Dhaka ০৫:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোলার দৌলতখান ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন

ভোলার দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)’র স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই অফিসের প্রসেস সার্ভার পলাশ চন্দ্র দেবনাথ এর বিরুদ্ধে। তিনি গত ২৮/০৪/২৪, ৩/২/২৫ ও ২৭/২/২৫ তারিখের পৃথক পৃথক ৩টি চেকের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক দৌলতখান ও ভোলা সদর শাখা থেকে উত্তোলন করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী অফিসে দীর্ঘ বছর প্রসেস সার্ভার পদে চাকুরী করেন পলাশ চন্দ্র দেবনাথ। অভিযোগ রয়েছে ইউএনও অফিসের নাজির ওবায়দুল কাদের, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক শাহীন আলমের যোগসাজসে বিগত সরকারের আমলে পলাশ নানা অনিয়ম আর অপকর্ম করেছেন। বর্তমান সরকারের আমলেও তারা তাদের এই অনিয়মের কার্যক্রম চলমান রাখেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে তখনই, যখন বর্তমান ইউএনও নিয়তী রানী কৈরী গত ২৭/০২/২৫ তারিখে টিআইবির একটি

কর্মশালয় অংশ নেয়ার জন্য ঢাকায় অবস্থান করেন। ওই তারিখে ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রসেস সার্ভার পলাশ গত ২৭/০২/২৫ তারিখে দৌলতখান সোনালী ব্যাংক উপজেলা পরিষদ রাজস্ব তহবিলের হিসাব নম্বর ০৪০৪২০০০০০১২৭ এর ৩১৩৪৯৩৩ নং চেকের মাধ্যমে ৩,৫০,০০০/- টাকা উত্তোলন করেন। এই টাকা ভাগ-বাটোয়ারায় ওবায়দুল কাদের, শাহীন আলম ও পলাশের মধ্যে বনি-বনা না হওয়াতেই বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। এই বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে ওবায়দুল কাদের ঢাকায় অবস্থানরত ইউএনওকে মুঠোফোনে জানান। ইউএনও ঢাকা থেকে এসে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে

দেখেন এবং তদন্তের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পান। শুধু গত ২৭/০২/২৫ তারিখের ঘটনাই নয়, গত ০৩/০২/২৫ তারিখে একই হিসাব নম্বরের ৩১৩৪৭৯৯ নং চেকের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক ভোলা সদর শাখা থেকে ২,২০,০০০/- উত্তোলনেরও প্রমাণ পান। এছাড়াও বিগত ইউএনও পাঠান মোঃ সাইদুজ্জামানের সময়কালেও তার স্বাক্ষর জাল করে একই হিসাব নম্বর থেকে গত ২৮/০৪/২৪ তারিখে ৫৮৭৬২৬৭ চেকের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক ভোলা সদর শাখা থেকে ১,৫০,০০০/- উত্তোলনের বিষয়টিও সামনে চলে আসে।

চেক কোথায় পেয়েছেন বিষয়টি নিয়ে পলাশ চন্দ্র দেবনাথকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি চেকগুলো শাহীন আলমের কাছ থেকে পেয়েছি এবং উত্তোলিত টাকা তাকেই দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এছাড়া পলাশ যে জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করেছে তা সে নিজেই ইউএনও’র কাছে স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে শাহীন আলম বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের চেকবই সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ নথি নাজির ওবায়দুল কাদেরের কাছে থাকে। আমি চেক কোথায় পাব। যেহেতু চেক পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, তাই টাকা আত্মসাতেরও বিয়ষটিও অবান্তর। কিন্তু নাজির ওবায়দুল কাদেরের সাথে অর্থ ক্যালেংকারী বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করলে তিনি উক্ত বিয়ষটি এড়িয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা নির্বাহী অফিসের একাধিক লোক জানান, ২০১৫ সাল থেকে ওবায়দুল কাদের ও শাহীন আলম, পলাশ চন্দ্র দেবনাথ একই কার্যালয়ে চাকুরী করে আসছেন। বিগত সরকারের আমলে উপজেলা নির্বাহী অফিসের এমন কোন ক্ষাত নেই যেখানে তারা অনিয়ম আর দুর্নীতি করেন নাই। এই সময় তারা নামে-বেনামে ঢাকা ও ভোলায় কোটি কোটি টাকার সস্পত্তি বানিয়েছেন। বিশেষ করে ওবায়দুল ও শাহীন হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। বিগত সরকারের আমলে সাবেক এমপি আলী আজম মুকুলের প্রভাব খাটিয়ে এহেন অপকর্ম করেছেন তারা। ওই সরকার পলায়নের পরেও তারা এখনও বহাল তবিয়তেই নানা অপকর্ম করে আসছেন। ওই সময়ে তারা আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় ছিলেন, এখন তারা ভোল পাল্টিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রছায়ায় নানা অপকর্ম করে চলছেন। তাদের ভয়ে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কোন কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয় ওবায়দুল কাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসের ভবনের নীচে একটি রুম দখল করে নিয়ম বহিঃর্র্ভূতভাবে বসবাস করে আসছেন।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, যেহেতু ওবায়দুল, শাহীন ও পলাশ একই অফিসে দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত, তাই তারা অফিসের সকল নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির সাথে ওতোপ্রতোভাবে সম্পৃক্ত। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নিয়ে একে অপরকে দুষছেন। তবে এই অর্থ আত্মসাতের সাথে ৩ জনই জড়িত। তাই তাদের নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অপরাধের কারণে এ উপজেলা থেকে অন্যত্র বদলি এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা জরুরী। যাতে করে ভবিষ্যতে এমন কাজ কেউ করতে সাহস না পায়।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিয়তী রাণী কৈরী’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রসেস সার্ভার পলাশ চন্দ্র দেবনাথের অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে অফিস তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাথরঘাটায় মাদক বিরোধী মানববন্ধন

ভোলার দৌলতখান ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন

Update Time : ০৩:৩৪:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

ভোলার দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)’র স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই অফিসের প্রসেস সার্ভার পলাশ চন্দ্র দেবনাথ এর বিরুদ্ধে। তিনি গত ২৮/০৪/২৪, ৩/২/২৫ ও ২৭/২/২৫ তারিখের পৃথক পৃথক ৩টি চেকের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক দৌলতখান ও ভোলা সদর শাখা থেকে উত্তোলন করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী অফিসে দীর্ঘ বছর প্রসেস সার্ভার পদে চাকুরী করেন পলাশ চন্দ্র দেবনাথ। অভিযোগ রয়েছে ইউএনও অফিসের নাজির ওবায়দুল কাদের, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক শাহীন আলমের যোগসাজসে বিগত সরকারের আমলে পলাশ নানা অনিয়ম আর অপকর্ম করেছেন। বর্তমান সরকারের আমলেও তারা তাদের এই অনিয়মের কার্যক্রম চলমান রাখেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে তখনই, যখন বর্তমান ইউএনও নিয়তী রানী কৈরী গত ২৭/০২/২৫ তারিখে টিআইবির একটি

কর্মশালয় অংশ নেয়ার জন্য ঢাকায় অবস্থান করেন। ওই তারিখে ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রসেস সার্ভার পলাশ গত ২৭/০২/২৫ তারিখে দৌলতখান সোনালী ব্যাংক উপজেলা পরিষদ রাজস্ব তহবিলের হিসাব নম্বর ০৪০৪২০০০০০১২৭ এর ৩১৩৪৯৩৩ নং চেকের মাধ্যমে ৩,৫০,০০০/- টাকা উত্তোলন করেন। এই টাকা ভাগ-বাটোয়ারায় ওবায়দুল কাদের, শাহীন আলম ও পলাশের মধ্যে বনি-বনা না হওয়াতেই বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। এই বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে ওবায়দুল কাদের ঢাকায় অবস্থানরত ইউএনওকে মুঠোফোনে জানান। ইউএনও ঢাকা থেকে এসে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে

দেখেন এবং তদন্তের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পান। শুধু গত ২৭/০২/২৫ তারিখের ঘটনাই নয়, গত ০৩/০২/২৫ তারিখে একই হিসাব নম্বরের ৩১৩৪৭৯৯ নং চেকের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক ভোলা সদর শাখা থেকে ২,২০,০০০/- উত্তোলনেরও প্রমাণ পান। এছাড়াও বিগত ইউএনও পাঠান মোঃ সাইদুজ্জামানের সময়কালেও তার স্বাক্ষর জাল করে একই হিসাব নম্বর থেকে গত ২৮/০৪/২৪ তারিখে ৫৮৭৬২৬৭ চেকের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক ভোলা সদর শাখা থেকে ১,৫০,০০০/- উত্তোলনের বিষয়টিও সামনে চলে আসে।

চেক কোথায় পেয়েছেন বিষয়টি নিয়ে পলাশ চন্দ্র দেবনাথকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি চেকগুলো শাহীন আলমের কাছ থেকে পেয়েছি এবং উত্তোলিত টাকা তাকেই দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এছাড়া পলাশ যে জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করেছে তা সে নিজেই ইউএনও’র কাছে স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে শাহীন আলম বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের চেকবই সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ নথি নাজির ওবায়দুল কাদেরের কাছে থাকে। আমি চেক কোথায় পাব। যেহেতু চেক পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, তাই টাকা আত্মসাতেরও বিয়ষটিও অবান্তর। কিন্তু নাজির ওবায়দুল কাদেরের সাথে অর্থ ক্যালেংকারী বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করলে তিনি উক্ত বিয়ষটি এড়িয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা নির্বাহী অফিসের একাধিক লোক জানান, ২০১৫ সাল থেকে ওবায়দুল কাদের ও শাহীন আলম, পলাশ চন্দ্র দেবনাথ একই কার্যালয়ে চাকুরী করে আসছেন। বিগত সরকারের আমলে উপজেলা নির্বাহী অফিসের এমন কোন ক্ষাত নেই যেখানে তারা অনিয়ম আর দুর্নীতি করেন নাই। এই সময় তারা নামে-বেনামে ঢাকা ও ভোলায় কোটি কোটি টাকার সস্পত্তি বানিয়েছেন। বিশেষ করে ওবায়দুল ও শাহীন হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। বিগত সরকারের আমলে সাবেক এমপি আলী আজম মুকুলের প্রভাব খাটিয়ে এহেন অপকর্ম করেছেন তারা। ওই সরকার পলায়নের পরেও তারা এখনও বহাল তবিয়তেই নানা অপকর্ম করে আসছেন। ওই সময়ে তারা আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় ছিলেন, এখন তারা ভোল পাল্টিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রছায়ায় নানা অপকর্ম করে চলছেন। তাদের ভয়ে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কোন কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয় ওবায়দুল কাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসের ভবনের নীচে একটি রুম দখল করে নিয়ম বহিঃর্র্ভূতভাবে বসবাস করে আসছেন।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, যেহেতু ওবায়দুল, শাহীন ও পলাশ একই অফিসে দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত, তাই তারা অফিসের সকল নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির সাথে ওতোপ্রতোভাবে সম্পৃক্ত। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নিয়ে একে অপরকে দুষছেন। তবে এই অর্থ আত্মসাতের সাথে ৩ জনই জড়িত। তাই তাদের নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অপরাধের কারণে এ উপজেলা থেকে অন্যত্র বদলি এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা জরুরী। যাতে করে ভবিষ্যতে এমন কাজ কেউ করতে সাহস না পায়।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিয়তী রাণী কৈরী’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রসেস সার্ভার পলাশ চন্দ্র দেবনাথের অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে অফিস তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।