Dhaka ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উচ্ছেদে বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে বসবাস বেশি দুশ্চিন্তায় এসএসসি পরিক্ষার্থীরা

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঈদের আগের দিন হঠাৎ বনবিভাগের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ৮ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন প্রায় ২শ পরিবারের মানুষ। ফলে দিনে রোদ, রাতে অন্ধকার আর ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। অবস্থায় সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছে এবারের এসএসসি পরিক্ষার্থীরা।

এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগের দিন গত ৩০ মার্চ দিনব্যাপী কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা রেঞ্জের সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকায় হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযান চালায় বনবিভাগ। অভিযান চালিয়ে ঈদ ফিতরের সকল প্রস্তুতির মালামাল, ঘরবাড়িসহ প্রায় ২০০ অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে তছনছ করে দেওয়া হয়। বনবিভাগের হঠাৎ এমন উচ্ছেদে গৃহহীন ও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে এসব পরিবারের মানুষেরা। নেই বিশুদ্ধ পানি সাপ্লাই ব্যবস্থাও। ফলে গত ৮ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে আতঙ্কে বসবাস করছেন শিশু, গর্ভবর্তী নারী, বৃদ্ধসহ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মানুষ।

ফলে দিনে রোদ, রাতে অন্ধকার আর ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তাদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে রূপ নিয়েছে বিষাদে। আর বিদ্যুৎ না থাকায় একদিকে গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠছে তাদের জনজীবন, অপরদিকে রাতে অন্ধকারে আলোর অভাবে লেখাপড়া করতে পারছে না এসব পরিবারের স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। অথচ আর মাত্র দুইদিন পরেই সারা দেশে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরিক্ষা।

এ অবস্থায় আলোর অভাবে পড়াশোনায় ক্ষতির মুখে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছে এবারের এসএসসি পরিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ওই দুটো গ্রামে একাধিকবার গেলেও এখনো সরকারী কোনো কর্মকর্তা- কর্মচারীরা পরিদর্শনে যাননি। ফলে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় হতাশায় আহাজারীতে না বিলেপ করছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মানুষেরা। আর কোনো সময় না দিয়ে ঈদের আগের দিন হঠাৎ বনবিভাগের এমন উচ্ছেদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেসহ নানাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহলের মানুষ।

এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমা আক্তার ও সায়মন হোসেন বলেন, এই দুই এলাকা থেকে আমরা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এবার এসএসসি পরিক্ষা দিবো। কিন্তু বনবিভাগের উচ্ছেদের পরবিদ্যুৎহীন হয়ে আমরা অন্ধকারে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। আমাদের বই-খাতা সব চাপা পড়ে আছে। দিনের বেলায় গরমে নির্বিঘ্নে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আর রাতে অন্ধকারে আলোর অভাবে পড়াশোনা হচ্ছে না। তাই পরিক্ষা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। পরিক্ষার্থীদের অভিভাবক আলী হোসেন, বাবু মিয়াসহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঈদের আগের দিন অমানবিকভাবে বনবিভাগের উচ্ছেদে আমরা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।

বেচে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, পানি, বিদ্যুৎ। সেটাও এখানে নেই। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ না থাকায় অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে আমাদের জনজীবন। হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে বিশেষ করে বেশি সমস্যায় পড়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হলেও তাদের কোনো প্রদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। সিনাবহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, উচ্ছেদের কারণে বিদ্যুৎ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে পরিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতেও বড় রকম ক্ষতি হচ্ছে।

এব্যাপারে ঢাকা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির চন্দ্রা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, বনবিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে আমাদের বৈদ্যুতিক মিটার, তার ও খুটি নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো তালিকা করে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেলে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

১৮ বিচারককে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার

উচ্ছেদে বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে বসবাস বেশি দুশ্চিন্তায় এসএসসি পরিক্ষার্থীরা

Update Time : ০২:০৪:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঈদের আগের দিন হঠাৎ বনবিভাগের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ৮ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন প্রায় ২শ পরিবারের মানুষ। ফলে দিনে রোদ, রাতে অন্ধকার আর ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। অবস্থায় সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছে এবারের এসএসসি পরিক্ষার্থীরা।

এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগের দিন গত ৩০ মার্চ দিনব্যাপী কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা রেঞ্জের সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকায় হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযান চালায় বনবিভাগ। অভিযান চালিয়ে ঈদ ফিতরের সকল প্রস্তুতির মালামাল, ঘরবাড়িসহ প্রায় ২০০ অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে তছনছ করে দেওয়া হয়। বনবিভাগের হঠাৎ এমন উচ্ছেদে গৃহহীন ও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে এসব পরিবারের মানুষেরা। নেই বিশুদ্ধ পানি সাপ্লাই ব্যবস্থাও। ফলে গত ৮ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে আতঙ্কে বসবাস করছেন শিশু, গর্ভবর্তী নারী, বৃদ্ধসহ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মানুষ।

ফলে দিনে রোদ, রাতে অন্ধকার আর ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তাদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে রূপ নিয়েছে বিষাদে। আর বিদ্যুৎ না থাকায় একদিকে গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠছে তাদের জনজীবন, অপরদিকে রাতে অন্ধকারে আলোর অভাবে লেখাপড়া করতে পারছে না এসব পরিবারের স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। অথচ আর মাত্র দুইদিন পরেই সারা দেশে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরিক্ষা।

এ অবস্থায় আলোর অভাবে পড়াশোনায় ক্ষতির মুখে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছে এবারের এসএসসি পরিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ওই দুটো গ্রামে একাধিকবার গেলেও এখনো সরকারী কোনো কর্মকর্তা- কর্মচারীরা পরিদর্শনে যাননি। ফলে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় হতাশায় আহাজারীতে না বিলেপ করছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মানুষেরা। আর কোনো সময় না দিয়ে ঈদের আগের দিন হঠাৎ বনবিভাগের এমন উচ্ছেদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেসহ নানাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহলের মানুষ।

এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমা আক্তার ও সায়মন হোসেন বলেন, এই দুই এলাকা থেকে আমরা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এবার এসএসসি পরিক্ষা দিবো। কিন্তু বনবিভাগের উচ্ছেদের পরবিদ্যুৎহীন হয়ে আমরা অন্ধকারে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। আমাদের বই-খাতা সব চাপা পড়ে আছে। দিনের বেলায় গরমে নির্বিঘ্নে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আর রাতে অন্ধকারে আলোর অভাবে পড়াশোনা হচ্ছে না। তাই পরিক্ষা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। পরিক্ষার্থীদের অভিভাবক আলী হোসেন, বাবু মিয়াসহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঈদের আগের দিন অমানবিকভাবে বনবিভাগের উচ্ছেদে আমরা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।

বেচে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, পানি, বিদ্যুৎ। সেটাও এখানে নেই। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ না থাকায় অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে আমাদের জনজীবন। হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে বিশেষ করে বেশি সমস্যায় পড়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হলেও তাদের কোনো প্রদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। সিনাবহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, উচ্ছেদের কারণে বিদ্যুৎ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে পরিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতেও বড় রকম ক্ষতি হচ্ছে।

এব্যাপারে ঢাকা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির চন্দ্রা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, বনবিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে আমাদের বৈদ্যুতিক মিটার, তার ও খুটি নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো তালিকা করে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেলে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না।