Dhaka ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জের জাদুকাটা নদীতে চলছে মহাতান্ডব: সংঘর্ষে আহত ১০

সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী জাদুকাটায় চলছে মহাতান্ডব। এই নদী দুই তীর কেটে একদিকে বিক্রি করা হচ্ছে বালি, অন্যদিকে নদী দিয়ে পাচাঁর করা হচ্ছে কোটিকোটি টাকার কয়লা ও পাথরসহ মাদকদ্রব্য। নদীর তীর কাটার ফলে ভাংগনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েগেছে শতশত একর ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। নিঃস্ব হয়েছে সহশ্রাধিক পরিবার। দীর্ঘদিন যাবত এই অবৈধ কর্মকান্ডের মহাতান্ডব চললেও দেখার কেউ নাই। ফলে সংঘর্ষের ঘটনাসহ বেড়েই চলেছে মৃত্যুর ঘটনা। তাই র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার (৪ঠা মার্চ) ভোর ৬টা থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্পের ২শ গজ দক্ষিণ দিক থেকে জাদুকাটা নদী তীর কেটে ২০-৩০টা মাহিন্দ্র লড়ি গাড়ি বোঝাই করে বালি বিক্রি শুরু করে এলাকার চিহ্নিত চোরাকারবারীরা। তারা প্রায় ২মাস যাবত জাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালি বিক্রি করাসহ দীর্ঘদিন যাবত সীমান্তের ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন জাদুকাটা নদী ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারত থেকে শতশত লোক দিয়ে প্রতিদিন ওপেন কয়েক হাজার মেঃটন পাথর ও কয়লাসহ মাদক পাচাঁর বাণিজ্য জমজমাট ভাবে চালিয়ে গেলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। অন্যদিকে মাদক ও বিস্ফোরক মামলার আসামী সীমান্ত গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার সহযোগী একাধিক মামলার আসামী বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রানু মিয়াগং দীর্ঘদিন যাবত জাদুকাটা নদীর তীর কেটে অবৈধ ভাবে বালি বিক্রি করাসহ গভীর কোয়ারী (মৃত্যুকূপ) তৈরি করে পাথর বিক্রি করে হয়েগেছে রাতারাতি কোটিপতি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলে তাদের তান্ডব বন্ধ না হয়ে বরং আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়। গত সরকারের আমলে জাদুকাটা নদী দিয়ে কয়লা পাচাঁর নিয়ে লাউড়গড়ে বিজিবির সাথে রফিকুল ও বিল্লালগংদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। অন্যদিকে জাদুকাটা নদীর তীর কাটা নিয়ে প্রতিবাদ করায় তোতলা আজাদ ও রানু বাহিনীর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক লোকের মৃত্যু হওয়াসহ গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয় জাতীয় দৈনিক পত্রিকার এক স্থানীয় সাংবাদকর্মীকে। এছাড়াও জাদুকাটা নদীতে প্রতিদিন চলছে কয়েক হাজার অবৈধ সেইভ মেশিন। পরিবেশ নষ্ঠকারী সেইভ ও ড্রেজারের কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। কিন্তু এসব অবৈধ কর্মকান্ড দেখার কেউ নাই।

জানাগেছে- প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার (৩রা মার্চ) সকাল ৭টায় লাউড়গড় সীমান্তের ঘাগটিয়া গ্রামের বাঁশ বাগানের পূর্ব পাশেসহ আরো একাধিক স্থানে একযোগে জাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালি উত্তোলন শুরু করে একাধিক মামলার জেলখাটা আসামী রানু মেম্বার ও তোতলা আজাদ বাহিনী। ওই সময় গড়কাটি গ্রামের আশরাফ তালুকদার তার লোকজন নিয়ে নদীর তীরবর্তী জায়গার মালিক দাবী করে বাঁধা দেয়। এঘটনার জের ধরে দুই গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের ১০জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এব্যাপারে লাউড়গড়, বিন্নাকুলী ও ঘাগটিয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকরা বলেন- জাদুকাটা নদীর অবৈধ তান্ডবের কারণে সহশ্রাধিক পরিবার তাদের বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে অন্যত্র চলেগেছে। এই নদী দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথরসহ মাদক চোরাচালান করতে গিয়ে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে ও তাদের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। অবৈধ ভাবে নদী তীর কাটা নিয়ে সংঘর্ষে একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।

সংঘর্ষের ঘটনার ব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান- জাদুকাটা নদীতে তীর কেটে বালি উত্তোলন নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সুনামগঞ্জের জাদুকাটা নদীতে চলছে মহাতান্ডব: সংঘর্ষে আহত ১০

Update Time : ০৯:৪৩:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী জাদুকাটায় চলছে মহাতান্ডব। এই নদী দুই তীর কেটে একদিকে বিক্রি করা হচ্ছে বালি, অন্যদিকে নদী দিয়ে পাচাঁর করা হচ্ছে কোটিকোটি টাকার কয়লা ও পাথরসহ মাদকদ্রব্য। নদীর তীর কাটার ফলে ভাংগনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েগেছে শতশত একর ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। নিঃস্ব হয়েছে সহশ্রাধিক পরিবার। দীর্ঘদিন যাবত এই অবৈধ কর্মকান্ডের মহাতান্ডব চললেও দেখার কেউ নাই। ফলে সংঘর্ষের ঘটনাসহ বেড়েই চলেছে মৃত্যুর ঘটনা। তাই র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার (৪ঠা মার্চ) ভোর ৬টা থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্পের ২শ গজ দক্ষিণ দিক থেকে জাদুকাটা নদী তীর কেটে ২০-৩০টা মাহিন্দ্র লড়ি গাড়ি বোঝাই করে বালি বিক্রি শুরু করে এলাকার চিহ্নিত চোরাকারবারীরা। তারা প্রায় ২মাস যাবত জাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালি বিক্রি করাসহ দীর্ঘদিন যাবত সীমান্তের ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন জাদুকাটা নদী ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারত থেকে শতশত লোক দিয়ে প্রতিদিন ওপেন কয়েক হাজার মেঃটন পাথর ও কয়লাসহ মাদক পাচাঁর বাণিজ্য জমজমাট ভাবে চালিয়ে গেলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। অন্যদিকে মাদক ও বিস্ফোরক মামলার আসামী সীমান্ত গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার সহযোগী একাধিক মামলার আসামী বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রানু মিয়াগং দীর্ঘদিন যাবত জাদুকাটা নদীর তীর কেটে অবৈধ ভাবে বালি বিক্রি করাসহ গভীর কোয়ারী (মৃত্যুকূপ) তৈরি করে পাথর বিক্রি করে হয়েগেছে রাতারাতি কোটিপতি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলে তাদের তান্ডব বন্ধ না হয়ে বরং আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়। গত সরকারের আমলে জাদুকাটা নদী দিয়ে কয়লা পাচাঁর নিয়ে লাউড়গড়ে বিজিবির সাথে রফিকুল ও বিল্লালগংদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। অন্যদিকে জাদুকাটা নদীর তীর কাটা নিয়ে প্রতিবাদ করায় তোতলা আজাদ ও রানু বাহিনীর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক লোকের মৃত্যু হওয়াসহ গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয় জাতীয় দৈনিক পত্রিকার এক স্থানীয় সাংবাদকর্মীকে। এছাড়াও জাদুকাটা নদীতে প্রতিদিন চলছে কয়েক হাজার অবৈধ সেইভ মেশিন। পরিবেশ নষ্ঠকারী সেইভ ও ড্রেজারের কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। কিন্তু এসব অবৈধ কর্মকান্ড দেখার কেউ নাই।

জানাগেছে- প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার (৩রা মার্চ) সকাল ৭টায় লাউড়গড় সীমান্তের ঘাগটিয়া গ্রামের বাঁশ বাগানের পূর্ব পাশেসহ আরো একাধিক স্থানে একযোগে জাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালি উত্তোলন শুরু করে একাধিক মামলার জেলখাটা আসামী রানু মেম্বার ও তোতলা আজাদ বাহিনী। ওই সময় গড়কাটি গ্রামের আশরাফ তালুকদার তার লোকজন নিয়ে নদীর তীরবর্তী জায়গার মালিক দাবী করে বাঁধা দেয়। এঘটনার জের ধরে দুই গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের ১০জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এব্যাপারে লাউড়গড়, বিন্নাকুলী ও ঘাগটিয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকরা বলেন- জাদুকাটা নদীর অবৈধ তান্ডবের কারণে সহশ্রাধিক পরিবার তাদের বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে অন্যত্র চলেগেছে। এই নদী দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথরসহ মাদক চোরাচালান করতে গিয়ে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে ও তাদের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। অবৈধ ভাবে নদী তীর কাটা নিয়ে সংঘর্ষে একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।

সংঘর্ষের ঘটনার ব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান- জাদুকাটা নদীতে তীর কেটে বালি উত্তোলন নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।