Dhaka ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুর জেলার নৌ সীমানার পদ্মা – মেঘনা নদীতে জাটকা মাছ ধরার মহোৎসব

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুর জেলার নৌ সীমানার পদ্মা – মেঘনা নদীতে জাটকা মাছ ধরার মহোৎসব চলছে।

এসব জাটকা আবার প্রকাশ্য গ্রামের হাট বাজার বাড়ি বাড়ি এবং শহরের পাড়া মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে। অনেকের বাসাবাড়ি থেকে জাটকার মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনটি হবার কথা ছিল না,বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষক মহল।

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার নতুনরাস্তা,হরিসভা,পশ্চিমশ্রীরামদী,মধ্যশ্রীরামদী, পূর্বশ্রীরামদী,রঘুনাথপুর, জাফরাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় জাটকার হাট এবং বিক্রি যেনো ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে।

মাঝে মধ্যে জেলা উপজেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্স,কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ অভিযান চালালেও মৎস্য বিভাগের তেমন কোনো অভিযান নেই। জেলা পুলিশেরও জাটকার বিষয়ে কোন তৎপরতা নেই বললেই চলে। অনেকটা ফ্রি স্টাইলে জাটকা নিধন ও ক্রয় বিক্রয় চলছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। জাটকা রক্ষায় মৎস্য বিভাগের এমন ভূমিকায় জন মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সচেতন মানুষেরা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশ সংকট দেখা দেবে। এতে জেলে পল্লীতেও অভাব দেখা দেবে।

সরেজমিনে দেখা যায়,চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় এবং পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের নদীতে জেলেরা প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ধরছেন। রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে একশ্রেণীর  দূর্বৃত্ত  মৌসুমি জেলে ও ভাসমান আড়তদার সেজে ইলিশের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করতে ব্যক্তির লাভের আশায়  জাটকা ধ্বংস করছে।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা থেকে শুরু করে চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, কানুদি,  সফরমালি, আনন্দবাজার,কোড়ালিয়া চর,টিলাবাড়ী, যমুনা রোড, পুরান বাজারের অটো স্ট্যান্ড, খাল রাস্তা বাজার, বউবাজার, লোহার পোল,এসব কোম্পানির মোড়, পালপাড়া দাসপাড়া, পূর্ব সিরান্দী রঘুনাথপুর, মধ্যশ্রীরাদী,পূর্ব জাফরাবাদ,পশ্চিম রামদাসদী,বহরিয়া,দোকান ঘর, লক্ষ্মীপুর, আপনার হাট চরসহ নদীর তীরবর্তী এলাকা দিয়ে ব্যাপক জাটকা নিধন  এবং সিলভারের পাত্র বোলে করে হাটবাজারে, পাড়া মহল্লায় বাসা বাড়িতে ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

এদিকে, মেঘনার পশ্চিমপাড় হাইমচর চর এলাকা ও চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর এবং ইব্রাহিমপুর মেঘনা নদীর চর এলাকা দিয়ে প্রচুর পরিমাণে জাটকা ধরা ও বিক্রি করা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

অপরদিকে,ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা, দুলারচর নতুন বাজার, মনাই হাওলাদার বাজার, ছুরির চর, উত্তর তারাবুনিয়া, দক্ষিণ তারাবুনিয়া, মাল বাজার, কুবুদ্ধির ঘাট, বন্দুছি বাজার, নুরুদ্দি বাজার, চেয়ারম্যান বাজার। নড়ীয়া উপজেলার সুরেশ্বর বাংলা বাজার, চরআত্রা নওপাড়া। গোসাইরহাট উপজেলার খেজুর তলা, কোদালপুর লঞ্চঘাট, কুচাইপট্টি বটতলা, জালালপুর টেকপার, মেহেরজানের টেক, ঈশানবালা পদ্মা মেঘনায় নিধনকৃত জাটকা জাটকা কিনে চাঁদপুর, শরীয়তপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন জাটকা কারবারিরা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার মা ইলিশ রক্ষা অভিযান অনেকটাই ফলপ্রসু হওয়ায় নদীতে প্রচুর জাটকা বিচরণ করছে। এই সুযোগে একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত ঝাটকা নিধন ও ক্রয় বিক্রয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে জাতীয় মৎস্য সম্পদের বারোটা বাজাচ্ছে।

মার্চ ও এপ্রিল—এই দুই মাস নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও, নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ জালসহ বিভিন্ন ধরনের জাল ফেলে জাটকাসহ ইলিশ ও নদীর অন্যান্য মাছ শিকার করছে জেলেরা। এতে মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কিছু আড়তদার ও রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলে নামধারী কতিপয় দুর্বৃত্ত  নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করছে। এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে হাটবাজার ও আড়তে। সংরক্ষণ করে পাঠানো হচ্ছে মাওয়া মুন্সিগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

জেলা- উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা বলেন, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে, নিয়মিত অভিযানও চলছে। তবে কিছু অসাধু জেলে এখনো জাটকা শিকারের চেষ্টা করছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সাল থেকে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনার একটি নির্দিষ্ট অংশে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাদেশ জারি

চাঁদপুর জেলার নৌ সীমানার পদ্মা – মেঘনা নদীতে জাটকা মাছ ধরার মহোৎসব

Update Time : ০৭:৫৩:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুর জেলার নৌ সীমানার পদ্মা – মেঘনা নদীতে জাটকা মাছ ধরার মহোৎসব চলছে।

এসব জাটকা আবার প্রকাশ্য গ্রামের হাট বাজার বাড়ি বাড়ি এবং শহরের পাড়া মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে। অনেকের বাসাবাড়ি থেকে জাটকার মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনটি হবার কথা ছিল না,বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষক মহল।

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার নতুনরাস্তা,হরিসভা,পশ্চিমশ্রীরামদী,মধ্যশ্রীরামদী, পূর্বশ্রীরামদী,রঘুনাথপুর, জাফরাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় জাটকার হাট এবং বিক্রি যেনো ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে।

মাঝে মধ্যে জেলা উপজেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্স,কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ অভিযান চালালেও মৎস্য বিভাগের তেমন কোনো অভিযান নেই। জেলা পুলিশেরও জাটকার বিষয়ে কোন তৎপরতা নেই বললেই চলে। অনেকটা ফ্রি স্টাইলে জাটকা নিধন ও ক্রয় বিক্রয় চলছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। জাটকা রক্ষায় মৎস্য বিভাগের এমন ভূমিকায় জন মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সচেতন মানুষেরা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশ সংকট দেখা দেবে। এতে জেলে পল্লীতেও অভাব দেখা দেবে।

সরেজমিনে দেখা যায়,চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় এবং পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের নদীতে জেলেরা প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ধরছেন। রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে একশ্রেণীর  দূর্বৃত্ত  মৌসুমি জেলে ও ভাসমান আড়তদার সেজে ইলিশের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করতে ব্যক্তির লাভের আশায়  জাটকা ধ্বংস করছে।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা থেকে শুরু করে চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, কানুদি,  সফরমালি, আনন্দবাজার,কোড়ালিয়া চর,টিলাবাড়ী, যমুনা রোড, পুরান বাজারের অটো স্ট্যান্ড, খাল রাস্তা বাজার, বউবাজার, লোহার পোল,এসব কোম্পানির মোড়, পালপাড়া দাসপাড়া, পূর্ব সিরান্দী রঘুনাথপুর, মধ্যশ্রীরাদী,পূর্ব জাফরাবাদ,পশ্চিম রামদাসদী,বহরিয়া,দোকান ঘর, লক্ষ্মীপুর, আপনার হাট চরসহ নদীর তীরবর্তী এলাকা দিয়ে ব্যাপক জাটকা নিধন  এবং সিলভারের পাত্র বোলে করে হাটবাজারে, পাড়া মহল্লায় বাসা বাড়িতে ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

এদিকে, মেঘনার পশ্চিমপাড় হাইমচর চর এলাকা ও চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর এবং ইব্রাহিমপুর মেঘনা নদীর চর এলাকা দিয়ে প্রচুর পরিমাণে জাটকা ধরা ও বিক্রি করা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

অপরদিকে,ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা, দুলারচর নতুন বাজার, মনাই হাওলাদার বাজার, ছুরির চর, উত্তর তারাবুনিয়া, দক্ষিণ তারাবুনিয়া, মাল বাজার, কুবুদ্ধির ঘাট, বন্দুছি বাজার, নুরুদ্দি বাজার, চেয়ারম্যান বাজার। নড়ীয়া উপজেলার সুরেশ্বর বাংলা বাজার, চরআত্রা নওপাড়া। গোসাইরহাট উপজেলার খেজুর তলা, কোদালপুর লঞ্চঘাট, কুচাইপট্টি বটতলা, জালালপুর টেকপার, মেহেরজানের টেক, ঈশানবালা পদ্মা মেঘনায় নিধনকৃত জাটকা জাটকা কিনে চাঁদপুর, শরীয়তপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন জাটকা কারবারিরা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার মা ইলিশ রক্ষা অভিযান অনেকটাই ফলপ্রসু হওয়ায় নদীতে প্রচুর জাটকা বিচরণ করছে। এই সুযোগে একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত ঝাটকা নিধন ও ক্রয় বিক্রয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে জাতীয় মৎস্য সম্পদের বারোটা বাজাচ্ছে।

মার্চ ও এপ্রিল—এই দুই মাস নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও, নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ জালসহ বিভিন্ন ধরনের জাল ফেলে জাটকাসহ ইলিশ ও নদীর অন্যান্য মাছ শিকার করছে জেলেরা। এতে মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কিছু আড়তদার ও রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলে নামধারী কতিপয় দুর্বৃত্ত  নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করছে। এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে হাটবাজার ও আড়তে। সংরক্ষণ করে পাঠানো হচ্ছে মাওয়া মুন্সিগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

জেলা- উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা বলেন, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে, নিয়মিত অভিযানও চলছে। তবে কিছু অসাধু জেলে এখনো জাটকা শিকারের চেষ্টা করছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সাল থেকে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনার একটি নির্দিষ্ট অংশে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে।