Dhaka ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে ভারত

বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে ভারতীয় স্থল বন্দর ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানির পথ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণার পর বাংলাদেশি পণ্যবাহী চারটি ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। ঘটনাটি ঘেেটছে বুধবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায়। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের গেট থেকে মালবাহী ট্রাকগুলো বেনাপোল বন্দর হয়ে ঢাকায় ফেরত যায়।

বাংলাদেশের পণ্য ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় কোনও দেশে যাওয়ার জন্য ২০২০ সালের ২৯ জুন একটি চুক্তি করা হয়েছিল। ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) সেই চুক্তি বাতিল করেছে।

বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনও দেশে পণ্য রফতানিতে ২০২০ সালের ২৯ জুনের পর ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের একটি শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে অন্য কোনও বন্দর বা বিমানবন্দর ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। ভারত বলেছে, যেসব পণ্যবোঝাই ট্রাক ইতিমধ্যে ভারতের ভূখণ্ডে আছে, সেগুলোকে দ্রুত ভারতের ভূখণ্ড ত্যাগ করতে হবে।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা বন্ধের জন্য ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় একটি চিঠি ইস্যু করেছে কাস্টমসে। এ চিঠির আলোকে ট্রানজিট সুবিধার পণ্য বেনাপোল বন্দর থেকে পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ঢাকার রফতানিকারক ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠানের ছিল।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় পেট্রাপোল কাস্টমস থার্ড কান্ট্রির কোনও পণ্যে কার্পাস ইস্যু করেনি। ফলে গতকাল তৃতীয় কোনও দেশে রফতানির জন্য আনা চার ট্রাক পণ্য তারা রিসিভ করেনি।

উল্লেখ্য ২০২০ সালের ২৯ জুন ভারত এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাংলাদেশকে দিয়েছিল, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো তৃতীয় দেশে সহজে পণ্য পাঠাতে পারতো। এখন সেই সুবিধা বাতিল করলো মোদী সরকার।

ভারতীয় রপ্তানিকারকদের চাপের ফলেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষত গার্মেন্টস খাতের ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা দীর্ঘদিন ধরেই এই সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা অভিযোগ করছিলেন, প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০টি ট্রাক বাংলাদেশ থেকে দিল্লি বিমানবন্দর কার্গো টার্মিনালে প্রবেশ করে, যার ফলে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। বিমান সংস্থাগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে ও কার্গো প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে, ফলে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

ভারতের অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশোন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি বলেন, দিল্লির কার্গো টার্মিনালে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে জটলা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে প্লেন ভাড়ার হার বেড়েছে, রপ্তানি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণে বিলম্ব হচ্ছে ও ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ভারতীয় বিশ্লেষকদের দাবি, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি-আমদানি ব্যবস্থাপনা অনেকাংশে ভারতীয় অবকাঠামোর উপর নির্ভর করে। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হলে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়ায় দেরি, খরচ বৃদ্ধি ও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কে সিসির উদ্যোগে মৃত মুসলিম মানুষের গোসলের জন্য স্থয়ীভাবে আধুনিক স্থান নির্ধারণ

বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে ভারত

Update Time : ১০:৪৪:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে ভারতীয় স্থল বন্দর ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানির পথ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণার পর বাংলাদেশি পণ্যবাহী চারটি ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। ঘটনাটি ঘেেটছে বুধবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায়। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের গেট থেকে মালবাহী ট্রাকগুলো বেনাপোল বন্দর হয়ে ঢাকায় ফেরত যায়।

বাংলাদেশের পণ্য ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় কোনও দেশে যাওয়ার জন্য ২০২০ সালের ২৯ জুন একটি চুক্তি করা হয়েছিল। ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) সেই চুক্তি বাতিল করেছে।

বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনও দেশে পণ্য রফতানিতে ২০২০ সালের ২৯ জুনের পর ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের একটি শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে অন্য কোনও বন্দর বা বিমানবন্দর ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। ভারত বলেছে, যেসব পণ্যবোঝাই ট্রাক ইতিমধ্যে ভারতের ভূখণ্ডে আছে, সেগুলোকে দ্রুত ভারতের ভূখণ্ড ত্যাগ করতে হবে।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা বন্ধের জন্য ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় একটি চিঠি ইস্যু করেছে কাস্টমসে। এ চিঠির আলোকে ট্রানজিট সুবিধার পণ্য বেনাপোল বন্দর থেকে পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ঢাকার রফতানিকারক ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠানের ছিল।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় পেট্রাপোল কাস্টমস থার্ড কান্ট্রির কোনও পণ্যে কার্পাস ইস্যু করেনি। ফলে গতকাল তৃতীয় কোনও দেশে রফতানির জন্য আনা চার ট্রাক পণ্য তারা রিসিভ করেনি।

উল্লেখ্য ২০২০ সালের ২৯ জুন ভারত এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাংলাদেশকে দিয়েছিল, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো তৃতীয় দেশে সহজে পণ্য পাঠাতে পারতো। এখন সেই সুবিধা বাতিল করলো মোদী সরকার।

ভারতীয় রপ্তানিকারকদের চাপের ফলেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষত গার্মেন্টস খাতের ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা দীর্ঘদিন ধরেই এই সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা অভিযোগ করছিলেন, প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০টি ট্রাক বাংলাদেশ থেকে দিল্লি বিমানবন্দর কার্গো টার্মিনালে প্রবেশ করে, যার ফলে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। বিমান সংস্থাগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে ও কার্গো প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে, ফলে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

ভারতের অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশোন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি বলেন, দিল্লির কার্গো টার্মিনালে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে জটলা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে প্লেন ভাড়ার হার বেড়েছে, রপ্তানি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণে বিলম্ব হচ্ছে ও ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ভারতীয় বিশ্লেষকদের দাবি, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি-আমদানি ব্যবস্থাপনা অনেকাংশে ভারতীয় অবকাঠামোর উপর নির্ভর করে। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হলে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়ায় দেরি, খরচ বৃদ্ধি ও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।