Dhaka ১১:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তানোরে বিলে মাছ ধরা উৎসব

????????????

পলো বাওয়া বা পলো দিয়ে দলবদ্ধভাবে মাছ ধরা বাংলার প্রাচীন এক ঐতিহ্য। বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঝাঁপিকেই বলা হয় পলো। আর পলো বাওয়া উৎসবের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে দলবেঁধে পলো নিয়ে মাছ ধরা। একটা সময় মৌসুম এলেই সৌখিন মাছ শিকারিরা নদী নালার পানিতে দলবেঁধে নেমে পড়তেন মাছ শিকারে। নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিন তারিখ ঠিক করে পর্যায়ক্রমে ছোট ছোট সব নদী ও বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে শিকার করা হতো ছোট বড় মাছ। শুকনো জলাশয়ে প্রতি বছরের মাঘ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে সৌখিন মাছ শিকারিদের এই পলো বাওয়া উৎসব।

দখল, দুষণ ও ভরাটসহ নদীর অস্থিত সংকটের কারণে এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব। প্রতি বছর ন্যায় শীত মওসুমে রাজশাহীর তানোর-মোহনপুর উপজেলা সীমান্তঘেঁসে বয়ে যাওয়া শীবনদী ও বারনই নদীর পানি কমতে শুরু করলে বিভিন্ন গ্রামের মুরুব্বীয়ানদের পরামর্শক্রমে আজ শুক্রবার ৭ মার্চ সকালে শীবনদীর বিলকুমারী বিলে, বুরুজ খালে ও কালিগঞ্জ খাল পর্যন্ত কয়েকটি গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ পলো, জাল ও দড়িসহ মাছ শিকারের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে শীবনদীতে হাজির হন। মাছ শিকার উৎসব দেখা উপলক্ষে আশপাশের লোকজনের উপস্থিতি বিরাজ করে উৎসবমূখর পরিবেশ।

শিকারীদের অনেকেই বোয়াল ও শোলসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরেন। পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক ঝাপ দেওয়া আর হৈহুল্লোর করে সামনের দিকে ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। মাছ শিকার উৎসবে পলো ছাড়াও ফার জাল, ছিটকি জাল, ঝাকি জাল ও পেলুন ইত্যাদি দিয়েও মাছ শিকার করেন অনেকে। পলোসহ দেশীয় উপকরণ দিয়ে মাছ শিকার করলে যেমন খরচ কম তেমনি মাছের হয় না বংশ বিনাশ।

রাজশাহী জেলার শীবনদীতে মাছ শিকারের জন্য পলোর ব্যবহার হয়ে আসছে বহু পুরনোকাল থেকে। বাঁশের তৈরি এই পলো মাছ শিকারসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন শ্রমিকরা কৃষকরা। পলো দিয়ে মাছ শিকার বিষয়ে জিওল গ্রামের সুরুজ বলেন, এই শীবনদীতে ছোট বেলা আমরা অনেক উৎসব মুখর পরিবেশে বাবার সাথে পলো দিয়ে বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করেছি। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই নদীর নব্যতা হারিয়ে গেছে। সেই সাথে হারিয়ে গেছে নদীর মাছ। তাই আগের চেয়ে মাছ ধরা উৎসব অনেকটা কম হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

তানোরে বিলে মাছ ধরা উৎসব

Update Time : ১০:১০:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

পলো বাওয়া বা পলো দিয়ে দলবদ্ধভাবে মাছ ধরা বাংলার প্রাচীন এক ঐতিহ্য। বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঝাঁপিকেই বলা হয় পলো। আর পলো বাওয়া উৎসবের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে দলবেঁধে পলো নিয়ে মাছ ধরা। একটা সময় মৌসুম এলেই সৌখিন মাছ শিকারিরা নদী নালার পানিতে দলবেঁধে নেমে পড়তেন মাছ শিকারে। নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিন তারিখ ঠিক করে পর্যায়ক্রমে ছোট ছোট সব নদী ও বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে শিকার করা হতো ছোট বড় মাছ। শুকনো জলাশয়ে প্রতি বছরের মাঘ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে সৌখিন মাছ শিকারিদের এই পলো বাওয়া উৎসব।

দখল, দুষণ ও ভরাটসহ নদীর অস্থিত সংকটের কারণে এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব। প্রতি বছর ন্যায় শীত মওসুমে রাজশাহীর তানোর-মোহনপুর উপজেলা সীমান্তঘেঁসে বয়ে যাওয়া শীবনদী ও বারনই নদীর পানি কমতে শুরু করলে বিভিন্ন গ্রামের মুরুব্বীয়ানদের পরামর্শক্রমে আজ শুক্রবার ৭ মার্চ সকালে শীবনদীর বিলকুমারী বিলে, বুরুজ খালে ও কালিগঞ্জ খাল পর্যন্ত কয়েকটি গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ পলো, জাল ও দড়িসহ মাছ শিকারের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে শীবনদীতে হাজির হন। মাছ শিকার উৎসব দেখা উপলক্ষে আশপাশের লোকজনের উপস্থিতি বিরাজ করে উৎসবমূখর পরিবেশ।

শিকারীদের অনেকেই বোয়াল ও শোলসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরেন। পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক ঝাপ দেওয়া আর হৈহুল্লোর করে সামনের দিকে ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। মাছ শিকার উৎসবে পলো ছাড়াও ফার জাল, ছিটকি জাল, ঝাকি জাল ও পেলুন ইত্যাদি দিয়েও মাছ শিকার করেন অনেকে। পলোসহ দেশীয় উপকরণ দিয়ে মাছ শিকার করলে যেমন খরচ কম তেমনি মাছের হয় না বংশ বিনাশ।

রাজশাহী জেলার শীবনদীতে মাছ শিকারের জন্য পলোর ব্যবহার হয়ে আসছে বহু পুরনোকাল থেকে। বাঁশের তৈরি এই পলো মাছ শিকারসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন শ্রমিকরা কৃষকরা। পলো দিয়ে মাছ শিকার বিষয়ে জিওল গ্রামের সুরুজ বলেন, এই শীবনদীতে ছোট বেলা আমরা অনেক উৎসব মুখর পরিবেশে বাবার সাথে পলো দিয়ে বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করেছি। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই নদীর নব্যতা হারিয়ে গেছে। সেই সাথে হারিয়ে গেছে নদীর মাছ। তাই আগের চেয়ে মাছ ধরা উৎসব অনেকটা কম হয়।