Dhaka ০৬:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জে চোরাচালান বাণিজ্য জমজমাট: ১৭ লক্ষ টাকার মালামাল জব্দ

সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা সীমান্তে আবারো জমজমাট হয়ে উঠেছে চোরাচালান বাণিজ্য। সোর্স পরিচয়ধারীরা সীমান্ত চোরাকারবারীদের নিয়ে সিন্ডিকেডের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে কোটিকোটি টাকার বিভিন্ন মালামালসহ মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র পাচাঁর করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আর এই চোরাচালান করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। তারপরও সীমান্ত এলাকায় জোড়ালো কোন অভিযানের খবর পাওয়া যায় না। তাই র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ রবিবার (২রা মার্চ) ভোর ৬টা থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদী ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারত থেকে শতশত লোক দিয়ে ওপেন কয়লা ও পাথর পাচাঁর করাসহ বিজিবি ক্যাম্পের ২শ গজ দক্ষিণ দিক থেকে জাদুকাটা নদীর তীর কেটে ২০-৩০টা পিকআপ ও মাহিন্দ্র গাড়ি বোঝাই করে বালি পাচাঁর শুরু করে স্থানীয় চিহ্নিত প্রভাবশালী চোরাকারবারীরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই চোরাচালান বাণিজ্য ওপেন চললেও নেওয়া হয়না কোন পদক্ষেপ। অন্যদিকে সন্ধ্যার সাথে সাথে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের রাজাই, কড়ইগড়া ও বারেকটিলার আনন্দপুর, বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে শুরু হয় মদ, গাজা, ইয়াবা, অস্ত্র, ফুছকা, চিনি, জিরা, কম্বল, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, গরু ও ঘোড়া পাচাঁর। গত ৭দিনে এই সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১০কোটি টাকার মালামাল পাচাঁরের খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে- সোর্স পরিচয়ধারীরা বিজিবির নাম ভাংগিয়ে পাচাঁরকৃত প্রতিবস্তা ফুছকা থেকে ১৫০টাকা, চিনি ১শ টাকা, গরু ১হাজার টাকা, ঘোড়া ১৫শ টাকা, প্রতি খাচা বিড়ি ১হাজার টাকা, প্রতি প্যাকেট জিরা ১শসহ অন্যান্য মালামাল থেকে চুক্তি ভিত্তিক চাঁদা উত্তোলন করে। একই ভাবে থানা-পুলিশের নাম ভাংগিয়েও চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স পরিচয়ধারীরা। তারপরও নেওয়া হয়না জোড়ালো কোন পদক্ষেপ। একই ভাবে সোর্সরা চাঁদা নিয়ে লাউড়গড় সীমান্তের সাহিদাবাদ বর্ডার বাজার ও জাদুকাটা নদী পথে বারকি নৌকা দিয়ে রাতভর ভারত থেকে কয়লা ও পাথরসহ ফুছকা, চিনি, মদ পাচাঁর করছে। এদিকে পাশের টেকেরঘাট ও বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা, টেকেরঘাট উচ্চ বিদ্যালয় ও পুলিশ ফাঁড়ির পিছন দিয়েসহ নিলাদ্রী লেকপাড়, বড়ছড়া, বুরুঙ্গাছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে কয়লা ও মদ পাচাঁর শুরু হয় চলে গভীর রাত পর্যন্ত। পাচাঁরকৃত প্রতিবস্তা কয়লা থেকে সোর্স পরিচয়ধারীরা বিজিবির নাম ভাংগিয়ে ১শ টাকা, পুলিশ ৫০টাকাসহ সর্বমোট ২২০টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করে। অন্যদিকে চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে কয়লা পাচাঁর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও এই সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, জঙ্গলবাড়িসহ পাশের বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন ও কচুয়াছড়া এলাকা দিয়ে মদ, চিনি, ফুছকা, সুপারী ও মাছ পাচাঁর করাসহ মধ্যনগর সীমান্তের বাঙ্গালভিটা ও মাটিরাবন সীমান্ত দিয়ে অবাধে গরু, চিনি ও কসমেটিকস পাচাঁর করা হচ্ছে। এছাড়াও বিশ^ম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদর ও দোয়ারাবাজার সীমান্তে চলছে চোরাকারবারীদের রামজরাজত্ব।

তবে গত শনিবার (১লা মার্চ) ভোর রাতে জেলার একাধিক উপজেলা সীমান্তে পৃথক অভিযান চালিয়ে অবৈধ পথে আসা ভারতীয় পান, সুপারী, চিনি, গরু, কয়লা, বিড়ি, মোটর সাইকেল ও সিএনজিসহ প্রায় ১৭ লক্ষাধিক টাকার মালামাল জব্দ করেছে বিজিবি। কিন্তু সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীদের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্ণেল একেএম জাকারিয়া কাদির পিএসসি সাংবাদিকদের জানান- উর্ধ্বতন সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির অভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বতোভাবে অব্যাহত রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

মোংলায় বিদেশী জাহাজে চুরির প্রস্তুতির সময় অস্ত্রসহ পাঁচ জন কে আটক করেছে কোস্টগার্ড

সুনামগঞ্জে চোরাচালান বাণিজ্য জমজমাট: ১৭ লক্ষ টাকার মালামাল জব্দ

Update Time : ০৪:৩৭:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫

সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা সীমান্তে আবারো জমজমাট হয়ে উঠেছে চোরাচালান বাণিজ্য। সোর্স পরিচয়ধারীরা সীমান্ত চোরাকারবারীদের নিয়ে সিন্ডিকেডের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে কোটিকোটি টাকার বিভিন্ন মালামালসহ মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র পাচাঁর করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আর এই চোরাচালান করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। তারপরও সীমান্ত এলাকায় জোড়ালো কোন অভিযানের খবর পাওয়া যায় না। তাই র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ রবিবার (২রা মার্চ) ভোর ৬টা থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদী ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারত থেকে শতশত লোক দিয়ে ওপেন কয়লা ও পাথর পাচাঁর করাসহ বিজিবি ক্যাম্পের ২শ গজ দক্ষিণ দিক থেকে জাদুকাটা নদীর তীর কেটে ২০-৩০টা পিকআপ ও মাহিন্দ্র গাড়ি বোঝাই করে বালি পাচাঁর শুরু করে স্থানীয় চিহ্নিত প্রভাবশালী চোরাকারবারীরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই চোরাচালান বাণিজ্য ওপেন চললেও নেওয়া হয়না কোন পদক্ষেপ। অন্যদিকে সন্ধ্যার সাথে সাথে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের রাজাই, কড়ইগড়া ও বারেকটিলার আনন্দপুর, বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে শুরু হয় মদ, গাজা, ইয়াবা, অস্ত্র, ফুছকা, চিনি, জিরা, কম্বল, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, গরু ও ঘোড়া পাচাঁর। গত ৭দিনে এই সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১০কোটি টাকার মালামাল পাচাঁরের খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে- সোর্স পরিচয়ধারীরা বিজিবির নাম ভাংগিয়ে পাচাঁরকৃত প্রতিবস্তা ফুছকা থেকে ১৫০টাকা, চিনি ১শ টাকা, গরু ১হাজার টাকা, ঘোড়া ১৫শ টাকা, প্রতি খাচা বিড়ি ১হাজার টাকা, প্রতি প্যাকেট জিরা ১শসহ অন্যান্য মালামাল থেকে চুক্তি ভিত্তিক চাঁদা উত্তোলন করে। একই ভাবে থানা-পুলিশের নাম ভাংগিয়েও চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স পরিচয়ধারীরা। তারপরও নেওয়া হয়না জোড়ালো কোন পদক্ষেপ। একই ভাবে সোর্সরা চাঁদা নিয়ে লাউড়গড় সীমান্তের সাহিদাবাদ বর্ডার বাজার ও জাদুকাটা নদী পথে বারকি নৌকা দিয়ে রাতভর ভারত থেকে কয়লা ও পাথরসহ ফুছকা, চিনি, মদ পাচাঁর করছে। এদিকে পাশের টেকেরঘাট ও বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা, টেকেরঘাট উচ্চ বিদ্যালয় ও পুলিশ ফাঁড়ির পিছন দিয়েসহ নিলাদ্রী লেকপাড়, বড়ছড়া, বুরুঙ্গাছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে কয়লা ও মদ পাচাঁর শুরু হয় চলে গভীর রাত পর্যন্ত। পাচাঁরকৃত প্রতিবস্তা কয়লা থেকে সোর্স পরিচয়ধারীরা বিজিবির নাম ভাংগিয়ে ১শ টাকা, পুলিশ ৫০টাকাসহ সর্বমোট ২২০টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করে। অন্যদিকে চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে কয়লা পাচাঁর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও এই সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, জঙ্গলবাড়িসহ পাশের বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন ও কচুয়াছড়া এলাকা দিয়ে মদ, চিনি, ফুছকা, সুপারী ও মাছ পাচাঁর করাসহ মধ্যনগর সীমান্তের বাঙ্গালভিটা ও মাটিরাবন সীমান্ত দিয়ে অবাধে গরু, চিনি ও কসমেটিকস পাচাঁর করা হচ্ছে। এছাড়াও বিশ^ম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদর ও দোয়ারাবাজার সীমান্তে চলছে চোরাকারবারীদের রামজরাজত্ব।

তবে গত শনিবার (১লা মার্চ) ভোর রাতে জেলার একাধিক উপজেলা সীমান্তে পৃথক অভিযান চালিয়ে অবৈধ পথে আসা ভারতীয় পান, সুপারী, চিনি, গরু, কয়লা, বিড়ি, মোটর সাইকেল ও সিএনজিসহ প্রায় ১৭ লক্ষাধিক টাকার মালামাল জব্দ করেছে বিজিবি। কিন্তু সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীদের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্ণেল একেএম জাকারিয়া কাদির পিএসসি সাংবাদিকদের জানান- উর্ধ্বতন সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির অভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বতোভাবে অব্যাহত রয়েছে।