Dhaka ০৯:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পর্যটকে মুখরিত সিরাজগঞ্জের নবরত্ন মন্দির

সিরাজগঞ্জে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে নবরত্ন মন্দির। আর মন্দিরটি দেখার জন্য ঈদের আনন্দে প্রতিদিন ভির করছে পর্যটক। নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও এক নজর দেখা আর ইতিহাসকে জানতে পদচারনায় মুখরিত হচ্ছে মন্দির এলাকা। তবে প্রয়োজনীয় আবাসন ব্যবস্তা না থাকাসহ নানা সমস্যা নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে মন্দিরটি। এথেকে পরিত্রাণ চায় পর্যটকরা। তবে কর্তৃপক্ষের মতে সরকারি বরাদ্দ পেলে সংস্কার ও নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হবে। এজন্য মন্ত্রনালয়ের সদিচ্ছা প্রয়োজন।

ইতিহাস থেকে জানাযায় প্রায় ৩শ বছরেরর বেশি পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুলের এই নবরত্ন মন্দির। মূল মন্দিরের আয়তনে ১৫ বর্গমিটারেরও বেশি। মন্দিরের নির্মাণ সময় সম্পর্কিত কোনও শিলালিপি পাওয়া যায়নি। আনুমানিক ১৭০৪-১৭২৮ সালের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলি খানের শাসনামলে রামনাথ ভাদুরী নামক জমিদার মতান্তরে তশিলদার এই মন্দির নির্মাণ করেন। দুইপাশের ধান ক্ষেতের বুক চিড়ে সেখান থেকে ছোট্ট একটি মেঠো পথ আঁকাবাঁকা এই পথের ধারেই পোড়ামাটির কাব্যে গাঁথা অনন্য এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বাংলাদেশে প্রাচীন যেসব হিন্দু মন্দির দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর অন্যতম একটি এই হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির। তিনতলা বিশিষ্ট এই স্থাপনার ওপরের রত্ন বা চূড়াগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

মূল মন্দিরের বারান্দায় ৭টি ও ভেতরের দিকে ৫টি প্রবেশপথ আছে। দ্বিতীয় তলায় কোনও বারান্দা নেই। হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির তিনতলা বিশিষ্ট। এখানে আলাদা আলাদা কক্ষে ৯টা বিগ্রহ রয়েছে। তাই নবরত্ন মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়। পুরো মন্দিরের বাইরের দিক পোড়া মাটির অলঙ্করণে ঢাকা। এসব অলঙ্করণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানান দেবদেবীর মূর্তি, লতা-পাতায়।

রামনাথ ভাদুরী দিনাজপুরের কান্তজি মন্দিরের মতই এখানে একটি মন্দির তৈরি করেন। হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরের আশপাশে আরও তিনটি ছোট মন্দির রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরের উত্তর পাশে আছে শিব-পার্বতী মন্দির। পাশে দোচালা আকৃতির চন্ডি মন্দির এবং দক্ষিণ পাশের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আছে শিব মন্দির। সবগুলো মন্দিরেরই বর্তমানে দেখভাল করছে সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর। কালের বিবর্তনে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত, দেশ বিভাগ ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে হারিয়ে যায় জমিদারের পূর্ব পুরুষেরা। যুগযুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে আছে এই নবরত্ন মন্দির। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ঐতিহ্যের এই নিদর্শন খুঁজে বের করেন।

মন্দির দেখতে আসা নাজমুল হোসেন নামে এক পর্যটক জানান,প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই সরকার যদি একটু দৃষ্টি দেয় তাহলে এটি হতে পারে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

মন্দিরের দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার মোহাব্বস হোসেন জানান,মন্দিরে আগত পর্যটকদের গাড়ী পার্কিং এবং ভুমি অধিগ্রহনের মাধ্যমে রেষ্ট হাউস নির্মাণ এবং মন্দিরের কলেবরে বৃদ্ধিসহ জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।

এবিষয়ে মন্দিরের দায়িত্ব¡প্রাপ্ত কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান জানান,মন্দিরে দেশি বিদেশি পর্যটক এবং বিভিন্ন সময়ে ভিআইপিরা পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় আমরা তেমন সেবা দিতে পারিনা। এজন্য মন্ত্রনালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ পেলে সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।

তবে স্থানীয়দের মতে মন্দিরের চারপাশে জায়গাগুলো দখলমুক্ত করে পর্যটকদের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে ধর্মীয় ভক্তবৃন্দের সুবিধাসহ এই মন্দিরটি আরও হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

ব্রহ্মপুত্র নদে ‌নি‌খোঁজ জে‌লের মর‌দেহ উদ্ধার

পর্যটকে মুখরিত সিরাজগঞ্জের নবরত্ন মন্দির

Update Time : ০৯:৫৭:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫

সিরাজগঞ্জে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে নবরত্ন মন্দির। আর মন্দিরটি দেখার জন্য ঈদের আনন্দে প্রতিদিন ভির করছে পর্যটক। নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও এক নজর দেখা আর ইতিহাসকে জানতে পদচারনায় মুখরিত হচ্ছে মন্দির এলাকা। তবে প্রয়োজনীয় আবাসন ব্যবস্তা না থাকাসহ নানা সমস্যা নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে মন্দিরটি। এথেকে পরিত্রাণ চায় পর্যটকরা। তবে কর্তৃপক্ষের মতে সরকারি বরাদ্দ পেলে সংস্কার ও নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হবে। এজন্য মন্ত্রনালয়ের সদিচ্ছা প্রয়োজন।

ইতিহাস থেকে জানাযায় প্রায় ৩শ বছরেরর বেশি পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুলের এই নবরত্ন মন্দির। মূল মন্দিরের আয়তনে ১৫ বর্গমিটারেরও বেশি। মন্দিরের নির্মাণ সময় সম্পর্কিত কোনও শিলালিপি পাওয়া যায়নি। আনুমানিক ১৭০৪-১৭২৮ সালের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলি খানের শাসনামলে রামনাথ ভাদুরী নামক জমিদার মতান্তরে তশিলদার এই মন্দির নির্মাণ করেন। দুইপাশের ধান ক্ষেতের বুক চিড়ে সেখান থেকে ছোট্ট একটি মেঠো পথ আঁকাবাঁকা এই পথের ধারেই পোড়ামাটির কাব্যে গাঁথা অনন্য এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বাংলাদেশে প্রাচীন যেসব হিন্দু মন্দির দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর অন্যতম একটি এই হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির। তিনতলা বিশিষ্ট এই স্থাপনার ওপরের রত্ন বা চূড়াগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

মূল মন্দিরের বারান্দায় ৭টি ও ভেতরের দিকে ৫টি প্রবেশপথ আছে। দ্বিতীয় তলায় কোনও বারান্দা নেই। হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির তিনতলা বিশিষ্ট। এখানে আলাদা আলাদা কক্ষে ৯টা বিগ্রহ রয়েছে। তাই নবরত্ন মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়। পুরো মন্দিরের বাইরের দিক পোড়া মাটির অলঙ্করণে ঢাকা। এসব অলঙ্করণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানান দেবদেবীর মূর্তি, লতা-পাতায়।

রামনাথ ভাদুরী দিনাজপুরের কান্তজি মন্দিরের মতই এখানে একটি মন্দির তৈরি করেন। হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরের আশপাশে আরও তিনটি ছোট মন্দির রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরের উত্তর পাশে আছে শিব-পার্বতী মন্দির। পাশে দোচালা আকৃতির চন্ডি মন্দির এবং দক্ষিণ পাশের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আছে শিব মন্দির। সবগুলো মন্দিরেরই বর্তমানে দেখভাল করছে সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর। কালের বিবর্তনে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত, দেশ বিভাগ ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে হারিয়ে যায় জমিদারের পূর্ব পুরুষেরা। যুগযুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে আছে এই নবরত্ন মন্দির। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ঐতিহ্যের এই নিদর্শন খুঁজে বের করেন।

মন্দির দেখতে আসা নাজমুল হোসেন নামে এক পর্যটক জানান,প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই সরকার যদি একটু দৃষ্টি দেয় তাহলে এটি হতে পারে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

মন্দিরের দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার মোহাব্বস হোসেন জানান,মন্দিরে আগত পর্যটকদের গাড়ী পার্কিং এবং ভুমি অধিগ্রহনের মাধ্যমে রেষ্ট হাউস নির্মাণ এবং মন্দিরের কলেবরে বৃদ্ধিসহ জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।

এবিষয়ে মন্দিরের দায়িত্ব¡প্রাপ্ত কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান জানান,মন্দিরে দেশি বিদেশি পর্যটক এবং বিভিন্ন সময়ে ভিআইপিরা পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় আমরা তেমন সেবা দিতে পারিনা। এজন্য মন্ত্রনালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ পেলে সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।

তবে স্থানীয়দের মতে মন্দিরের চারপাশে জায়গাগুলো দখলমুক্ত করে পর্যটকদের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে ধর্মীয় ভক্তবৃন্দের সুবিধাসহ এই মন্দিরটি আরও হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম।