Dhaka ০৮:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালের এই দিনকে বলা হয় ‘কালরাত’ জাতীয় গণহত্যা দিবস। এ দিন রাতের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে কুখ্যাত অভিযানের মাধ্যমে তারা গণহত্যা চালায়। পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়াবহতম গণহত্যার শিকার হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজারবাগ ট্যাংক নিয়ে পুলিশ লাইনস, পিলখানার ইপিআর ব্যারাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারসহ ঢাকা এবং সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা হত্যাযঞ্জ চালায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য, বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা করেছিল ।৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এ দিন মাঝরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চ লাইটে’র নীল নকশা অনুযায়ী বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। সেই

গণহত্যার সেই নির্দেশনামা মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। নির্দেশনামার কোনো নথি সংরক্ষণ করা হয়নি। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, ঢাকায় ২৫ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত এই পাঁচ দিনে পাকিস্তানি বাহিনী ১ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী ৯ মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই ঘৃণ্য ইতিহাসকে। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন সেই রাতে ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় এবং গ্রেপ্তার করা হয় ৩ হাজার লোক। ঢাকায় কেবল শুরু হয়েছিল মাত্র। এরপর সারা বাংলায় বাড়তেই থাকল মৃতের সংখ্যা। ওরা মানুষের ঘর-বাড়ি, দোকানপাট লুটপাট করে ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় মৃতদেহ। মৃতদেহগুলো কাক-শকুনের খাবারে পরিণত হয়। সমস্ত বাংলা যেন হয়ে উঠেছিল শ্মশান ভূমি।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এ দিন রাতে নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালির ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে গোপনে বিমানে করে ঢাকা ত্যাগ করে। রাত একটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেড কোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টার গার্ডে আঠারো জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পাল্টা আক্রমণের সুযোগ পাননি। পিলখানা আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারিবাজারসহ সমগ্র ঢাকাতেই শুরু হয় ভয়বহ আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী। মাঝরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢোকে ট্যাংক ও সেনাবোঝাই লরি। ইকবাল হল ও জগন্নাথ হলে চলে বর্বর হত্যাকাণ্ড। শহীদ হন কয়েকশ ছাত্র- ছাত্রী। হত্যা করা হয় ৯ শিক্ষককে। রাজারবাগ পুলিশ সদস্যরা সামান্য অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু ভারী অস্ত্রের মুখে তারা বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।

২৫ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনী স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের প্রধান শহরকে নিয়ন্ত্রণে নিতেই বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালায় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযান চালানোর আগে সকল বিদেশি সাংবাদিকদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বাঙালিদের আক্রমণের পর গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় বাংলাদেশর স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

ব্রহ্মপুত্র নদে ‌নি‌খোঁজ জে‌লের মর‌দেহ উদ্ধার

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ

Update Time : ০৯:৫৭:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালের এই দিনকে বলা হয় ‘কালরাত’ জাতীয় গণহত্যা দিবস। এ দিন রাতের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে কুখ্যাত অভিযানের মাধ্যমে তারা গণহত্যা চালায়। পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়াবহতম গণহত্যার শিকার হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজারবাগ ট্যাংক নিয়ে পুলিশ লাইনস, পিলখানার ইপিআর ব্যারাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারসহ ঢাকা এবং সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা হত্যাযঞ্জ চালায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য, বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা করেছিল ।৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এ দিন মাঝরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চ লাইটে’র নীল নকশা অনুযায়ী বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। সেই

গণহত্যার সেই নির্দেশনামা মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। নির্দেশনামার কোনো নথি সংরক্ষণ করা হয়নি। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, ঢাকায় ২৫ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত এই পাঁচ দিনে পাকিস্তানি বাহিনী ১ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী ৯ মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই ঘৃণ্য ইতিহাসকে। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন সেই রাতে ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় এবং গ্রেপ্তার করা হয় ৩ হাজার লোক। ঢাকায় কেবল শুরু হয়েছিল মাত্র। এরপর সারা বাংলায় বাড়তেই থাকল মৃতের সংখ্যা। ওরা মানুষের ঘর-বাড়ি, দোকানপাট লুটপাট করে ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় মৃতদেহ। মৃতদেহগুলো কাক-শকুনের খাবারে পরিণত হয়। সমস্ত বাংলা যেন হয়ে উঠেছিল শ্মশান ভূমি।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এ দিন রাতে নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালির ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে গোপনে বিমানে করে ঢাকা ত্যাগ করে। রাত একটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেড কোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টার গার্ডে আঠারো জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পাল্টা আক্রমণের সুযোগ পাননি। পিলখানা আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারিবাজারসহ সমগ্র ঢাকাতেই শুরু হয় ভয়বহ আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী। মাঝরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢোকে ট্যাংক ও সেনাবোঝাই লরি। ইকবাল হল ও জগন্নাথ হলে চলে বর্বর হত্যাকাণ্ড। শহীদ হন কয়েকশ ছাত্র- ছাত্রী। হত্যা করা হয় ৯ শিক্ষককে। রাজারবাগ পুলিশ সদস্যরা সামান্য অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু ভারী অস্ত্রের মুখে তারা বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।

২৫ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনী স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের প্রধান শহরকে নিয়ন্ত্রণে নিতেই বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালায় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযান চালানোর আগে সকল বিদেশি সাংবাদিকদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বাঙালিদের আক্রমণের পর গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় বাংলাদেশর স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধ।