Dhaka ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোলায় বাড়ির আঙিনায় চলছে শুঁটকি উৎপাদন, মিলছে আশার আলো

CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v62), quality = 82

ভোলার বিভিন্ন এলাকায় এখন গৃহস্থালি পর্যায়ে ক্ষুদ্র পরিসরে শুঁটকি উৎপাদনের এক নতুন জাগরণ দেখা যাচ্ছে। বাড়ির আঙিনায় বাড়ির ছাদে ছোট ছোট শুঁটকি মাচায় মশারি দিয়ে মাছ শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করছে নারিরা। এই উদ্যোগে একদিকে যেমন পরিবারের অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি পরিবারের সদস্যরা পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি বিষ ও কেমিক্যালমুক্ত স্বাস্থ্যকর শুঁটকি খেতে পারছেন। এমনি একটি গ্রাম বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়ন।

পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের মৎস্য ইউনিটের আওতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা এই পদ্ধতির বিস্তার ঘটিয়েছে নারিদের মধ্যে। গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান জানান, আমাদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার মানুষ এখন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিবেশের ক্ষতি না করে শুঁটকি উৎপাদন করছে। এতে তাদের জীবিকায়ন যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় বাজারেও এই স্বাস্থ্যকর শুঁটকির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভোলার কালিনাথ রায়ের বাজারের শুঁটকি বিক্রেতা মো. হোসেন পালোয়ান জানান, এখন বিষ ও ক্যামিক্যালমুক্ত শুঁটকির চাহিদা বেশি, যা মশারির মতো জাল দিয়ে ঢেকে প্রস্তুত করা হয়। এতে মাছ পোকামাকড় থেকে সুরক্ষিত থাকে এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষিত হয়।

শুঁটকি বিক্রেতা মো. ইউনুস বলেন, আগে খোলা জায়গায় শুঁটকি তৈরি করায় ধুলাবালি ও পোকামাকড়ের ঝুঁকি ছিল। কিন্তু এখন নতুন ভাবে মশারির মতো নেট দিয়ে ঢেকে শুঁটকি উৎপাদন করছে, যা অনেক বেশি নিরাপদ ও মানসম্মত।

বোরহানউদ্দিনের সাচারার উদ্যোক্তা রাহেলা বিবি বলেন, আগে খোলা জায়গায় শুঁটকি তৈরি করতাম, নানা ধরনের মশা-মাছি ও পাখির বিরক্তি ছিল। এখন শুধু হলুদ ও লবণ মাখিয়ে মশারি দিয়ে ঢেকে শুঁটকি করি, এতে রাসায়নিক ও বিষমুক্ত পদ্ধতিতে শুঁটকি উৎপাদন করতে পারছি।

উদ্যোক্তা রিনা আক্তার জানান, শুঁটকির মাচা থেকে চলতি বছরে ৫০ হাজার টাকা আয় করেছি। এই আয় দিয়ে সংসার চালাচ্ছি, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছি। এই শুঁটকি আমাদের জীবনে নতুন আশার আলো এনেছে।

ভোলা মৎস্য অধিদপ্তরের খামার ব্যবস্থাপক এইচ. এম. জাকির হোসেন বলেন, ভোলা মৎস্য উৎপাদনে সারপ্লাস প্রোডাকশনে আছে, যা ভোলার মৎস্য চাহিদা মেটানোর পরও বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হয়। ভোলার কিছু ক্ষুদ্র মৎস্য চাষি ও আহরণকারীরা আধুনিক শুঁটকি উৎপাদনের সাথে যুক্ত আছে। আশা করা যাচ্ছে, তারা এর মাধ্যমে বেশ ভালো লাভবান হতে পারবে।

শুঁটকি উৎপাদনের এই নতুন পদ্ধতি ভোলার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। শুঁটকির ঘ্রাণে ভাসবে ভোলার আঙিনা, নতুন স্বপ্নে উদ্ভাসিত হবে এখানকার প্রতিটি পরিবার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

ভোলায় বাড়ির আঙিনায় চলছে শুঁটকি উৎপাদন, মিলছে আশার আলো

Update Time : ১১:৩২:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

ভোলার বিভিন্ন এলাকায় এখন গৃহস্থালি পর্যায়ে ক্ষুদ্র পরিসরে শুঁটকি উৎপাদনের এক নতুন জাগরণ দেখা যাচ্ছে। বাড়ির আঙিনায় বাড়ির ছাদে ছোট ছোট শুঁটকি মাচায় মশারি দিয়ে মাছ শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করছে নারিরা। এই উদ্যোগে একদিকে যেমন পরিবারের অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি পরিবারের সদস্যরা পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি বিষ ও কেমিক্যালমুক্ত স্বাস্থ্যকর শুঁটকি খেতে পারছেন। এমনি একটি গ্রাম বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়ন।

পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের মৎস্য ইউনিটের আওতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা এই পদ্ধতির বিস্তার ঘটিয়েছে নারিদের মধ্যে। গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান জানান, আমাদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার মানুষ এখন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিবেশের ক্ষতি না করে শুঁটকি উৎপাদন করছে। এতে তাদের জীবিকায়ন যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় বাজারেও এই স্বাস্থ্যকর শুঁটকির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভোলার কালিনাথ রায়ের বাজারের শুঁটকি বিক্রেতা মো. হোসেন পালোয়ান জানান, এখন বিষ ও ক্যামিক্যালমুক্ত শুঁটকির চাহিদা বেশি, যা মশারির মতো জাল দিয়ে ঢেকে প্রস্তুত করা হয়। এতে মাছ পোকামাকড় থেকে সুরক্ষিত থাকে এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষিত হয়।

শুঁটকি বিক্রেতা মো. ইউনুস বলেন, আগে খোলা জায়গায় শুঁটকি তৈরি করায় ধুলাবালি ও পোকামাকড়ের ঝুঁকি ছিল। কিন্তু এখন নতুন ভাবে মশারির মতো নেট দিয়ে ঢেকে শুঁটকি উৎপাদন করছে, যা অনেক বেশি নিরাপদ ও মানসম্মত।

বোরহানউদ্দিনের সাচারার উদ্যোক্তা রাহেলা বিবি বলেন, আগে খোলা জায়গায় শুঁটকি তৈরি করতাম, নানা ধরনের মশা-মাছি ও পাখির বিরক্তি ছিল। এখন শুধু হলুদ ও লবণ মাখিয়ে মশারি দিয়ে ঢেকে শুঁটকি করি, এতে রাসায়নিক ও বিষমুক্ত পদ্ধতিতে শুঁটকি উৎপাদন করতে পারছি।

উদ্যোক্তা রিনা আক্তার জানান, শুঁটকির মাচা থেকে চলতি বছরে ৫০ হাজার টাকা আয় করেছি। এই আয় দিয়ে সংসার চালাচ্ছি, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছি। এই শুঁটকি আমাদের জীবনে নতুন আশার আলো এনেছে।

ভোলা মৎস্য অধিদপ্তরের খামার ব্যবস্থাপক এইচ. এম. জাকির হোসেন বলেন, ভোলা মৎস্য উৎপাদনে সারপ্লাস প্রোডাকশনে আছে, যা ভোলার মৎস্য চাহিদা মেটানোর পরও বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হয়। ভোলার কিছু ক্ষুদ্র মৎস্য চাষি ও আহরণকারীরা আধুনিক শুঁটকি উৎপাদনের সাথে যুক্ত আছে। আশা করা যাচ্ছে, তারা এর মাধ্যমে বেশ ভালো লাভবান হতে পারবে।

শুঁটকি উৎপাদনের এই নতুন পদ্ধতি ভোলার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। শুঁটকির ঘ্রাণে ভাসবে ভোলার আঙিনা, নতুন স্বপ্নে উদ্ভাসিত হবে এখানকার প্রতিটি পরিবার।