Dhaka ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোলায় তরমুজের ভাল ফলনে কৃষকের মুখে হাঁসি

ভোলায় কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে তরমুজ। অনুকূল আবহাওয়া, উন্নত কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং কৃষি বিভাগ ও এনজিওগুলোর কার্যকর সহায়তায় এবার রেকর্ড পরিমাণ তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। সুস্বাদু ও রসালো তরমুজে ভরে গেছে স্থানীয় বাজার, যা রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের অন্তত ১২টি জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ভালো ফলন পেয়ে যেমনি খুশি কৃষক, তেমনি রোজায় তরমুজ পেয়ে ক্রেতারাও খুশি। এ বছর তরমুজের উৎপাদন কৃষকদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অনুকূল আবহাওয়া ও উর্বর মাটির পাশাপাশি আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির কারণে কৃষকরা পেয়েছেন আশাতীত ফলন। গত বছরের কিছুটা প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষতির পর এবার বাম্পার ফলন কৃষকদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে কৃষকেরা বলছেন, আরো একমাস যদি আবহাওয়া পুরোপুরি অনুকূল থাকে তাহলে পূর্বের লোকসান কাটিয়ে অনেকটা সঞ্চয় করতে পারবে। আর যদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় তাহলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। বাজারে তরমুজের চাহিদা ও ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকদের স্বস্তি এনে দিয়েছে। ফলে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন-ফসল সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের কাজে।

সরেজমিনে ভোলা সদরের মাঝের চরে তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। ওই চরের তরমুজ চাষী আবু তাহের জানান, তিনি ৪ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে। বিশেষ করে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কোনো চারাগাছ ক্ষতি না হওয়ায় তরমুজে লাভের পাল্লা এখন ভারী।

ভেলুমিয়ার বাঘমারা চরে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার বিস্তীর্ণ ভূমিতে তরমুজ ক্ষেতে হাজার হাজার তরমুজে সয়লাব। কথা হয় ওই চরের কৃষক নজরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, এবার মৌসূমে ১৮ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে বীজ ক্রয়, রোপণ, কীটনাশক ও রক্ষণাবেক্ষণ সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৮ লাখ টাকা। প্রচুর শ্রম, পরিচর্যা এবং আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনি যে পরিমাণ তরমুজ বিক্রি করেছেন, তাতে করে তার মূল পুঁজির ৩ ভাগ উঠে এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার মৌসূমে তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এবার মৌসূমেম ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরাঞ্চলে তরমুজের সবচেয়ে বেশী ফলন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন এনজিও বিশেষ করে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার (জিজেইউএস) কার্যকর সহায়তা কৃষকদের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলার ৭ উপজেলায় এবার ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৫ হাজার কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন, যা থেকে উৎপাদিত হবে প্রায় ৭ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতি হেক্টর জমিতে ৫২ থেকে ৬০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হচ্ছে, যার সম্ভাব্য বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শামীম আহমেদ বলেন, এবারের তরমুজ উৎপাদন ভোলার কৃষি খাতে একটি মাইলফলক।

কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তি ও সঠিক কৃষি ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করায় ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, আদ্রতাসহ আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর ভোলায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের টার্গেট ছিলো তার মধ্যে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ উৎপাদন করা হয়েছে।

এ সাফল্য ভবিষ্যতে তরমুজ চাষকে আরও প্রসারিত করবে। অত্যন্ত লাভজনক ফলন ও বাজারমূল্যের কারণে কৃষকদের মধ্যে তরমুজ চাষে নতুন আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এ বছর কৃষকদের সাফল্য শুধু তাদের জীবনমান উন্নত করবে না, বরং ভোলার অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারসহ সম্ভাবনাময় কৃষি খাতকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

ভোলায় তরমুজের ভাল ফলনে কৃষকের মুখে হাঁসি

Update Time : ০১:২৯:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

ভোলায় কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে তরমুজ। অনুকূল আবহাওয়া, উন্নত কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং কৃষি বিভাগ ও এনজিওগুলোর কার্যকর সহায়তায় এবার রেকর্ড পরিমাণ তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। সুস্বাদু ও রসালো তরমুজে ভরে গেছে স্থানীয় বাজার, যা রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের অন্তত ১২টি জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ভালো ফলন পেয়ে যেমনি খুশি কৃষক, তেমনি রোজায় তরমুজ পেয়ে ক্রেতারাও খুশি। এ বছর তরমুজের উৎপাদন কৃষকদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অনুকূল আবহাওয়া ও উর্বর মাটির পাশাপাশি আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির কারণে কৃষকরা পেয়েছেন আশাতীত ফলন। গত বছরের কিছুটা প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষতির পর এবার বাম্পার ফলন কৃষকদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে কৃষকেরা বলছেন, আরো একমাস যদি আবহাওয়া পুরোপুরি অনুকূল থাকে তাহলে পূর্বের লোকসান কাটিয়ে অনেকটা সঞ্চয় করতে পারবে। আর যদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় তাহলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। বাজারে তরমুজের চাহিদা ও ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকদের স্বস্তি এনে দিয়েছে। ফলে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন-ফসল সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের কাজে।

সরেজমিনে ভোলা সদরের মাঝের চরে তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। ওই চরের তরমুজ চাষী আবু তাহের জানান, তিনি ৪ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে। বিশেষ করে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কোনো চারাগাছ ক্ষতি না হওয়ায় তরমুজে লাভের পাল্লা এখন ভারী।

ভেলুমিয়ার বাঘমারা চরে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার বিস্তীর্ণ ভূমিতে তরমুজ ক্ষেতে হাজার হাজার তরমুজে সয়লাব। কথা হয় ওই চরের কৃষক নজরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, এবার মৌসূমে ১৮ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে বীজ ক্রয়, রোপণ, কীটনাশক ও রক্ষণাবেক্ষণ সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৮ লাখ টাকা। প্রচুর শ্রম, পরিচর্যা এবং আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনি যে পরিমাণ তরমুজ বিক্রি করেছেন, তাতে করে তার মূল পুঁজির ৩ ভাগ উঠে এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার মৌসূমে তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এবার মৌসূমেম ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরাঞ্চলে তরমুজের সবচেয়ে বেশী ফলন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন এনজিও বিশেষ করে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার (জিজেইউএস) কার্যকর সহায়তা কৃষকদের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলার ৭ উপজেলায় এবার ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৫ হাজার কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন, যা থেকে উৎপাদিত হবে প্রায় ৭ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতি হেক্টর জমিতে ৫২ থেকে ৬০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হচ্ছে, যার সম্ভাব্য বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শামীম আহমেদ বলেন, এবারের তরমুজ উৎপাদন ভোলার কৃষি খাতে একটি মাইলফলক।

কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তি ও সঠিক কৃষি ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করায় ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, আদ্রতাসহ আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর ভোলায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের টার্গেট ছিলো তার মধ্যে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ উৎপাদন করা হয়েছে।

এ সাফল্য ভবিষ্যতে তরমুজ চাষকে আরও প্রসারিত করবে। অত্যন্ত লাভজনক ফলন ও বাজারমূল্যের কারণে কৃষকদের মধ্যে তরমুজ চাষে নতুন আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এ বছর কৃষকদের সাফল্য শুধু তাদের জীবনমান উন্নত করবে না, বরং ভোলার অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারসহ সম্ভাবনাময় কৃষি খাতকে আরও সমৃদ্ধ করবে।