Dhaka ১০:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অবৈধ কারখানায় অবাধে তৈরি হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন, হুমকির মুখে পরিবেশ ও জনজীবন

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবৈধ কারখানায় অবাধে তৈরি করা হচ্ছে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ পলিথিন। ওই নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা থেকে অনবরত ছড়াচ্ছে বিষাক্ত অদৃশ্য গ্যাস। এতে মারাক্তকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ দূষণ ও জনজীবন। তবে অচিরেই নিষিদ্ধ পলিথিনের অবৈধ কারখানাটি উচ্ছেদসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী এলাকাবাসীর।

এলাকাবাসী, কারখানা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পলিথিন না পচে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্টের মাধ্যমে কৃষিকে ক্ষতিগ্রস্থ ও পরিবেশ দূষণ করে। এসব কারণে ২০০২ সালে ১ মার্চ আইন করে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ সরকার। তবুও দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি, বরং এর উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়তে দেখা গেছে। এরপর ২০১০ সালে আরেকটি আইন করে। কিন্তু এই আইনও বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি।

এ সুযোগে কয়েক মাস আগে কালিয়াকৈর পালপাড়া এলাকায় জাহাঙ্গীর ও আলমগীর গংদের জমি ভাড়া নিয়ে নিষিদ্ধ পলিথিনের অবৈধ কারখানা গড়ে তুলেছেন বহিরাগত আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি পুলিশ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানাটি চালাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন জমির মালিক জাহাঙ্গীর আলম। আর এভাবেই সেখানে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। ওই অবৈধ কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি করা হয়।

এসব পলিথিন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ঘনবসতিপুর্ণ এলাকায় পলিথিন তৈরির কাজে কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরাতন প্লাষ্টিক। প্রথমে পুরাতন প্লাস্টিক ও কনটিনসহ বিভিন্ন ভাঙ্গারি আসবাবপত্র থেকে পলিথিন তৈরির কাঁচামাল উৎপাদন করা হয়। পরে ওই কাঁচামাল গুলো গলিয়ে পলিথিনে রুপান্তর করা হয়। আর এই কাজ সম্পূর্ণ করতে সৃষ্টি হয় এক অদৃশ্য ক্ষতিকর গ্যাসের। এসব পুরাতন প্লাষ্টিক রিসাইক্লিন করায় ব্যাপকভাবে বায়ু দূষণ হয়ে বিপর্যস্ত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। যা জনজীবনের জন্য খুবই ঝুঁকি। ওই অবৈধ কারখানার পলিথিন তৈরির গন্ধে শ্বাস-প্রশ্বাস, চর্মরোগ, লিভার, কিডনি ড্যামেজসহ সৃষ্টি হতে পারে মরনঘাতি ক্যান্সারেরও।

সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধা ও গর্ভবতী নারীরা। ওই এলাকার বেশিরভাগ লোক হিন্দু-সম্প্রদায় হওয়ায় তারা ভয়ে কিছু বলতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে এই নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। যা এই কৃষি প্রধান দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। এছাড়াও ডাস্টবিনে ফেলা এসব পলিথিন বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনে ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার মানুষ ছাড়াও বিপুলসংখ্যক পশুপাখিসহ জলজপ্রাণীও।

স্থানীয় অখিল চন্দ্র, মঞ্জুরুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, সেলিম রেজা, আবির জানান, ওই অবৈধ কারখানায় অবাধে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি করায় পরিবেশ নষ্টসহ এলাকার লোকজনের ক্ষতি হচ্ছে। এখানে বেশিরভাগ হিন্দুসম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় তারা কিছু করতে পারছেন না। ফলে পলিথিন তৈরির অদৃশ্য ক্ষতিকর গ্যাসের সাথে যুদ্ধ করেই নিজেদের মানিয়ে নিয়ে জীবন-যাপন করছেন শিশুসহ এখানকার মানুষ। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, দূষণ রোধে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানাটি অচিরে বন্ধের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কাগজপত্র না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ওই কারখানার মালিক আবুল কালাম মোবাইল ফোনে জানান, পলিথিনের ব্যাগ সব জায়গায়ই চলে। সারা দেশেই পলিথিন উৎপাদন করা হচ্ছে আমিও করছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, ওই নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানার খবর পেয়ে ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। তবে আমরা ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে অচিরেই অভিযান চালিয়ে ওই নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা উচ্ছেদ করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

খুলনার আড়ংঘাটায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে এক জন আহত হয়েছেন

অবৈধ কারখানায় অবাধে তৈরি হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন, হুমকির মুখে পরিবেশ ও জনজীবন

Update Time : ০৪:৩৪:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবৈধ কারখানায় অবাধে তৈরি করা হচ্ছে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ পলিথিন। ওই নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা থেকে অনবরত ছড়াচ্ছে বিষাক্ত অদৃশ্য গ্যাস। এতে মারাক্তকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ দূষণ ও জনজীবন। তবে অচিরেই নিষিদ্ধ পলিথিনের অবৈধ কারখানাটি উচ্ছেদসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী এলাকাবাসীর।

এলাকাবাসী, কারখানা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পলিথিন না পচে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্টের মাধ্যমে কৃষিকে ক্ষতিগ্রস্থ ও পরিবেশ দূষণ করে। এসব কারণে ২০০২ সালে ১ মার্চ আইন করে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ সরকার। তবুও দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি, বরং এর উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়তে দেখা গেছে। এরপর ২০১০ সালে আরেকটি আইন করে। কিন্তু এই আইনও বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি।

এ সুযোগে কয়েক মাস আগে কালিয়াকৈর পালপাড়া এলাকায় জাহাঙ্গীর ও আলমগীর গংদের জমি ভাড়া নিয়ে নিষিদ্ধ পলিথিনের অবৈধ কারখানা গড়ে তুলেছেন বহিরাগত আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি পুলিশ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানাটি চালাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন জমির মালিক জাহাঙ্গীর আলম। আর এভাবেই সেখানে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। ওই অবৈধ কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি করা হয়।

এসব পলিথিন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ঘনবসতিপুর্ণ এলাকায় পলিথিন তৈরির কাজে কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরাতন প্লাষ্টিক। প্রথমে পুরাতন প্লাস্টিক ও কনটিনসহ বিভিন্ন ভাঙ্গারি আসবাবপত্র থেকে পলিথিন তৈরির কাঁচামাল উৎপাদন করা হয়। পরে ওই কাঁচামাল গুলো গলিয়ে পলিথিনে রুপান্তর করা হয়। আর এই কাজ সম্পূর্ণ করতে সৃষ্টি হয় এক অদৃশ্য ক্ষতিকর গ্যাসের। এসব পুরাতন প্লাষ্টিক রিসাইক্লিন করায় ব্যাপকভাবে বায়ু দূষণ হয়ে বিপর্যস্ত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। যা জনজীবনের জন্য খুবই ঝুঁকি। ওই অবৈধ কারখানার পলিথিন তৈরির গন্ধে শ্বাস-প্রশ্বাস, চর্মরোগ, লিভার, কিডনি ড্যামেজসহ সৃষ্টি হতে পারে মরনঘাতি ক্যান্সারেরও।

সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধা ও গর্ভবতী নারীরা। ওই এলাকার বেশিরভাগ লোক হিন্দু-সম্প্রদায় হওয়ায় তারা ভয়ে কিছু বলতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে এই নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। যা এই কৃষি প্রধান দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। এছাড়াও ডাস্টবিনে ফেলা এসব পলিথিন বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনে ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার মানুষ ছাড়াও বিপুলসংখ্যক পশুপাখিসহ জলজপ্রাণীও।

স্থানীয় অখিল চন্দ্র, মঞ্জুরুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, সেলিম রেজা, আবির জানান, ওই অবৈধ কারখানায় অবাধে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি করায় পরিবেশ নষ্টসহ এলাকার লোকজনের ক্ষতি হচ্ছে। এখানে বেশিরভাগ হিন্দুসম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় তারা কিছু করতে পারছেন না। ফলে পলিথিন তৈরির অদৃশ্য ক্ষতিকর গ্যাসের সাথে যুদ্ধ করেই নিজেদের মানিয়ে নিয়ে জীবন-যাপন করছেন শিশুসহ এখানকার মানুষ। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, দূষণ রোধে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানাটি অচিরে বন্ধের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কাগজপত্র না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ওই কারখানার মালিক আবুল কালাম মোবাইল ফোনে জানান, পলিথিনের ব্যাগ সব জায়গায়ই চলে। সারা দেশেই পলিথিন উৎপাদন করা হচ্ছে আমিও করছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, ওই নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানার খবর পেয়ে ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। তবে আমরা ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে অচিরেই অভিযান চালিয়ে ওই নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা উচ্ছেদ করা হবে।