দীর্ঘ ৪ বছর পর সৌদি আরব থেকে একটি হাইচ গাড়ি যোগে নারীর টানে বাড়ি ফিরছিলেন জুবায়ের হোসেন নামে ব্যক্তি।গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রয়ারী) রাতে যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়কের ঝাউল এলাকা পৌঁছালে ডাকাতির উদ্দেশ্য হামলার শিকার হয় তার গাড়িটি। দুর্বৃত্তরা ঠিল মেরে গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে গাড়ি থামিয়ে মালামাল ছিনেয়ে নেওয়ার উদেশ্য থাকলেও চালকের বুদ্ধি মত্তায় এ যাত্রায় বেঁচে ফেরেন তিনি।জুবায়েরের মতো অনেকেই সেই রাতে দুর্বৃত্তদের ঢিলের স্বীকার হয় বলে জানা যায়। শুধু ছিনতাই-ডাকাতি নয় চোরাকারবারিরও অভয়াশ্রম হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার এই মহাসড়কটি। ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে যখন যমুনা সেতুর গোলচত্বরে চলছিল যৌথবাহিনীর অভিযান, ঠিক সেই সময়ে এই চেকপোস্ট থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে সিরাজগঞ্জ রোড হাঁটিকুমরুল এলাকাতে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে কালোবাজারির উদ্দেশ্যে নামানো হচ্ছিল মালামাল।দীর্ঘ দিন ধরে মহাসড়কে প্রশাসনের চোখের সামনে রাতের বেলায় এই চোরাকারবারিদের অবৈধ ব্যবসা চলমান থাকলেও দেখেও যেন না দেখার ভান পুলিশ প্রশাসনের।
আর এভাবেই প্রতিনিয়ত উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু পশ্চিম পাড় হাটিকুমরুল মহাসড়ক এখন যেন ছিনতাই, ডাকাতি, চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের অভাশ্রামে পরিণিত হয়েছে।বর্তমানে রাতভর মহাসড়কটি দখলে থাকে ছিনতাইকারী, ডাকাত ও চোরাকারবারীদের দখলে। সারাদেশের ন্যায় এই মহাসড়কটিতেও চলে যৌথবাহীনির বিশেষ টহল ও সাড়াশি অভিযান। তার পরেও কোন ভাবেই থেমে নেই বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম ও অরাজকতা।দীর্ঘদিন যাবত প্রকাশ্য এভাবে অপকর্ম চলতে থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই।
মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীরা বলছেন দেশের চলমান অবস্থা বিবেচনা করে খুব ভয়ে ভয়ে চলফেরা করতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে মহিলাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তা অভিভাবদের। মহাসড়কে যৌথবাহিনীর এমন অভিযানে নিয়মিত থাকলে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে বলেন যাত্রীরা।সড়ক নিরাপদ রাখতে এমন অভিযান প্রতিনিয়ত চান তারা।
ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জুবায়ের হোসেন বলেন, অনেক দিন পর বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। সিরাজগঞ্জে মহাসড়কে ঝাউল এলাকায় পৌঁছানো মাত্র দুর্বৃত্তরা এমনভাবে ঢিল ছুঁড়ছে গাড়ির কাচঁ ভেঙ্গে ঢিল পাথর ভিতরে প্রবেশ করে অল্পের জন্য আমি প্রাণে বেঁচে যাই।আমি শুয়ে ছিলাম বলেই ঢিল মাথায় লাগে নাই।ড্রাইভার বুদ্ধি করে গাড়ি না থামিয়ে দ্র্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ন্যাশলান ফুড ভিলেজে হোটেলে থামায়।সেই জায়গায় গাড়ি থামালেই গাড়িসহ সব কিছু ছিনতাই ডাকাতি হয়ে যেতো।তিনি জানান,অনেক প্রবাসী তো রাতের বেলায় যাতায়াত করে থাকে তাই প্রবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে মহাসড়কগুলোতে নিরাপত্তা জোড়দার করতে হবে।
এ বিষয়ে প্রাইভেট কারের ড্রাইভার হোসেন আলী বলেন,মাঝে মাঝেই মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় ডাকতরা পাথর দিয়ে ঢিল ছুঁড়ে মারে সেই সকল ড্রাইভার দাঁড়িয়ে যায় ডাকতরা মূহুর্তে তাদের গাড়ি থেকে সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়।আর যারা দাঁড়ায় না তারা ওই যাত্রায় বেঁচে যায়।পুলিশ মহাসড়কে থাকলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
বাসের কয়েকজন যাত্রী বলেন, রাতের বেলায় ডাকাতি অনেক বেড়ে গিয়েছে এ জন্য অনেক সময় ভয় ও আতংকের মধ্যে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের।ইতিমধ্যে টাঙ্গইল ও পাবনাসহ কয়েকটি জায়গায় ডাকাতি সংঘঠিত হয়েছে। এই জন্য মহাসড়কে যৌথ বাহিনার অভিযান নিয়মিত অব্যাহত থাকুক বলে জানান তারা।
নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চোরাকারবারির সাথে যুক্ত কয়েকজন ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপার বলেন,মহাসড়রকের পাশেই হাঁটিকুমরুল এলাকাতে কয়েকটি পয়েন্টে ট্রাক থামিয়ে নামিয়ে নেয়া হয় ট্রাকের মালামাল। ট্রাক না থামালে তাদের উপর নির্যাতন ও বিভিন্ন প্রকার ঝামেলা করেন চোরকারবারির সাথে যুক্ত প্রভাবশালী অসাধু ব্যবসায়ীরা।চোরাইমালগুলো নামানো কিছুক্ষন পরেই আবার সেগুলো মুহুর্তের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়।মহাসড়কে এগুলো অনেকদিন ধরে চলে আসলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে না।
হাঁটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন,হাঁটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় বেশকিছু স্থানে চোরাকারবারিরা অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে আমরা এই বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমরা অভিযানের মাধ্যমে সেই সকল জায়গা থেকে তাদের তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি। খুব শ্রীঘ্রই সেই সকল জায়গায় অভিযান চালানো হবে জানান তিনি।
এদিকে হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রেঞ্জের পুলিশ সুপার মো: শহিদউল্লাহ শহিদ বলেন, উত্তরবঙ্গের মহাসড়কগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা ইতিমধ্যে পুলিশের টহল কয়েকগুন বৃদ্ধি বৃদ্ধি করেছি। রমজানে ও ঈদে আরো নিরাপত্তা জোড়দার করা হবে।