Dhaka ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবনে বনদস্যুদের মুক্তিপণ দিয়েও বাড়ি ফিরতে পারেনি দুই মাছ ধরার জেলে

সুন্দরবনে বনদস্যুদের হাতে অপহৃত দুই জেলে মুক্তিপণ পরিশোধ করার পরও এখনও বাড়িতে ফিরতে পারেনি। গত সপ্তাহে সুন্দরবনের ফিরিঙ্গি ও ডিঙিমারী এলাকা থেকে মফিজুর রহমান (৪৫) ও আব্দুর রহিম (২৮) নামের দুই জেলেকে অপহরণ করা হয়। তারা সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর গ্রামের মৃত নেছার শেখ ও আশরাফ আলী গাজীর ছেলে।
জানা যায়, অপহরণের পর বনদস্যুরা তাদের কাছ থেকে ৩৫ হাজার ও ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ পরিশোধের পরেও গত পাঁচ দিন পার হয়ে গেলেও দুই জেলে তাদের পরিবারের কাছে ফিরতে পারেনি, যা তাদের পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবে রবিউল ইসলাম নামের আরেক জেলে, যিনি আগুনজ্বালা এলাকা থেকে একই বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছিলেন, তিনদিন পর রোববার বাড়িতে ফিরেছেন।
অপহৃত দুই জেলের পরিবার ও তাদের সহযোগী জেলেরা জানান, গত সপ্তাহে মাছ শিকারে যাওয়ার পর ‘দুলাভাই বাহিনী’ নামক একটি জলদস্যু দল মফিজুর ও আব্দুর রহিমকে অপহরণ করে। এই বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের পরিচয় দেয় ‘দুলাভাই বাহিনী’ হিসেবে, যদিও এর আগে গাজী বাহিনীর নামে দস্যুতা চালিয়ে আসছিল তারা।
ফিরে আসা জেলে রবিউল ইসলাম জানান, এই বাহিনী মোট নয় সদস্যের এবং প্রত্যেক সদস্য একটি করে অস্ত্র বহন করছে। তারা ২০১৮ সালে র‌্যাবের হাতে অস্ত্র সমর্পণ করলেও পুনরায় সুন্দরবনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর এলাকার আবজাল এবং তার শ্যালক রবিউল।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, অপহরণের শিকার জেলেদের স্বজনরা এই ঘটনা তাদের কাছ গোপন করে রাখেন এবং জলদস্যুদের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় গিয়ে মুক্তিপণ পরিশোধ করেন।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, সুন্দরবনের ভেতরে অভিযান চালানো খুবই কঠিন এবং অন্যান্য বাহিনীর সহায়তা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। অপহৃত জেলেদের স্বজনরা থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে নিরাপত্তার কারণে তারা গোপন সমঝোতায় স্বজনদের মুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

সুন্দরবনে বনদস্যুদের মুক্তিপণ দিয়েও বাড়ি ফিরতে পারেনি দুই মাছ ধরার জেলে

Update Time : ০৯:৪৯:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
সুন্দরবনে বনদস্যুদের হাতে অপহৃত দুই জেলে মুক্তিপণ পরিশোধ করার পরও এখনও বাড়িতে ফিরতে পারেনি। গত সপ্তাহে সুন্দরবনের ফিরিঙ্গি ও ডিঙিমারী এলাকা থেকে মফিজুর রহমান (৪৫) ও আব্দুর রহিম (২৮) নামের দুই জেলেকে অপহরণ করা হয়। তারা সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর গ্রামের মৃত নেছার শেখ ও আশরাফ আলী গাজীর ছেলে।
জানা যায়, অপহরণের পর বনদস্যুরা তাদের কাছ থেকে ৩৫ হাজার ও ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ পরিশোধের পরেও গত পাঁচ দিন পার হয়ে গেলেও দুই জেলে তাদের পরিবারের কাছে ফিরতে পারেনি, যা তাদের পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবে রবিউল ইসলাম নামের আরেক জেলে, যিনি আগুনজ্বালা এলাকা থেকে একই বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছিলেন, তিনদিন পর রোববার বাড়িতে ফিরেছেন।
অপহৃত দুই জেলের পরিবার ও তাদের সহযোগী জেলেরা জানান, গত সপ্তাহে মাছ শিকারে যাওয়ার পর ‘দুলাভাই বাহিনী’ নামক একটি জলদস্যু দল মফিজুর ও আব্দুর রহিমকে অপহরণ করে। এই বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের পরিচয় দেয় ‘দুলাভাই বাহিনী’ হিসেবে, যদিও এর আগে গাজী বাহিনীর নামে দস্যুতা চালিয়ে আসছিল তারা।
ফিরে আসা জেলে রবিউল ইসলাম জানান, এই বাহিনী মোট নয় সদস্যের এবং প্রত্যেক সদস্য একটি করে অস্ত্র বহন করছে। তারা ২০১৮ সালে র‌্যাবের হাতে অস্ত্র সমর্পণ করলেও পুনরায় সুন্দরবনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর এলাকার আবজাল এবং তার শ্যালক রবিউল।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, অপহরণের শিকার জেলেদের স্বজনরা এই ঘটনা তাদের কাছ গোপন করে রাখেন এবং জলদস্যুদের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় গিয়ে মুক্তিপণ পরিশোধ করেন।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, সুন্দরবনের ভেতরে অভিযান চালানো খুবই কঠিন এবং অন্যান্য বাহিনীর সহায়তা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। অপহৃত জেলেদের স্বজনরা থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে নিরাপত্তার কারণে তারা গোপন সমঝোতায় স্বজনদের মুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।