গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি সমবায় সমিতির কমিটির বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছেন ওই সমিতির সদস্যদের একাংশ। তারা আগে দুর্নীতির হিসাব পরে নির্বাচনের দাবীতে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।বুধবার সকালে উপজেলার লতিফপুর এলাকায় এ কর্মসূচী পালন করেন।
এলাকাবাসী, সমিতির সদস্য ও উপজেলা সমবায় সমিতি সূত্রেজানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর এলাকায় কালিয়াকৈর উপজেলা অটোরিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি লিমিটেড নামে একটি সমিতি রয়েছে। ২২নং নিবন্ধন দিয়েছে উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর। এ সমিতির সদস্য সংখ্যা ৫২৬ জন। এদের অনেকেই মারা গেছেন আবার অনেকেই রিকশা চালানো বাদ দিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। গত বছর ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে সমিতি পরিচালনা হয়ে
আসছিল। তারা সমিতির নামে প্রত্যেক নাম্বার প্লেট বাবদ ৩০০ টাকা, লাইনম্যানের জন্য প্রতিদিন ১০ টাকা এবং সপ্তাহে ৫০ টাকা করে চাঁদা তুলেছেন। এছাড়াও সমিতির প্লেট ব্যতিত বাহিরের অন্য রিকশা যাতায়াত করলেও তাদেরকে আটকে চাঁদা তোলা হয়। সে হিসাব অনুযায়ী এ সংগঠনের অধীনে বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বেশি চাঁদা উঠানো হয়। সমিতির হিসাব মতে, অফিস ভাড়া মাসে ৫ হাজার টাকা করে বছরে ৬০ হাজার টাকা ও দুই লাইনম্যানের বেতন সপ্তাহে ৯ হাজার টাকা করে ৪ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা খরচ করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য খচর ব্যয় করে ২৪ লক্ষ টাকা জমা থাকার কথা ছিল। কিন্তু সমিতির একাংশের অভিযোগ, বর্তমানে সমিতিতে জমা আছে মাত্র ৩৮ টাকা।
এতো টাকা হরিলুটের অবস্থায় সমিতির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন সমিতির একাংশ সদস্যরা। আগামী ৫ এপ্রিল নির্বাচনের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ফরম জমা দেওয়ার তারিখ হলেও সদস্যদের কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।
সমিতির কতিপয় সদস্য উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে ভুল বুঝিয়ে এ নির্বাচনের আয়োজন করেন। এ নিয়ে ক্ষুব্দ সদস্যরা অবৈধ নির্বাচনের তফসিল দাবী করে এটা বাতিল চেয়ে বুধবার সকালে উপজেলা চত্ত্বর ও কালিয়াকৈর থানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের লতিফপুর এলাকায় মানববন্ধন করেন। এসময় তারা আগে হরিলুট দুর্নীতির হিসাব পরে নির্বাচনের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- জমির খান, আনোয়ার হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন, আমিনুল ইসলামসহ আরো অনেকে।
দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে ওই সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক করিম হোসেন জানান, সমিতির সদস্যদের সপ্তাহে ৫০ টাকা ও লাইনম্যান বাবদ প্রতিদিন ১০ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা ১ বছরের মধ্যে মাত্র কয়েক মাস টাকা দিয়েছেন। সে টাকা থেকে অফিস ভাড়া, দুই লাইনম্যানের বেতনসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক খরচ করা হয়েছে। এখনো দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা সমিতিতে জমা রয়েছে। এটা সরকারী ভাবে অডিট করা আছে। আর ২/৩ মাস আগে সদস্যদের উপস্থিতিতে সাধারন সভা অনুষ্ঠিত হলে এ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেখানে এই বিক্ষোভকারীরাও উপস্থিত ছিলেন। পরে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা ও মাইকিং করা হয়। তবে মোট সদস্যদের চেয়ে বিক্ষোভকারীরা সংখ্যায় অনেক কম। তারা নির্বাচনটি বানচালের চেষ্টা করছেন।
এব্যাপারে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ছাবিরা খানম জানান, ওই সমিতির নির্বাচন প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন করেছেন সদস্যরা। সমিতির নির্বাচনটি হলো একটি আইনি প্রক্রিয়া। তবে ওই সমিতির লক্ষ লক্ষ টাকা তোলার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।