ষাট উর্দ্ধো বৃদ্ধা মনজিলা বেগম। গত কয়েকদিন থেকে শ্বাস কষ্ট আর দুই পায়ের হাঁটুর ব্যাথা নিয়ে এসেছে ডাক্তার দেখাতে। দীর্ঘ লাইনে এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট পেয়েছে। তবে এখনো ডাক্তার দেখানোর অপেক্ষা বসে আছে দেড় ঘন্টার বেশী। জিজ্ঞেস করতেই বলেন, মুই সকাল থেকে বসে আছো ডাক্তার নাই।
ডাক্তার বলে ওপরত (২য় তলার ইনডোর রাউন্ডে) গেছে রুগী দেখবা। এখন তো দুপুর হলো আর কতক্ষণ থাকমু। মোর পাওতো (পা) আরো ব্যাথা ধরলো। এলা হাসাপাতাল না থাকায় ভালো। এমনই তিক্ততার কথা গুলো বলছিলেন উপজেলার বোয়লাদাড় থেকে আসা ওই বৃদ্ধা। মাঝ বয়সী দুই নারী ক্ষিপ্ত হয়ে বলে ডাক্তার মাইছে (মারা গেছে) চল বাড়ি যাই। তাদের মধ্যে একজন জানান, দুই ঘন্টা থেকে বসে আছেন ডাক্তার দেখাতে পারেননি। বাড়িতে ছোট শিশু রেখে এসেছেন বলে জানিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ফিরে যান।
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে ৩১ শয্য বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১০ সালে তা ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।
কিন্তু ৫০ শয্যা হাপাতালের যে সংখ্যক ডাক্তার থাকার কথা সেখানে ৩১ শয্যা হাপাতালের চিকিৎসকও নেই। জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকার কথা ১১ জন সেখানে ২ জন থাকলেও তারা প্রেষণে ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। ১৩ জন মেডিকেল অফিসারের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৫ জন। তাদের মধ্যে দুই জন ডাক্তার প্রেষণে ঢাকায় রয়েছেন। ১ জন ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণে রয়েছেন। শুধুমাত্র দুইজন ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা।
প্রতিদিন এই বহি:বিভাগ ও জরুরী বিভাগে গড়ে ৪৩০ জন চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। নার্স, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট, নৈশ্য প্রহরী, এ্যম্বুলেন্স ড্রাইভারসহ গুরুত্বপূর্ণ ৫৪ জনের পদ ফাঁকা রয়েছে। ফলে দুই লক্ষাধিক অধূষিত এই এলাকার লোকদের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহি:বিভাগে গিয়ে দেখা যায় সেখানে কেন চিকিৎসক নেই একজন স্বাস্থ্য সহকারী রোগী দেখছেন। তিনি জানান, শুধু মাত্র দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের মধ্য একজন প্রশিক্ষণে গেছেন। আরেকজন অফিসিয়াল কাজে ব্যাস্ত আছেন। তাই বাধ্য হয়ে সবধরণের রুগীর সেবা দিতে হচ্ছে।
বহি: বিভাগের ৩ নং রুমে গিয়ে দেখা মেলে ডেন্টাল সার্জন ডা. তন্ময় সরকারের। তিনি মোবাইলে ব্যাস্ত । নেই কোন রুগী। জানতে চাইলে তিনি জানান। এক বছরের বেশী ডেন্টাল চেয়ারটি নষ্ট হয়েছে। তাই কোন চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না।
জরুরী বিভাগে গিয়ে একই চিত্রের দেখা মেলে। সাখানে ও নেই কোন ডাক্তার। মানিক মিয়া নামের এক স্বাস্থ্য সহকারী জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি জানান, কোন চিকিৎসক না থাকায় রুগী ভর্তি করা থেকে শুরু করে সব সেবা দিতে হচ্ছে। দীর্ঘদীন অ্যানেস্থেসিয়া ও সার্জারী ডাক্তার না থাকায় অপারেশন থিয়েটরটি ব্যাবহার করা হচ্ছে স্টোর রুম হিসেবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক স্বাস্থ্য সহকারী জানান, এখানে তেমন কোন প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার নেই। ফলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার সুযোগ নেই। কোন ডাক্তার আসলেও বেশীদিন থাকেনা। তারা উপর মহলে তদবির করে অন্যত্র বদলি হন।
জরুরী বিভাগে সেবা নিতে আসা ফেরদৌস রহমান জানান, তার বৃদ্ধ বাবা হঠাৎ বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করায় জরুরী বিভাগে নিয়ে এসেছেন। সেখানে স্বাস্থ্য সহকারী চিকিৎসা দিচ্ছেন।
তাদের চিকিৎসা ভূল হতে পারে ভেবে সেখানে চিকিৎসা না নিয়ে রুগীকে পার্শ্ববর্তী জয়পুর হাট হাসপাতালে নিচ্ছেন।এ ব্যাপারে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ইলতুতমীশ আকন্দ পিন্টু জানান, হাসপাতালের ডাক্তার সংকটসহ সব ধরণের সমস্যাগুলো উদ্ধর্তন কর্তপক্ষকে nজাননো হয়েছে। আশা করছি অচিরেই সমস্যাগুলো সমাধান হবে।