Dhaka ১২:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জে ঈদকে সামনে রেখে চোরাচালান বাণিজ্য জমজমাট:২০লাখ টাকার মাল জব্দ

সুনামগঞ্জে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে রমজানের শুরু থেকেই জমজমাট হয়ে উঠে সীমান্ত চোরাচালান বাণিজ্য। অন্যান্য সময় চোরাকারবারী ও সোর্স পরিচয়ধারীদের চোরাচালান সিন্ডিকেড কিছুটা দূর্বল থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে সবাই যেন এক হয়েছে। প্রতিদিন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটিকোটি টাকার মালামাল পাচাঁর ও সীমান্তের পরিবেশ-পরিস্থিতি এমনটাই জানান দিচ্ছে। তবে বিজিবি পৃথক অভিযান চালিয়ে ২০লাখ টাকার মালামাল আটক করেছে কিন্তু চিহ্নিত চোরাকারবারী ও সোর্স পরিচয়ধারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার বহুল আলোচিত চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য খ্যাত তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের পর্যটন স্পট বারেকটিলার আনন্দপুর বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে গত ১৫দিন যাবত চলছে ওপেন চোরাচালান। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থেকে ভোররাত পযন্ত ভারত থেকে শতশত লোক দিয়ে পাচাঁর করা হচ্ছে কোটিকোটি টাকার ফুছকা, চিনি, চাল, জিরা, কম্বল, মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও অস্ত্রসহ গরু ও ঘোড়া। এই সীমন্তের রাজাই, কড়ইগড়া, নয়াছড়া ও রজনী লাইন এলাকা দিয়েও একই ভাবে পাচাঁর করা হচ্ছে কয়লা, চুনাপাথর ও মাদকদ্রব্যসহ আরো বিভিন্ন মালামাল।

এদিকে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন জাদুকাটা নদী ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারত থেকে ৩-৪শ লোক দিয়ে ওপেন কয়েক হাজার মেঃটন পাথর ও কয়লা পাচাঁর করাসহ রাতভর জাদুকাটা নদী পথে পাচাঁর করা হচ্ছে কোটি টাকার মাদক, চিনি ও ফুছকাসহ বিভিন্ন মালামাল। এছাড়াও এই সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্পের ২শ গজ দক্ষিণ দিক থেকে জাদুকাটা নদী তীর কেটে ও শাহ আরেফিন মোকামের নিচ থেকে অবৈধ ভাবে ২০-৩০টা মাহিন্দ্র লড়ি গাড়ি বোঝাই করে ওপেন বালি বিক্রি করছে এলাকার চিহ্নিত চোরাকারবারীরা।

অন্যদিকে দিনে ও রাতে বিরতিহীন ভাবে দল বেঁধে কয়লা ও মাদকদ্রব্যসহ চাল পাচাঁর করা হচ্ছে টেকেরঘাট ও বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা, বুরুঙ্গাছড়া, বড়ছড়া, নিলাদ্রী লেকপাড়সহ টেকেরঘাট হাইস্কুল ও পুলিশ ফাঁড়ির পিছন দিয়ে। এই দুই সীমান্তে দিয়ে পাচাঁর বাণিজ্য করতে গিয়ে ভারত সীমান্তে তৈরি করা সোর্সদের চোরাই কয়লার গুহায় মাটি চাপা পড়ে এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন, বাগলী ছড়া, মাঝের ছড়া, কচুয়া ছড়া এলাকা দিয়ে একাধিক মামলার আসামীরা নিজেকে আইন শৃংখলা বাহিনী সোর্স পরিচয় দিয়ে পৃথক ভাবে প্রতিদিন ভারত থেকে কোটিকোটি টাকার ফুছকা, চিনি, জিরা, কম্বল, শাড়ি-কাপড়, কসমেটিকস, গরু, কয়লা ও মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের পর চাঁদা উত্তোলন করছে।

আর এই চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে এই দুই সীমান্তের অনেকেই রাতারাতি হয়েগেছে কোটিপতি। তাদের মধ্যে মাদক ও বিস্ফোরক মামলার আসামী সীমান্ত গডফাদার তোতলা আজাদের সোর্স কোটিপতি চোরাকারবারী রফ মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর পর চোরাকারবারী ও সোর্স বাহিনীর উৎপাত আরো বেড়ে যায়। এছাড়াও মধ্যনগর উপজেলার বাংগাল ভিটা, মাটিরাবন, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর, চিনাকান্দি, ডলুরা, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নতলা, চিনাউরাসহ দোয়ারা বাজার উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গরু, মহিষ, মাছ, শাড়ি-কাপড়, কসমেটিকস ও মাদকদ্রব্যসহ কোটিকোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের খবর পাওয়া গেছে।

এমতাবস্থায় আজ বুধবার (২৬ মার্চ) ভোর রাতে তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের চোরাচালানের নিরাপদ রোড খ্যাত জাদুকাটা নদীতে ১লাখ ৬০হাজার ৮শ টাকার মূল্যের ৬৭০ কেজি ফুছকা জব্দ করাসহ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নতলা সীমান্তের কামারভিটা নামকস্থানে ১৬লাখ ১৬হাজার টাকা মূল্যের ২০২টি ভারতীয় শাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও আরো ২লাখ ৫৭ হাজার ৩০হাজার টাকার বিভিন্ন মালামাল মালিক বিহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল একেএম জাকারিয়া কাদির সাংবাদিকদের জানান- উর্ধ্বতন সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির অভিযানসহ গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বতোভাবে অব্যাহত রয়েছে। আর সীমান্তের চিহ্নিত চোরাকারবারীদের আইনের আওতায় আনার হবে এবং জব্দ করা মালামাল সুনামগঞ্জ শুল্ক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

উলিপুরে গভীর রাতে রড ছাড়াই আরসিসি রাস্তা ঢালাই জনরোষে ঠিকাদার ও লেবাররা পালিয়ে যায়

সুনামগঞ্জে ঈদকে সামনে রেখে চোরাচালান বাণিজ্য জমজমাট:২০লাখ টাকার মাল জব্দ

জন দেখেছেন : ০৭:৫৫:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

সুনামগঞ্জে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে রমজানের শুরু থেকেই জমজমাট হয়ে উঠে সীমান্ত চোরাচালান বাণিজ্য। অন্যান্য সময় চোরাকারবারী ও সোর্স পরিচয়ধারীদের চোরাচালান সিন্ডিকেড কিছুটা দূর্বল থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে সবাই যেন এক হয়েছে। প্রতিদিন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটিকোটি টাকার মালামাল পাচাঁর ও সীমান্তের পরিবেশ-পরিস্থিতি এমনটাই জানান দিচ্ছে। তবে বিজিবি পৃথক অভিযান চালিয়ে ২০লাখ টাকার মালামাল আটক করেছে কিন্তু চিহ্নিত চোরাকারবারী ও সোর্স পরিচয়ধারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার বহুল আলোচিত চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য খ্যাত তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের পর্যটন স্পট বারেকটিলার আনন্দপুর বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে গত ১৫দিন যাবত চলছে ওপেন চোরাচালান। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থেকে ভোররাত পযন্ত ভারত থেকে শতশত লোক দিয়ে পাচাঁর করা হচ্ছে কোটিকোটি টাকার ফুছকা, চিনি, চাল, জিরা, কম্বল, মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও অস্ত্রসহ গরু ও ঘোড়া। এই সীমন্তের রাজাই, কড়ইগড়া, নয়াছড়া ও রজনী লাইন এলাকা দিয়েও একই ভাবে পাচাঁর করা হচ্ছে কয়লা, চুনাপাথর ও মাদকদ্রব্যসহ আরো বিভিন্ন মালামাল।

এদিকে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন জাদুকাটা নদী ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারত থেকে ৩-৪শ লোক দিয়ে ওপেন কয়েক হাজার মেঃটন পাথর ও কয়লা পাচাঁর করাসহ রাতভর জাদুকাটা নদী পথে পাচাঁর করা হচ্ছে কোটি টাকার মাদক, চিনি ও ফুছকাসহ বিভিন্ন মালামাল। এছাড়াও এই সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্পের ২শ গজ দক্ষিণ দিক থেকে জাদুকাটা নদী তীর কেটে ও শাহ আরেফিন মোকামের নিচ থেকে অবৈধ ভাবে ২০-৩০টা মাহিন্দ্র লড়ি গাড়ি বোঝাই করে ওপেন বালি বিক্রি করছে এলাকার চিহ্নিত চোরাকারবারীরা।

অন্যদিকে দিনে ও রাতে বিরতিহীন ভাবে দল বেঁধে কয়লা ও মাদকদ্রব্যসহ চাল পাচাঁর করা হচ্ছে টেকেরঘাট ও বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা, বুরুঙ্গাছড়া, বড়ছড়া, নিলাদ্রী লেকপাড়সহ টেকেরঘাট হাইস্কুল ও পুলিশ ফাঁড়ির পিছন দিয়ে। এই দুই সীমান্তে দিয়ে পাচাঁর বাণিজ্য করতে গিয়ে ভারত সীমান্তে তৈরি করা সোর্সদের চোরাই কয়লার গুহায় মাটি চাপা পড়ে এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন, বাগলী ছড়া, মাঝের ছড়া, কচুয়া ছড়া এলাকা দিয়ে একাধিক মামলার আসামীরা নিজেকে আইন শৃংখলা বাহিনী সোর্স পরিচয় দিয়ে পৃথক ভাবে প্রতিদিন ভারত থেকে কোটিকোটি টাকার ফুছকা, চিনি, জিরা, কম্বল, শাড়ি-কাপড়, কসমেটিকস, গরু, কয়লা ও মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের পর চাঁদা উত্তোলন করছে।

আর এই চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে এই দুই সীমান্তের অনেকেই রাতারাতি হয়েগেছে কোটিপতি। তাদের মধ্যে মাদক ও বিস্ফোরক মামলার আসামী সীমান্ত গডফাদার তোতলা আজাদের সোর্স কোটিপতি চোরাকারবারী রফ মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর পর চোরাকারবারী ও সোর্স বাহিনীর উৎপাত আরো বেড়ে যায়। এছাড়াও মধ্যনগর উপজেলার বাংগাল ভিটা, মাটিরাবন, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর, চিনাকান্দি, ডলুরা, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নতলা, চিনাউরাসহ দোয়ারা বাজার উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গরু, মহিষ, মাছ, শাড়ি-কাপড়, কসমেটিকস ও মাদকদ্রব্যসহ কোটিকোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের খবর পাওয়া গেছে।

এমতাবস্থায় আজ বুধবার (২৬ মার্চ) ভোর রাতে তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের চোরাচালানের নিরাপদ রোড খ্যাত জাদুকাটা নদীতে ১লাখ ৬০হাজার ৮শ টাকার মূল্যের ৬৭০ কেজি ফুছকা জব্দ করাসহ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নতলা সীমান্তের কামারভিটা নামকস্থানে ১৬লাখ ১৬হাজার টাকা মূল্যের ২০২টি ভারতীয় শাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও আরো ২লাখ ৫৭ হাজার ৩০হাজার টাকার বিভিন্ন মালামাল মালিক বিহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল একেএম জাকারিয়া কাদির সাংবাদিকদের জানান- উর্ধ্বতন সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির অভিযানসহ গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বতোভাবে অব্যাহত রয়েছে। আর সীমান্তের চিহ্নিত চোরাকারবারীদের আইনের আওতায় আনার হবে এবং জব্দ করা মালামাল সুনামগঞ্জ শুল্ক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।