Dhaka ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিরাজগঞ্জে ৪ বছরেও শেষ হয়নি ৭ কোটি টাকার ব্রীজ ॥ চরম দূর্ভোগে ২৫ গ্রামের মানুষ

সিরাজগঞ্জ শহরের বাহিরগোলা বাজারে কাঁটাখালি নদীর উপর নির্মাণাধীন ব্রীজের কাজ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে শহরবাসী। গত বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ করার কথা থাকলেও ব্রীজটি নির্মাণ কাজ সম্পর্ন্ন না হওয়ায় ফেরৎ চলে গেছে প্রকল্পের সব টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে পালিয়েছে মইনউদ্দিন (বাশি) লিমিটেড নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান । তবে নতুন করে কোন প্রকল্পে যোগ করার সুযোগ নেই এই ব্রিজটি। জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি না থাকায় চরম দূর্ভোগে ২৫ গ্রামের মানুষ। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রীজটির কাজ না হলে আগামি বর্ষা মৌসুমে চরম দূভোগে পোহাতে হবে ২৫ গ্রামের মানুষের। এদিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন, ২০২৬ সালে নতুন করে প্রকল্পের চাহিদা দেয়া হবে। এরপর বরাদ্দ পেলে তবেই কাজ শুরু হবে।

জানা যায়,বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরে “৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়) (২য় সংশোধিত)” প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা কাজের সিরাজগঞ্জ শহরের বাহিরগোলা বাজারে কাঁটাখালি নদীর উপর নির্মাণাধীন ব্রীজটির কাজ ২০২১ সালে আগষ্ট মাসে শুরু করা হয়। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে যশোরের মো. মইনউদ্দিন (বাশি) লি. ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৮ আগষ্ট থেকে কাজ শুরু করেন । ৭ কোটি ২৮ লাখ ২ হাজার টাকা ব্যায়ে ব্রীজটি ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা থাকে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে অর্ধেক কাজ করে ব্রীজের কাজ বন্ধ করেদেয় ঠিকাদার। তখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার বিল প্রদান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী গত বছরের ৩০ জুন কাজটি সমাপ্তির হওয়ার কথা ছিলো। যথা সময় ঠিকাদার কাজ না করায় ফেরৎ চলে যায় প্রকল্পের  অবশিষ্ট ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। নতুন করে আর কোন টাকা আসার সম্ভাবনা নেই এই ব্রীজের কাজে। ফলে এই ব্রীজের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় ২৫ গ্রামের মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল সোবাহান সরকার বলেন,২০২১ সালে কাজটি শুরু হলেও ঠিকাদার প্রথম থেকে খুব ধীরগতিতে কাজ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন তদারকি করেননি।  কাজটি জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তা না হয়ে কাজটি বর্তমানে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। যার কারণে নতুন

ভাঙ্গাবাড়ি,জানপুর,রানীগ্রাম,খোকশাবাড়ি,ছোনগাছা,পাঁচঠাকুরী,কাজীপুরসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। আরেক বাসিন্দা আলী আশরাফ বলেন,ব্রীজটি সম্পূর্ন্ন না হওয়াতে এলাকার নারী,পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকদিন যাবত চরম দূর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। অনেক গর্ভবতী মহিলাদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে নানা অসুবিধা পড়তে হয়। এদিকে ব্রীজের অর্ধেক কাজ করে ঠিকাদার পালিয়েছে যার কারণে হাঁটা চলা করতে আরো অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। মুলত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, রেলওয়ের ব্রিজটি অনেক পুরোনো। স্থানীয়দের যাতায়তের সুবিধার জন্য পাশেই আরেকটি নতুন সংযোগ ব্রীজ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০২১ সালে ব্রীজটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। গত জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা ছিলো কিন্তু তা আর হয়নি। এরপর থেকে ঠিকাদারদের কোনো লোকজন সেখানে কাজ করতে দেখছি না। কবে কাজ শেষ হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।তাই এ বিষয়ে উর্দ্ধতন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

অপরদিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোখলেসুর রহমান বলেন,কাজ শেষ করতে না পারায় ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মইনউদ্দিন (বাশি) লিমেটেড। তবে এই কাজটি শেষ করতে  রাজস্ব খাতে চাহিদা দিয়েছি বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু করা হবে। তবে কত দিনে এই বরাদ্দ আসবে তা সঠিক বলতে পারছি না। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করতে পারবো বলে জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার মধ্যে এমন একটি গুরুত্বপুর্ন সেতুর কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার করনে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সচেতন মহল মরে করেন দ্রুততার সাথে কাজটি পুনরায় শুরু করে মানুষের কষ্ট লাঘব করতে বর্তমান সরকার পদক্ষেপ নেবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

গোপালগঞ্জে কারফিউ চলবে

সিরাজগঞ্জে ৪ বছরেও শেষ হয়নি ৭ কোটি টাকার ব্রীজ ॥ চরম দূর্ভোগে ২৫ গ্রামের মানুষ

জন দেখেছেন : ০৪:২০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

সিরাজগঞ্জ শহরের বাহিরগোলা বাজারে কাঁটাখালি নদীর উপর নির্মাণাধীন ব্রীজের কাজ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে শহরবাসী। গত বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ করার কথা থাকলেও ব্রীজটি নির্মাণ কাজ সম্পর্ন্ন না হওয়ায় ফেরৎ চলে গেছে প্রকল্পের সব টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে পালিয়েছে মইনউদ্দিন (বাশি) লিমিটেড নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান । তবে নতুন করে কোন প্রকল্পে যোগ করার সুযোগ নেই এই ব্রিজটি। জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি না থাকায় চরম দূর্ভোগে ২৫ গ্রামের মানুষ। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রীজটির কাজ না হলে আগামি বর্ষা মৌসুমে চরম দূভোগে পোহাতে হবে ২৫ গ্রামের মানুষের। এদিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন, ২০২৬ সালে নতুন করে প্রকল্পের চাহিদা দেয়া হবে। এরপর বরাদ্দ পেলে তবেই কাজ শুরু হবে।

জানা যায়,বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরে “৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়) (২য় সংশোধিত)” প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা কাজের সিরাজগঞ্জ শহরের বাহিরগোলা বাজারে কাঁটাখালি নদীর উপর নির্মাণাধীন ব্রীজটির কাজ ২০২১ সালে আগষ্ট মাসে শুরু করা হয়। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে যশোরের মো. মইনউদ্দিন (বাশি) লি. ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৮ আগষ্ট থেকে কাজ শুরু করেন । ৭ কোটি ২৮ লাখ ২ হাজার টাকা ব্যায়ে ব্রীজটি ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা থাকে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে অর্ধেক কাজ করে ব্রীজের কাজ বন্ধ করেদেয় ঠিকাদার। তখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার বিল প্রদান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী গত বছরের ৩০ জুন কাজটি সমাপ্তির হওয়ার কথা ছিলো। যথা সময় ঠিকাদার কাজ না করায় ফেরৎ চলে যায় প্রকল্পের  অবশিষ্ট ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। নতুন করে আর কোন টাকা আসার সম্ভাবনা নেই এই ব্রীজের কাজে। ফলে এই ব্রীজের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় ২৫ গ্রামের মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল সোবাহান সরকার বলেন,২০২১ সালে কাজটি শুরু হলেও ঠিকাদার প্রথম থেকে খুব ধীরগতিতে কাজ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন তদারকি করেননি।  কাজটি জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তা না হয়ে কাজটি বর্তমানে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। যার কারণে নতুন

ভাঙ্গাবাড়ি,জানপুর,রানীগ্রাম,খোকশাবাড়ি,ছোনগাছা,পাঁচঠাকুরী,কাজীপুরসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। আরেক বাসিন্দা আলী আশরাফ বলেন,ব্রীজটি সম্পূর্ন্ন না হওয়াতে এলাকার নারী,পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকদিন যাবত চরম দূর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। অনেক গর্ভবতী মহিলাদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে নানা অসুবিধা পড়তে হয়। এদিকে ব্রীজের অর্ধেক কাজ করে ঠিকাদার পালিয়েছে যার কারণে হাঁটা চলা করতে আরো অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। মুলত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, রেলওয়ের ব্রিজটি অনেক পুরোনো। স্থানীয়দের যাতায়তের সুবিধার জন্য পাশেই আরেকটি নতুন সংযোগ ব্রীজ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০২১ সালে ব্রীজটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। গত জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা ছিলো কিন্তু তা আর হয়নি। এরপর থেকে ঠিকাদারদের কোনো লোকজন সেখানে কাজ করতে দেখছি না। কবে কাজ শেষ হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।তাই এ বিষয়ে উর্দ্ধতন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

অপরদিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোখলেসুর রহমান বলেন,কাজ শেষ করতে না পারায় ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মইনউদ্দিন (বাশি) লিমেটেড। তবে এই কাজটি শেষ করতে  রাজস্ব খাতে চাহিদা দিয়েছি বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু করা হবে। তবে কত দিনে এই বরাদ্দ আসবে তা সঠিক বলতে পারছি না। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করতে পারবো বলে জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার মধ্যে এমন একটি গুরুত্বপুর্ন সেতুর কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার করনে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সচেতন মহল মরে করেন দ্রুততার সাথে কাজটি পুনরায় শুরু করে মানুষের কষ্ট লাঘব করতে বর্তমান সরকার পদক্ষেপ নেবে।