কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার বিস্তীর্ন চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা। বাজারে দাম কম হওয়ায় পেঁয়াজ উৎপাদনের খরচ উঠানো নিয়ে হতাশায় পড়েছেন এ এলাকার পেঁয়াজ চাষিরা। বাজারে পেঁয়াজের ভালো দাম না থাকায় উৎপাদন খরচও উঠবেনা বলে জানান তারা। তবে এ বছর পেঁয়াজের ফলনে খুশি কৃষকেরা। বাজার একটু স্বভাবিক হলে অনেক লাভবান হবেন বলেও জানান চাষিরা। কৃষি উপকরনের দাম কমানোসহ তিস্তা মহাপরিকল্পনার জোর দাবি জানিয়েছে তিস্তা পাড়ের কৃষকেরা। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কৃষি
উৎপাদন খরচ ছাড়াও পরিবহন খরচ কমে আসবে বলেও জানায় তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৫’শ ৬০ হেক্টর নির্ধারন করা হয়েছে। প্রায় ৫’শ ৩৫ হেক্টও জমি পেঁয়াজ চাষের আওতায় এসেছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৫হাজার ৮’শ ২৪ মেট্রিক টন। এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পেঁয়াজ চাষিদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়ায় পেঁয়াজের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বাজার দর ভালো থাকলে এবারে পেঁয়াজ চাষিরা অনেক লাভবান হবেন বলেও জানান তারা। সরেজমিন উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা পেঁয়াজ উঠাতে ব্যস্ত সময়
পার করছেন। পেঁয়াজের বাম্পার ফলনে খুশি কৃষকেরা। তবে পেঁয়াজের বাজার দর কম থাকায় উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন কৃষকেরা। এবারে আবহাওয়া আনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের ফলন আনেক ভালো হয়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলের পেঁয়াজ চাষিরা জানান, এবারে যেভাবে পেঁয়াজের ফলন হয়েছে বাজার দর ভালো থাকলে দ্বিগুন লাভের সম্ভাবনা থাকতো।
তারা বলেন, বর্তমান বাজারে যে দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, এ দর বৃদ্ধি না হলে লাভবান তো দুরের কথা আসল খরচ তোলাই মুশকিল হয়ে পড়বে। তিস্তার চরাঞ্চলের দরি কিশোরপুর এলাকার পেঁয়াজ চাষি লাল মিয়া জানান, এবারে চরে প্রায় দেড় একর জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরও জানান, পেয়াজ চাষাবাদ করতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে, প্রায় ১লক্ষ টাকা। পেঁয়াজ উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে ২০ হাজার টাকা। মোট খরচ হবে প্রায় ১লক্ষ ২০ হাজার। পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করছেন, প্রায় ১’শ মণ। বাজার দর মণ প্রতি ১৬’শ টাকা হলেও ১লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বিক্রি হবে। তবে তিনি দাবি করে বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে উৎপাদন খরচ ছাড়া পরিবহন খরচ অনেক কমে আসবে। আমরা তিস্তা পাড়ের কৃষকেরা অনেক লাভবান হতে পারবো। এসময় তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনার জোর দাবি জানান।
এছাড়া তিস্তার চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকার পেঁয়াজ চাষি শেখ ফরিদ, নুরুজ্জমান মিয়া, ধলু মিয়া, ফখরুল ইসলাম ও মাইদুল ইসলামসহ আরও অনেকে বলেন, এবারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বাজার দর স্বভাবিক না থাকলে আমাদের লোকসানে পড়তে হবে। এ এলাকার কৃষকদেও দাবি, কৃষি উপকরনসহ সার, কীটনাশক ও ডিজেলের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। উৎপাদন ও পরিবহন খরচ কমাতে তিস্তা মহাপরিকল্পনার দাবি তিস্তা পাড়ের কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন জানান, এবারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পেঁয়াজ চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যহত ছিলো বিধায় এবারে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বাজার দর ভালো থাকলে পেঁয়াজ চাষিরা অনেক লাভবান হবেন বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তা পাড়ের চাষিদের পরিবহন খরচ কমে আসবে। তাতে করে তারা কৃষি উৎপাদন খরচ ছাড়াও দ্বিগুন লাভ করতে পারবে।