গাজীপুরের কালিয়াকৈরে স্থানীয় যুবদল নেতার নেতৃত্বে একটি সোয়েটার কারখানার বিক্ষুব্দ শ্রমিকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। তাদের হামলায় কমপক্ষে ১০জন শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় একাধিক শ্রমিক নিহতের গুজবে উত্তাপ্ত হয়ে উঠে কারখানা পরিবেশ। ক্ষিপ্ত হয়ে ওই কারখানায় ব্যাপক ভাংচুর চালায় শ্রমিকরা। রবিবার সকাল থেকে উপজেলার ভান্নারা বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী, কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার ভান্নারা বটতলা এলাকায় দাইয়ু বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি সোয়েটার কারখানা রয়েছে। ওই কারখানার শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন, ঈদ বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধি, বাৎসরিক ছুটির টাকা, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গেলে শ্রম আইন অনুযায়ী টাকা দেয়াসহ ৯ দফা দাবিতে গত দুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় রবিবার সকালেও কাজে যোগ না দিয়ে কারখানায় বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। কিন্তু ওই কারখানার সুবিধা ভোগী স্থানীয় বাসিন্দা ও গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় ওই কারখানার ১০জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দিয়েছেন সহকর্মীরা। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম ঠিকানা জানা যায়নি। কিন্তু এ হামলার ঘটনায় একাধিক শ্রমিক নিহতের গুজব ছড়িয়ে পড়লে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন শ্রমিকরা। এক পর্যায় বিক্ষুব্দ শ্রমিক এবং ওই যুবদল নেতা ও তার সহযোগীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে ওই কারখানার পাশে যুবদল নেতা মনিরুজ্জামানের একটি মুদি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে উত্তেজিত শ্রমিকরা। এসময় বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা ওই কারখানায় ব্যাপক ভাংচর চালায়। দুপুরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে পুলিশ। কিন্তু এ ঘটনায় ওই কারখানা এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করে।
বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা জানান, গত দুইদিন ধরে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। এর ধারাবাহিকতায় রবিবার সকালেও শ্রমিকরা ওই কারখানায় বিক্ষোভ শুরু হলে স্থানীয় যুবদলের নেতাকর্মীরা তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে একাধিক শ্রমিক নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়ে।
অভিযুক্ত গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য মো. মনিরুজ্জামান জানান, ওই কারখানার মালিকের ডাকে সারা দিয়ে আমরা স্থানীয়রা সকালে কারখানায় গিয়েছিলাম। তবে আমরা শ্রমিকদের উপর কোনো হামলা চালায়নি। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোক যারা আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করে তারা মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে শ্রমিকদের উত্তেজিত করে তুলেছে। অথচ শ্রমিকরা শ্রমিকরা আমার দোকানে হামলা চালিয়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।
এব্যাপারে কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আব্দুস সেলিম জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ওই কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।