Dhaka ০৪:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় দ্রুত ও কার্যকর বিচারের দাবিতে এনজিওসমূহের সংবাদ সম্মেলন

  • ডেক্স নিউজ:
  • Update Time : ০৭:৫৩:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
  • ৮৫ Time View

 ঢাকা, ১৬ মার্চ ২০২৫: দেশে শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতার ক্রমবর্ধমান ঘটনা ও এর জেরে ছড়িয়ে পড়া জনমত ও বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং সেভ দ্য চিলড্রেন যৌথভাবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি ও বক্তারা শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং অপরাধীদের দ্রুত ও কার্যকর আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা সরকারের প্রতি যৌন সহিংসতা প্রতিরোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান এবং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

সম্প্রতি মাগুরায় ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে নির্মম নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা সমাজে শিশুদের নিরাপত্তাহীনতার করুণ বাস্তবতা তুলে ধরেছে। শিশুদের প্রতি এমন সহিংসতা শুধু তাদের জীবনের নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলছে না, বরং জাতির নৈতিকতা ও সাংবিধানিক মূল্যবোধকেও গভীরভাবে আঘাত করছে। বক্তারা এসব অপরাধের বিরুদ্ধে নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙার, অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার এবং শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও সহানুভূতিশীল পরিবেশ গড়ে তোলার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে চলমান জনমত ও বিক্ষোভের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। তারা সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি শিশু সুরক্ষায় আরও কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

বক্তারা শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে একটি “শিশু সংস্কার কমিশন” গঠনের আহ্বান জানান, যা নীতিনির্ধারকদের কাছে শিশু সুরক্ষা ইস্যুগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি, আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়নে সহায়ক হবে।

সম্মেলনের শেষে, বক্তারা জোর দিয়ে বলেন যে শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, শিশু সুরক্ষাকে নীতিগত ও কার্যক্রমগত সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করতে এবং এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে।

বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন: তামান্না হক রীতি, সমন্বয়ক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক); মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, পরিচালক- প্রোগ্রাম অ্যান্ড প্ল্যানিং, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স; শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন; কবিতা বোস, কান্ট্রি ডিরেক্টর, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ; আবদুল্লা আল মামুন, পরিচালক, শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকার বিষয়ক সুশাসন, সেভ দ্য চিলড্রেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। এছাড়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক, নিশাত সুলতানা।

বর্তমান সংকট মোকাবিলার জন্য কিছু দাবি উপস্থাপন করা হয়:

▪ আইনের সংস্কার ও দ্রুত বিচার: শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলাগুলির দ্রুত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হোক। অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যেন তারা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই আইন উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতির জন্য যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ধর্ষণের মামলায় তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। আর বিচার শেষ করতে হবে ৯০ দিনের মধ্যে। সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও বিচার বিষয়ে আইন উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হোক।

▪ শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা: শিশুদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মতো একটি শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর স্থাপন করা হোক, যা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করবে।

▪ শিশু সংস্কার কমিশন গঠন: শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ক একটি সংস্কার কমিশন জরুরী ভিত্তিতে গঠন করা হোক, যা সকল অংশীজনের সাথে পরামর্শের মাধ্যমে শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করবে এবং অন্যান্য সংস্কার কমিশনের মতো তা প্রধান উপদেষ্টাকে হস্তান্তর করবে।

▪ পারিবারিক সুরক্ষা নিশ্চিত: পরিবারে সদস্য ও নিকট আত্মীয়দের দ্বারা যৌন নির্যাতনের বিষয়ে নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙতে ব্যাপক জনসচেতনতামুলক কর্মসূচিগ্রহণ করা হোক, যেন ভুক্তভোগীরা নিরাপদে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারে।

▪ শিশু সুরক্ষা আইন প্রয়োগ: শিশু সুরক্ষা সম্পর্কিত বিদ্যমান আইনগুলির কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হোক এবং প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করা হোক।

▪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুরক্ষা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ এবং সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক।

▪ মনিটরিং ও মূল্যায়ন: শিশু নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে একটি স্বতন্ত্র মনিটরিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা হোক।

▪ মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা: নির্যাতিত শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও পুনর্বাসন সেবা নিশ্চিত করা হোক।

▪ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা: সকল নাগরিক, বিশেষ করে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হোক।

▪ শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি: ক্ষতিকর সামাজিক রীতি ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার সংস্কৃতি পরিবর্তনে জাতীয় পর্যায়ে প্রচার ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হোক।

▪ ভুক্তভোগীদের সহায়তা: সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালী ও সহজপ্রাপ্য করা হোক, যার মধ্যে কাউন্সেলিং, আইনি সহায়তা, ও পুনর্বাসন সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

▪ স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা: নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে কমিউনিটি নেতা, শিক্ষক, ও অভিভাবকদের সক্রিয় সংলাপে যুক্ত করা হোক।

▪ শিশু হেল্প ডেস্ক: সকল থানায় শিশু হেল্প ডেস্ককে কার্যকর করতে হবে।

▪ ঘটনার শিকার ও সাক্ষীর সুরক্ষা: সহিংসতার শিকার শিশু, শিশুর পরিবার ও ঘটনার সাক্ষীদের জন্য সুরক্ষা আইনগত ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক।

▪ হটলাইনকে কার্যকর ও করা: ১০৯ ও ১০৯৮ নম্বরে আসা অভিযোগ এবং তার পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জবাবদিহিতা মূলক নিয়মিত রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক।

▪ একটি কার্যকর হটলাইন: নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৪/৭ নতুন হটলাইন চালু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। ০১৩২০-০০২০০১, ০১৩২০-০০২০০২ ও ০১৩২০-০০২২২২। একাধিক হটলাইনের পরিবর্তে বিদ্যমান নম্বরগুলিকে আরও কার্যকর করে বিভ্রান্তি এবং অস্পষ্টতা হ্রাস করা যায় কিনা তা বিবেচনা করা হোক।

▪ UNCRC পর্যায়ক্রমিক রাষ্ট্রীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন: জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের (UNCRC) অধীনে ষষ্ঠ ও সপ্তম পর্যায়ক্রমিক রাষ্ট্রীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করার মাধ্যমে শিশুঅধিকার সুরক্ষা, উন্নয়ন ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

ফুলবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে লীজকৃত কানাহার পুকুর নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মত বিনিময় সভা

শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় দ্রুত ও কার্যকর বিচারের দাবিতে এনজিওসমূহের সংবাদ সম্মেলন

Update Time : ০৭:৫৩:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

 ঢাকা, ১৬ মার্চ ২০২৫: দেশে শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতার ক্রমবর্ধমান ঘটনা ও এর জেরে ছড়িয়ে পড়া জনমত ও বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং সেভ দ্য চিলড্রেন যৌথভাবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি ও বক্তারা শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং অপরাধীদের দ্রুত ও কার্যকর আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা সরকারের প্রতি যৌন সহিংসতা প্রতিরোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান এবং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

সম্প্রতি মাগুরায় ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে নির্মম নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা সমাজে শিশুদের নিরাপত্তাহীনতার করুণ বাস্তবতা তুলে ধরেছে। শিশুদের প্রতি এমন সহিংসতা শুধু তাদের জীবনের নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলছে না, বরং জাতির নৈতিকতা ও সাংবিধানিক মূল্যবোধকেও গভীরভাবে আঘাত করছে। বক্তারা এসব অপরাধের বিরুদ্ধে নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙার, অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার এবং শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও সহানুভূতিশীল পরিবেশ গড়ে তোলার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে চলমান জনমত ও বিক্ষোভের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। তারা সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি শিশু সুরক্ষায় আরও কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

বক্তারা শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে একটি “শিশু সংস্কার কমিশন” গঠনের আহ্বান জানান, যা নীতিনির্ধারকদের কাছে শিশু সুরক্ষা ইস্যুগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি, আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়নে সহায়ক হবে।

সম্মেলনের শেষে, বক্তারা জোর দিয়ে বলেন যে শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, শিশু সুরক্ষাকে নীতিগত ও কার্যক্রমগত সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করতে এবং এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে।

বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন: তামান্না হক রীতি, সমন্বয়ক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক); মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, পরিচালক- প্রোগ্রাম অ্যান্ড প্ল্যানিং, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স; শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন; কবিতা বোস, কান্ট্রি ডিরেক্টর, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ; আবদুল্লা আল মামুন, পরিচালক, শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকার বিষয়ক সুশাসন, সেভ দ্য চিলড্রেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। এছাড়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক, নিশাত সুলতানা।

বর্তমান সংকট মোকাবিলার জন্য কিছু দাবি উপস্থাপন করা হয়:

▪ আইনের সংস্কার ও দ্রুত বিচার: শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলাগুলির দ্রুত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হোক। অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যেন তারা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই আইন উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতির জন্য যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ধর্ষণের মামলায় তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। আর বিচার শেষ করতে হবে ৯০ দিনের মধ্যে। সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও বিচার বিষয়ে আইন উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হোক।

▪ শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা: শিশুদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মতো একটি শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর স্থাপন করা হোক, যা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করবে।

▪ শিশু সংস্কার কমিশন গঠন: শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ক একটি সংস্কার কমিশন জরুরী ভিত্তিতে গঠন করা হোক, যা সকল অংশীজনের সাথে পরামর্শের মাধ্যমে শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করবে এবং অন্যান্য সংস্কার কমিশনের মতো তা প্রধান উপদেষ্টাকে হস্তান্তর করবে।

▪ পারিবারিক সুরক্ষা নিশ্চিত: পরিবারে সদস্য ও নিকট আত্মীয়দের দ্বারা যৌন নির্যাতনের বিষয়ে নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙতে ব্যাপক জনসচেতনতামুলক কর্মসূচিগ্রহণ করা হোক, যেন ভুক্তভোগীরা নিরাপদে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারে।

▪ শিশু সুরক্ষা আইন প্রয়োগ: শিশু সুরক্ষা সম্পর্কিত বিদ্যমান আইনগুলির কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হোক এবং প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করা হোক।

▪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুরক্ষা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ এবং সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক।

▪ মনিটরিং ও মূল্যায়ন: শিশু নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে একটি স্বতন্ত্র মনিটরিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা হোক।

▪ মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা: নির্যাতিত শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও পুনর্বাসন সেবা নিশ্চিত করা হোক।

▪ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা: সকল নাগরিক, বিশেষ করে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হোক।

▪ শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি: ক্ষতিকর সামাজিক রীতি ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার সংস্কৃতি পরিবর্তনে জাতীয় পর্যায়ে প্রচার ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হোক।

▪ ভুক্তভোগীদের সহায়তা: সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালী ও সহজপ্রাপ্য করা হোক, যার মধ্যে কাউন্সেলিং, আইনি সহায়তা, ও পুনর্বাসন সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

▪ স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা: নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে কমিউনিটি নেতা, শিক্ষক, ও অভিভাবকদের সক্রিয় সংলাপে যুক্ত করা হোক।

▪ শিশু হেল্প ডেস্ক: সকল থানায় শিশু হেল্প ডেস্ককে কার্যকর করতে হবে।

▪ ঘটনার শিকার ও সাক্ষীর সুরক্ষা: সহিংসতার শিকার শিশু, শিশুর পরিবার ও ঘটনার সাক্ষীদের জন্য সুরক্ষা আইনগত ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক।

▪ হটলাইনকে কার্যকর ও করা: ১০৯ ও ১০৯৮ নম্বরে আসা অভিযোগ এবং তার পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জবাবদিহিতা মূলক নিয়মিত রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক।

▪ একটি কার্যকর হটলাইন: নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৪/৭ নতুন হটলাইন চালু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। ০১৩২০-০০২০০১, ০১৩২০-০০২০০২ ও ০১৩২০-০০২২২২। একাধিক হটলাইনের পরিবর্তে বিদ্যমান নম্বরগুলিকে আরও কার্যকর করে বিভ্রান্তি এবং অস্পষ্টতা হ্রাস করা যায় কিনা তা বিবেচনা করা হোক।

▪ UNCRC পর্যায়ক্রমিক রাষ্ট্রীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন: জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের (UNCRC) অধীনে ষষ্ঠ ও সপ্তম পর্যায়ক্রমিক রাষ্ট্রীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করার মাধ্যমে শিশুঅধিকার সুরক্ষা, উন্নয়ন ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।