথা জিজ্ঞাস করলে তিনি আরোও বলেন, জমিদাতার ছেলে মনোয়ার হোসেন রাজু জোর পুর্বক রুমের তালা ভেঙ্গে ডিম ও হাসের খাবার রেখেছে। বাধা দিলে আমার উপর চড়াও হয়। আমি ভয়ে কিছুই বলি না। তবে উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার হৃদয় কৃষœ বর্মণকে বলেছি।

পদাধিকার বলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার হৃদয় কৃষœ বর্মণ বলেন, বিদ্যালয়ে নানা সমস্যার কারনে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিত হয়ে থাকে। গত ৬/৭ মাস আগে বিদ্যালয়ে নানা সমস্যার বিষয়ে পরিদশর্নে গিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খাঁন স্যার। তিনি বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা শুনেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মইনুল হোসেন বলেন, আমি নতুন এসেছি, উপজেলার বেশীর ভাগ বিদ্যালয়ে আমি যেতে পারিনি এবং বিদ্যালয়ের বিষয়েও কিছুই জানি না। তবে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার কে হৃদয় কৃষœ বর্মণ বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারঃ) রাসেল দিও বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি দেখতে বলেন এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরামর্শ অনুযায়ী বিষয়টি দেখা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কুড়িগ্রামের রৌমারীর স্কুলে আছে শিক্ষক নেই শিক্ষার্থী

Update Time : ১১:৩৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

উপজেলার ধনারচর বেশ জনবসতী এলাকা। যোগাযোগ মাধ্যম কিছুটা অবহেলিত। এখানে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কাগজ কলমে ৫৭ জন শিক্ষার্থী  থাকলেও বাস্তবে শন্য। শ্রেণীকক্ষে শুন্য শিক্ষার্থী পাওয়া গেলো হাসেঁর খামারের খাদ্য ও ডিম। তবুও ৪ জন শিক্ষক নিয়মিত বেতন ভাতা তুলছেন। স্কুলের সামনে হাসের খামার। স্কুলের স্টোর রুম ডিমের আড়ত ও ৪ র্থ রুমটি হাসের খাবারের রুম এবং বারান্দায় কারেন্ট জাল রাখার হয়েছে। এমন একটি  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেখা মেলে রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নে। বিদ্যালয়টির নাম ধনারচর সিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির সবগুলো শ্রেনীকক্ষে শিক্ষার্থী শুন্য। বেঞ্চগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। শুধু অফিস কক্ষে ৪ জন শিক্ষককে খোস গল্প ও মোবাইল ফোন টিপতে দেখা গেছে। এই চিত্র প্রতিদিনের কার্য দিবসের।

খোজ নিয়ে জানা যায়, চরাঞ্চল এলাকার শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর ২০১৩ সালে সরকার জাতীয় করন করেন। এরপর থেকে কনো মতো শিক্ষাক্রম চলছিল। পরবর্তীতে চরাঞ্চল থেকে নদী ভাঙ্গনের কারনে নদীর পুর্বপারে স্থানান্তরিত হয়। এখানেও জমিদাতার মালিকের জমিতেই স্কুলটি নির্মিত হয়।

জমিদাতা চাঁন মন্ডল (টিও) মৃত্যুর পর ছেলে চঞ্চল ও মনোয়ার হোসেন রাজু এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক সামছুল আলমের (চাচা ভাতিজা) সাথে পারিবারিক অর্ন্তদন্দ থাকায় যাতে প্রতিষ্ঠানটি অচল হয়ে যায় সে কারনে প্রষ্ঠিানটি উচ্ছেদের হুমকি ও জোরপুর্বক বিদ্যালয়ে হাসের খামারের ডিম ও খাদ্য রাখার ঘর হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন পরিবেশে প্রতিষ্ঠানে এলাকার অভিভাবকগণ তাদের ছেলে মেয়েদেরকে ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাচ্ছেন না। যে কারনে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আছে,নেই শিক্ষার্থী। কাগজে কলমে ৫১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি দেখানো হলেও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী শন্য। এই বিদ্যালয়ে নেই কোন ম্যানেজিং কমিটি। নেই বিদুৎ সংযোগ ও নিরাপত্তা বেষ্টনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছে। শিক্ষক আছে, কাগজ কলমে ৫১ শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী নেই। কয়েক বছর থেকেই চলছে এই প্রতিষ্ঠানের এমন কার্যক্রম।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নাই এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক সামছুল আলম বলেন, প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ। অভিভাবকগণ বিদ্যালয়ে তাদের ছেলে মেয়েদেরকে দিতে চায় না। বর্তমানে বিদ্যালয়ে কাগজ কলমে ৫১ জন শিক্ষার্থী থাকলেও উপস্থিত হয় না। আমরা সকল শিক্ষকগন মিলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে এসেছি, তবুও আসে না।  বিদ্যালয়ের রুম দখল করে হাসের ডিম ও খাবার রাখার ঘর হিসাবে ব্যবহারের কথা জিজ্ঞাস করলে তিনি আরোও বলেন, জমিদাতার ছেলে মনোয়ার হোসেন রাজু জোর পুর্বক রুমের তালা ভেঙ্গে ডিম ও হাসের খাবার রেখেছে। বাধা দিলে আমার উপর চড়াও হয়। আমি ভয়ে কিছুই বলি না। তবে উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার হৃদয় কৃষœ বর্মণকে বলেছি।

পদাধিকার বলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার হৃদয় কৃষœ বর্মণ বলেন, বিদ্যালয়ে নানা সমস্যার কারনে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিত হয়ে থাকে। গত ৬/৭ মাস আগে বিদ্যালয়ে নানা সমস্যার বিষয়ে পরিদশর্নে গিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খাঁন স্যার। তিনি বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা শুনেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মইনুল হোসেন বলেন, আমি নতুন এসেছি, উপজেলার বেশীর ভাগ বিদ্যালয়ে আমি যেতে পারিনি এবং বিদ্যালয়ের বিষয়েও কিছুই জানি না। তবে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার কে হৃদয় কৃষœ বর্মণ বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারঃ) রাসেল দিও বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি দেখতে বলেন এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরামর্শ অনুযায়ী বিষয়টি দেখা হবে।