Dhaka ০৪:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুঠিয়ায় সুদ ও দাদন ব্যবসা জমজমাট

পুঠিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সুদওদাদন ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলছে। এক শ্রেণীর বিত্তশালী ব্যাক্তি এবং এনজিওদের ঘপ্পরে পড়ে দিনে দিনে ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা আসংখজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরজমিনে ঘুরে জানাগেছে উপজেলার ঝলমলিয়া, জিউপাড়া, পালোপাড়া, ফুলবাড়ি, তারাপুর, শিবপুর, বানেশ্বর ও ধোপাপাড়া অন্যতম আর কান্দ্রা, চক দূর্লভপুর, রামজীবনপুর, শাহ্ধসঢ়;বাজপুর, বেলপুকুর সহ বিভিন্ন এলাকায় সুদ ও দাদন ব্যবসায়ীরা খুবই তৎপর হয়ে উঠেছে। এক শ্রেণীর বিত্তশালী মহাজন ও ব্যবসায়ীরা বাৎসরিক, মাসিক, সাপ্তাহিক এমনকি দৈনিক ভিত্তিতে নগদ ঋণ দিয়ে ২/৩ গুন মুনাফা লাভ করছে। অপর দিকে, গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠির বিরাট অংশ বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। মালিক বা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে লাভের সিংহভাগই তুলে দিতে হচ্ছে তাদের হাতে। ফলে সাধারণ মানুষ দিন দিন গরীব ও ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে। আর মহাজনরা অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে।

পুঠিয়া উপজেলার সবচেয়ে বড় সুদখোররা হচ্ছে, মামুন বেকারী কারখানার বড় মিস্ত্রি রশিদ, পুঠিয়া বস্ত্রালয়ের মালিক শহিদুল মন্ডল, সোহেল ডেকোরেটরের মালিক করিমসহ ছোট বড় মিলিয়ে লোকলয়ের গ্রাম পর্যায়ে অসংখ্যা। এরা সব সময়ই বিপদগ্রস্থ মানুষদের খোজ খবর করে প্রয়োজনে সহযোগী কর্মী ও রাখে। তারপর তার কাছে নিজে অথবা সহযোগীদের পাঠায়। রাজী হলে বন্ধক রাখতে হয় বিভিন্ন অংকের সম্পদ সহ কাগজ পত্রাদী। উপজেলায় সুদখোরদের কোন সীমা পরিসীমা নেই। সংশিষ্ঠদের মতে ছোট বড় মিলিয়ে ৩ শতাধিক যা আসেপাশের কোন উপজেলাতেই এত নেই বলে জানাগেছে। সুদখোর রশিদ বলেন, আমি সুদের ওপর টাকা দিই এটা সত্য এবং এ যাবৎ পর্যন্ত প্রায় ২৫ থেকে ২৭ লাখ টাকা ছাড়া হয়েছে কিন্তু সুদের টাকা কেউ দিতে চায়না। আবার কেউ দিলে সেটা থাকেনা। যে পথে আসে সে পথেই যায়।

একই ভাবে শহিদুল মন্ডল ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা ছেড়েছে। করিম ছেড়েছে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। এরা জমির দলিল, দেড়শ টাকা সাদা স্টেম্পে স্বাক্ষর, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বিভিন্ন ডিজাইনের গহনা সহ অনেক কিছু। এর সতত্যাও রশিদ স্বীকার করেণ। ব্যবসায়ীরা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করার পর ব্যবসায় লোকসান হলে মহাজনদের টাকা শোধ দিতে ভিটামাটি পর্যন্ত বিক্রী করে দিচ্ছে। উপজেলার তারাপুর গ্রামের জমসেদ বলেন, আমি এলাকার বৃত্তশালী লোকদের কাছে টাকা লোন চেয়েছি কিন্তু কেউ লাভ ছাড়া দিতে চায়না।

পরবর্তীতে দোকান চালু করেছিলাম সুদের উপর টাকা নিয়ে। দোকানের ব্যবসা চালিয়ে যে টাকা লাভ হত তার চেয়ে সুদের পরিমানই বেশী। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রীকে দিয়ে ৩/৪টি এনজিও থেকে লোন উঠায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, যে টাকা লাভ হয় তার চেয়ে দোকান বাঁকী ও সুদের পরিমান বেশী। এক পর্যায়ে ভিটামাটি বিক্রয় করেও লোন শোধ না হওয়াতে বউ ছেলে-মেয়ে নিয়ে পথে বসে গেছি। এখন ঢাকার ফুটপাতে কাজ করে যাই।

জমসেদের মত এরকম ছিন্নমূল মানুষেরা এখন বিভিন্ন বাসায় কাজ করে খুব কষ্টে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে। আবার কোন কোন পরিবার সরকারী মাঠ ওবিভিন্ন খাস জমিতে তাবু গেড়েছে।

জানাগেছে, গ্রামীণ দাদন ও সুদ ব্যবসার ক্ষেত্রে তেমন কোন নিয়মনীতি না থাকার জন্যই গ্রামের দরিদ্র গোষ্ঠী ঋণ ও সুদের টাকা হতে মুক্তি পায় না। মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিলে শতকরা ১৫ থেকে ২০ কোন কোন ক্ষেত্রে ২৫ ভাগও সুদ প্রদান করতে হয়। সময়মত ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে গ্রহীতার উপর নেমে আসে মহাজনদের অনেক অত্যাচার ও জুলুম।

আরেক দিকে, এক শ্রেণীর এনজিওর অপতৎপরতার শিকার হচ্ছে ছিন্নমূল মানুষেরা। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সমিতির নামে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকার ঋণ। এ টাকা সময়মত পরিশোধ করতে না পারলে এনজিও কর্মীদের চাপে তারা ভিটামাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। দরিদ্র মানুষেরা যেন এ সকল এনজিও বা দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে না পড়ে এবং সরকারী ভাবে সুদমুক্ত ঋণ পেতে পারে তার জন্য জরুরীভাবে সরকারী পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নয়তো উপজেলার হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে এবং ভিটামাটি হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হবে বলে সচেতন মহলের ধারণা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

পুঠিয়ায় সুদ ও দাদন ব্যবসা জমজমাট

Update Time : ০১:৪৫:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

পুঠিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সুদওদাদন ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলছে। এক শ্রেণীর বিত্তশালী ব্যাক্তি এবং এনজিওদের ঘপ্পরে পড়ে দিনে দিনে ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা আসংখজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরজমিনে ঘুরে জানাগেছে উপজেলার ঝলমলিয়া, জিউপাড়া, পালোপাড়া, ফুলবাড়ি, তারাপুর, শিবপুর, বানেশ্বর ও ধোপাপাড়া অন্যতম আর কান্দ্রা, চক দূর্লভপুর, রামজীবনপুর, শাহ্ধসঢ়;বাজপুর, বেলপুকুর সহ বিভিন্ন এলাকায় সুদ ও দাদন ব্যবসায়ীরা খুবই তৎপর হয়ে উঠেছে। এক শ্রেণীর বিত্তশালী মহাজন ও ব্যবসায়ীরা বাৎসরিক, মাসিক, সাপ্তাহিক এমনকি দৈনিক ভিত্তিতে নগদ ঋণ দিয়ে ২/৩ গুন মুনাফা লাভ করছে। অপর দিকে, গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠির বিরাট অংশ বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। মালিক বা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে লাভের সিংহভাগই তুলে দিতে হচ্ছে তাদের হাতে। ফলে সাধারণ মানুষ দিন দিন গরীব ও ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে। আর মহাজনরা অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে।

পুঠিয়া উপজেলার সবচেয়ে বড় সুদখোররা হচ্ছে, মামুন বেকারী কারখানার বড় মিস্ত্রি রশিদ, পুঠিয়া বস্ত্রালয়ের মালিক শহিদুল মন্ডল, সোহেল ডেকোরেটরের মালিক করিমসহ ছোট বড় মিলিয়ে লোকলয়ের গ্রাম পর্যায়ে অসংখ্যা। এরা সব সময়ই বিপদগ্রস্থ মানুষদের খোজ খবর করে প্রয়োজনে সহযোগী কর্মী ও রাখে। তারপর তার কাছে নিজে অথবা সহযোগীদের পাঠায়। রাজী হলে বন্ধক রাখতে হয় বিভিন্ন অংকের সম্পদ সহ কাগজ পত্রাদী। উপজেলায় সুদখোরদের কোন সীমা পরিসীমা নেই। সংশিষ্ঠদের মতে ছোট বড় মিলিয়ে ৩ শতাধিক যা আসেপাশের কোন উপজেলাতেই এত নেই বলে জানাগেছে। সুদখোর রশিদ বলেন, আমি সুদের ওপর টাকা দিই এটা সত্য এবং এ যাবৎ পর্যন্ত প্রায় ২৫ থেকে ২৭ লাখ টাকা ছাড়া হয়েছে কিন্তু সুদের টাকা কেউ দিতে চায়না। আবার কেউ দিলে সেটা থাকেনা। যে পথে আসে সে পথেই যায়।

একই ভাবে শহিদুল মন্ডল ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা ছেড়েছে। করিম ছেড়েছে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। এরা জমির দলিল, দেড়শ টাকা সাদা স্টেম্পে স্বাক্ষর, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বিভিন্ন ডিজাইনের গহনা সহ অনেক কিছু। এর সতত্যাও রশিদ স্বীকার করেণ। ব্যবসায়ীরা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করার পর ব্যবসায় লোকসান হলে মহাজনদের টাকা শোধ দিতে ভিটামাটি পর্যন্ত বিক্রী করে দিচ্ছে। উপজেলার তারাপুর গ্রামের জমসেদ বলেন, আমি এলাকার বৃত্তশালী লোকদের কাছে টাকা লোন চেয়েছি কিন্তু কেউ লাভ ছাড়া দিতে চায়না।

পরবর্তীতে দোকান চালু করেছিলাম সুদের উপর টাকা নিয়ে। দোকানের ব্যবসা চালিয়ে যে টাকা লাভ হত তার চেয়ে সুদের পরিমানই বেশী। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রীকে দিয়ে ৩/৪টি এনজিও থেকে লোন উঠায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, যে টাকা লাভ হয় তার চেয়ে দোকান বাঁকী ও সুদের পরিমান বেশী। এক পর্যায়ে ভিটামাটি বিক্রয় করেও লোন শোধ না হওয়াতে বউ ছেলে-মেয়ে নিয়ে পথে বসে গেছি। এখন ঢাকার ফুটপাতে কাজ করে যাই।

জমসেদের মত এরকম ছিন্নমূল মানুষেরা এখন বিভিন্ন বাসায় কাজ করে খুব কষ্টে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে। আবার কোন কোন পরিবার সরকারী মাঠ ওবিভিন্ন খাস জমিতে তাবু গেড়েছে।

জানাগেছে, গ্রামীণ দাদন ও সুদ ব্যবসার ক্ষেত্রে তেমন কোন নিয়মনীতি না থাকার জন্যই গ্রামের দরিদ্র গোষ্ঠী ঋণ ও সুদের টাকা হতে মুক্তি পায় না। মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিলে শতকরা ১৫ থেকে ২০ কোন কোন ক্ষেত্রে ২৫ ভাগও সুদ প্রদান করতে হয়। সময়মত ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে গ্রহীতার উপর নেমে আসে মহাজনদের অনেক অত্যাচার ও জুলুম।

আরেক দিকে, এক শ্রেণীর এনজিওর অপতৎপরতার শিকার হচ্ছে ছিন্নমূল মানুষেরা। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সমিতির নামে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকার ঋণ। এ টাকা সময়মত পরিশোধ করতে না পারলে এনজিও কর্মীদের চাপে তারা ভিটামাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। দরিদ্র মানুষেরা যেন এ সকল এনজিও বা দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে না পড়ে এবং সরকারী ভাবে সুদমুক্ত ঋণ পেতে পারে তার জন্য জরুরীভাবে সরকারী পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নয়তো উপজেলার হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে এবং ভিটামাটি হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হবে বলে সচেতন মহলের ধারণা।