Dhaka ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪৪ কোটি টাকা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর। এই বন্দরে নতুন অর্থ বছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কয়েক বছর ধরেই রাজস্ব ঘাটতিতে থাকছে বন্দরটি বলে জানান কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এবারো ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতিতে পড়েছে হিলি স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ। অর্থ বছরের প্রথম ৮ মাসে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৩৮ কোটি টাকা। ফলে ৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে হিলি কাস্টমস শুল্ক স্টেশন।

কম শুল্কযুক্ত ও শুল্কমুক্ত পণ্য বেশি আমদানি হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতিতে প্রভাব পড়েছে বলে দাবি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর এলাকার রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা ও কাস্টমসের অসহযোগিতাকে দায়ি করছে বন্দরের ব্যবসায়ীরা।

হিলি কাস্টমস শুল্ক স্টেশনের তথ্যমতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হিলি শুল্ক স্টেশন থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে ৭৪০ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা; বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৫৫ কোটি আট লাখ টাকা। অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা; বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ কোটি ২১ লাখ টাকা বিপরীতে এসেছে ৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। জানুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৯ কোটি ৩১ লাখা টাকা আর ফেব্রুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১ কোটি ৬১ লাখ টাকা যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭০ কোটি ২ লাখ টাকা। এতে অর্থ বছরের প্রথম ৮ মাসে বন্দরে রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা

বন্দরের আমদানিকারক মোঃ নাজমুল হক বলেন, রাজস্ব ঘাটতির মূল কারণ হলো বন্দরের রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা। দীর্ঘ দিন থেকে বন্দরের ফোরলেন রাস্তার কাজ জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণ দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে বন্দরের চারমাথা মোড় থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত মেইন সড়কের বেহাল অবস্থা। বর্ষাকালে রাস্তার বেহাল দশার কারণে ট্রাকের ড্রাইভার একবার হিলি আসলে আর দ্বিতীয় বার আসতে চায় না।

আবার এই বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয় যেমন চাল-ডাল, খৈল, ভুসি, ভুট্টা ও পেঁয়াজসহ অধিকাংশই শুল্কমুক্ত। সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় চাল। এতে যে শুল্ক ছিল সরকার সেটি প্রত্যাহার করেছে। এ কারণে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। আরেকটি কারণ হলো আগে প্রচুর পরিমাণ ফল আমদানি হতো। কিন্তু সরকার ট্রাকের চাকা অনুযায়ী শুল্কায়নের প্রথা চালু রাখায় এই বন্দর দিয়ে ফল আমদানি বন্ধ আছে। এটি যদি উন্মুক্ত করে দিতো অর্থাৎ যে যতটুকু পণ্য আমদানি করবে, সেই পরিমাণ পণ্যের শুল্ক দেবে তাহলে প্রচুর পরিমাণ ফল আমদানি হতো।

তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও এখানে বৈষম্য আছে। বেনাপোলে যে পণ্য সাড়ে তিন ডলারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে একই পণ্য হিলি বন্দরে পাঁচ ডলারে শুল্কায়ন করা হয়। ফলে আমদানিকারকরা এই বন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব জটিলতা কাটলে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বাড়বে, সেইসঙ্গে রাজস্বও বাড়বে। এসব জটিলতা কাটলে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বাড়বে, সেইসঙ্গে রাজস্বও বাড়বে।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন বলেন, যেসব পণ্যের ওপরে রাজস্ব বেশি সেগুলো হিলি দিয়ে আমদানি হয় না। কারণ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এইচএস কোড ও শুল্ক নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে। ফলে ওসব পণ্য বেনাপোল দিয়ে আমদানি হয়। ফলে সরকারের রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা সেটিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আমরা চাই এসব জটিলতা দ্রুত কাটুক এবং হিলি কাস্টমসের রাজস্ব আয় আরো বাড়ুক।

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বলেন, এই শুল্ক স্টেশন দিয়ে কম শুল্কযুক্ত ও শুল্ক মুক্ত পণ্য বেশি আমদানি হবার কারণে রাজস্ব আদায়ে কিছু ঘাটতি রয়েছে। তবে অর্থ বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব। কারণ গত ফেব্রুয়ারি মাসে লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি রাজস্ব এসেছে বেশি শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানির কারণে। বিশেষ করে জিরা, এলাচ সহ মসলা পণ্যের আমদানি বাড়লে রাজস্ব ঘাটতি হবে না বলে আশা করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪৪ কোটি টাকা

Update Time : ০৭:৫৬:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর। এই বন্দরে নতুন অর্থ বছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কয়েক বছর ধরেই রাজস্ব ঘাটতিতে থাকছে বন্দরটি বলে জানান কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এবারো ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতিতে পড়েছে হিলি স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ। অর্থ বছরের প্রথম ৮ মাসে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৩৮ কোটি টাকা। ফলে ৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে হিলি কাস্টমস শুল্ক স্টেশন।

কম শুল্কযুক্ত ও শুল্কমুক্ত পণ্য বেশি আমদানি হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতিতে প্রভাব পড়েছে বলে দাবি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর এলাকার রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা ও কাস্টমসের অসহযোগিতাকে দায়ি করছে বন্দরের ব্যবসায়ীরা।

হিলি কাস্টমস শুল্ক স্টেশনের তথ্যমতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হিলি শুল্ক স্টেশন থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে ৭৪০ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা; বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৫৫ কোটি আট লাখ টাকা। অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা; বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ কোটি ২১ লাখ টাকা বিপরীতে এসেছে ৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। জানুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৯ কোটি ৩১ লাখা টাকা আর ফেব্রুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১ কোটি ৬১ লাখ টাকা যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭০ কোটি ২ লাখ টাকা। এতে অর্থ বছরের প্রথম ৮ মাসে বন্দরে রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা

বন্দরের আমদানিকারক মোঃ নাজমুল হক বলেন, রাজস্ব ঘাটতির মূল কারণ হলো বন্দরের রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা। দীর্ঘ দিন থেকে বন্দরের ফোরলেন রাস্তার কাজ জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণ দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে বন্দরের চারমাথা মোড় থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত মেইন সড়কের বেহাল অবস্থা। বর্ষাকালে রাস্তার বেহাল দশার কারণে ট্রাকের ড্রাইভার একবার হিলি আসলে আর দ্বিতীয় বার আসতে চায় না।

আবার এই বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয় যেমন চাল-ডাল, খৈল, ভুসি, ভুট্টা ও পেঁয়াজসহ অধিকাংশই শুল্কমুক্ত। সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় চাল। এতে যে শুল্ক ছিল সরকার সেটি প্রত্যাহার করেছে। এ কারণে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। আরেকটি কারণ হলো আগে প্রচুর পরিমাণ ফল আমদানি হতো। কিন্তু সরকার ট্রাকের চাকা অনুযায়ী শুল্কায়নের প্রথা চালু রাখায় এই বন্দর দিয়ে ফল আমদানি বন্ধ আছে। এটি যদি উন্মুক্ত করে দিতো অর্থাৎ যে যতটুকু পণ্য আমদানি করবে, সেই পরিমাণ পণ্যের শুল্ক দেবে তাহলে প্রচুর পরিমাণ ফল আমদানি হতো।

তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও এখানে বৈষম্য আছে। বেনাপোলে যে পণ্য সাড়ে তিন ডলারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে একই পণ্য হিলি বন্দরে পাঁচ ডলারে শুল্কায়ন করা হয়। ফলে আমদানিকারকরা এই বন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব জটিলতা কাটলে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বাড়বে, সেইসঙ্গে রাজস্বও বাড়বে। এসব জটিলতা কাটলে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বাড়বে, সেইসঙ্গে রাজস্বও বাড়বে।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন বলেন, যেসব পণ্যের ওপরে রাজস্ব বেশি সেগুলো হিলি দিয়ে আমদানি হয় না। কারণ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এইচএস কোড ও শুল্ক নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে। ফলে ওসব পণ্য বেনাপোল দিয়ে আমদানি হয়। ফলে সরকারের রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা সেটিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আমরা চাই এসব জটিলতা দ্রুত কাটুক এবং হিলি কাস্টমসের রাজস্ব আয় আরো বাড়ুক।

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বলেন, এই শুল্ক স্টেশন দিয়ে কম শুল্কযুক্ত ও শুল্ক মুক্ত পণ্য বেশি আমদানি হবার কারণে রাজস্ব আদায়ে কিছু ঘাটতি রয়েছে। তবে অর্থ বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব। কারণ গত ফেব্রুয়ারি মাসে লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি রাজস্ব এসেছে বেশি শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানির কারণে। বিশেষ করে জিরা, এলাচ সহ মসলা পণ্যের আমদানি বাড়লে রাজস্ব ঘাটতি হবে না বলে আশা করেন তিনি।