নওগাঁর মহাদেবপুরে আত্রাই নদীর বালুমহালের সবকটি পয়েন্ট নিয়ম ভেঙ্গে সাব লিজ নিয়ে অবৈধ খননযন্ত্র বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ বালু। বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট হলেও প্রশাসন লিজ বাতিলের কোনই উদ্যোগ নেয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলা ১৪৩১ সনের জন্য মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর বালুমহালের উজান অংশের সাতটি মৌজার লিজ দেয়া হয় নওগাঁ সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রফিকের স্ত্রী মালেকা পারভীনকে এবং ভাটি অংশের দুটি মৌজার লিজ দেয়া হয় রাণীনগরের আওয়ামী লীগ নেতা সায়েম উদ্দিনকে। গতবছর ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর এরা এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। এই সুযোগে তাদের দোসররা রাতারাতি এসব বালুচর দখল করে নিজেরাই বালু উত্তোলন শুরু করে। তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করেছেন। এক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় বালুচরে কাজ করা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। নিয়মানুযায়ী ইজারাদারদের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি কখনো। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন নব্য বালু উত্তোলনকারী রাঘব বোয়ালরা।
প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের পর বালু উত্তোলনকারীরা গোপনে লিজ গ্রহিতাদের কাছ থেকে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করে বিভিন্ন পয়েন্ট সাব লিজ নেন। এটিকে তারা তাদের বালু উত্তোলনের বৈধতার সার্টিফিকেট হিসেবে দেখান। গতবছর ২৬ আগস্ট সম্পাদিত এরুপ একটি চুক্তিনামায় দেখা যায়, ‘মহাদেবপুর বালুমহালের বালু উত্তোলন ও বিক্রয়ের অঙ্গীকার নামা’ শিরোনামে লিজ গ্রহিতা মালেকা পারভীনের পক্ষে তার স্বামী রফিকুল ইসলাম রফিক মহাদেবপুর উপজেলার দেওয়ানপুর গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল জলিল ও মৃত নইমুদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের নামে নুরপুর, দেওয়ানপুর আত্রাই নদীর পশ্চিম পার্শ্বে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেন। এজন্য জামানত হিসেবে নেয়া হয় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আত্রাই নদীর উজান ও ভাটি অংশের বিভিন্ন পয়েন্ট অন্তত: ২০ জনকে অনুরুপ সাব লিজ দেয়া হয়েছে। তবে তারা বিষয়টি গোপন রেখে বালু উত্তোলন করছেন। এসব পয়েন্ট কাগজে কলমে মালেকা পারভীন ও সায়েম উদ্দিনের নামে লিজ দেয়া থাকায় প্রশাসন বৈধ বালু উত্তোলনে বাধা সৃষ্টি করেননি। কিন্তু মূল লিজ গ্রহিতারা বা তার কর্মচারিরা কেউ কখনো কোন পয়েন্টে উপস্থিত থাকেন না। নতুন যারা বালু উত্তোলন করছেন তারা কি মূলে বালু উত্তোলন করছেন সে বিষয়ে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেননি। তারা ইজারার শর্ত ভেঙ্গে দিন রাত ২৪ ঘন্টা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে, অবৈধ শক্তিশালী খননযন্ত্র বসিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করছে। সর্বোপরি নিয়ম ভেঙ্গে সাব লিজ দেয়া হয়েছে জন্য স্থানীয়রা ইজারা বাতিলের দাবি জানান। আগামী ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এই লিজের মেয়াদ রয়েছে।এছাড়া
ধামইরহাট,সাপাহার,পত্নীতলা ও মহাদেবপুরের জনগুরুত্বপূর্ণ সহজলভ্য ও কম দূরত্বে হবার কারণে মহাদেবপুর- পাটাকাঠা মান্দা ফেরিঘাট সড়ক হয়ে মান্দাসহ রাজশাহীতে সহজে মানুষ জন চলাচল করে থাকেন। কিন্তু বালুখোরদের কারণে প্রতিদিন এসব পয়েন্টে ড্রাম ট্রাক,ও ট্রাকটরে করে বালু নিয়ে যাবার সময় মানুষের পথ চলাচলেও দারুণ বিঘ্ন ঘটে। সড়কের ওপর ব্যাপক চাপ পড়ে ইতিমধ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সামনের বর্ষা মৌসুমে গর্ত সৃষ্টি হয়ে এ সড়কে ভোগান্তি ও দুর্ঘটনার শিকার হতে চলেছে মানুষজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা সাংবাদিকদের জানান, সাব লিজ দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ হলে লিজ গ্রহিতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।