Dhaka ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রৌমারীতে অফিস থেকে স্কুল পিয়নকে তাড়িয়ে দিলেন ইউএনও

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বাবলু মিয়া নামের এক স্কুল পিয়নকে তাড়িয়ে দিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। সে উপজেলার যাদুরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস পিয়ন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকালের দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে। এঘটনায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দুই বছর ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাবলু মিয়া নামের এক স্কুল পিয়ন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন আওয়ামীলীগ সরকারের একজন দলীয় পদধারী নেতা হওয়ায় তার ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী।

মামলায় দুই দফা হেরে গিয়ে ওই কর্মচারীকে হয়রানি করতে সার্টিফিকেট নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক। পরে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বরে উভয়পক্ষে শুনানি শেষে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে স্কুল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বন্ধকৃত বেতন-ভাতাদি ছাড় করতে বিদ্যালয়ের সভাপতিকে নির্দেশ দেয় মাউশি।

তবে মাউশির নির্দেশ পাওয়ার দুই মাস অতিবাহিত হলেও কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেননি বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার হালদার। উল্টো ভুক্তভোগীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাড়িয়ে দেন তিনি। বিদ্যালয়ে নিয়মিত কমিটি না থাকায় বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন ইউএনও। ২০০৯ সালের ১৩ জুন রৌমারী উপজেলার যাদুরচর দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন) পদে নিয়োগ পান বাবলু মিয়া। পান উচ্চতর গ্রেডও। ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ‘পিয়ন’ পদটির নাম পরিবর্তন করে ‘অফিস সহায়ক’ নামকরণ করে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়। পিয়ন পদে থাকা বাবলু মিয়াকে ‘অফিস সহায়ক’ পদটি না দিয়ে ওই পদে পছন্দের লোক নিতে একে একে দুবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক।

এ নিয়ে গত ১৭ এপ্রিল রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী। এর কোনো প্রতিকার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী। গত ২৪ জুলাই কুড়িগ্রামের রৌমারী সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন পিয়ন বাবলু মিয়া। পরে ২৮ আগস্ট উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অফিস সহায়ক নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কর্মচারী বাবলু মিয়ার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক।কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত হলেও ‘নিয়োগকৃত পদে’ হাজিরা করা থেকে বিরত রাখছেন তিনি। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী। মামলায় দুই দফা হেরে গিয়ে ওই কর্মচারীকে হয়রানি করতে সার্টিফিকেট নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক। পরে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বরে উভয়পক্ষে শুনানি শেষে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে স্কুল কর্তৃপক্ষ বন্ধকৃত বেতন-ভাতাদি ছাড় করতে বিদ্যালয়ের সভাপতিকে নির্দেশ দেন মাউশি।

ভুক্তভোগী বাবলু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, দুই বছর ধরে বন্ধ থাকা বেতন-ভাতার বিষয়ে জানতে আমার বিদ্যালয়ের সভাপতি ইউএনও স্যার হওয়ায় আজ তার অফিসে গেলে তিনি আমার ওপর ক্ষেপে যান। তুমি আর আমার অফিসে ঢুকবে না বলে হুমকিসহ তাড়িয়ে দেন। এ সময় আমার পক্ষে ন্যায়সঙ্গত সুপারিশ করার চেষ্টা করলে এলাকার মানুষের কাছে সুধীজন হিসেবে পরিচিত অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক আব্দুল আউয়াল স্যারের সঙ্গেও তার অফিস কক্ষে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ইউএনও।

যাদুরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার হালদার অফিস কক্ষ থেকে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বের করে দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রধান শিক্ষককে ডেকে ১০-১৫ দিনের মধ্যে বেতন-ভাতা ছাড় করা হবে। তার আগে ওই কর্মচারীকে অহেতুক অফিসে আসার প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

কে সিসির উদ্যোগে মৃত মুসলিম মানুষের গোসলের জন্য স্থয়ীভাবে আধুনিক স্থান নির্ধারণ

রৌমারীতে অফিস থেকে স্কুল পিয়নকে তাড়িয়ে দিলেন ইউএনও

Update Time : ০৪:১৯:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বাবলু মিয়া নামের এক স্কুল পিয়নকে তাড়িয়ে দিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। সে উপজেলার যাদুরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস পিয়ন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকালের দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে। এঘটনায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দুই বছর ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাবলু মিয়া নামের এক স্কুল পিয়ন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন আওয়ামীলীগ সরকারের একজন দলীয় পদধারী নেতা হওয়ায় তার ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী।

মামলায় দুই দফা হেরে গিয়ে ওই কর্মচারীকে হয়রানি করতে সার্টিফিকেট নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক। পরে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বরে উভয়পক্ষে শুনানি শেষে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে স্কুল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বন্ধকৃত বেতন-ভাতাদি ছাড় করতে বিদ্যালয়ের সভাপতিকে নির্দেশ দেয় মাউশি।

তবে মাউশির নির্দেশ পাওয়ার দুই মাস অতিবাহিত হলেও কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেননি বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার হালদার। উল্টো ভুক্তভোগীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাড়িয়ে দেন তিনি। বিদ্যালয়ে নিয়মিত কমিটি না থাকায় বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন ইউএনও। ২০০৯ সালের ১৩ জুন রৌমারী উপজেলার যাদুরচর দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন) পদে নিয়োগ পান বাবলু মিয়া। পান উচ্চতর গ্রেডও। ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ‘পিয়ন’ পদটির নাম পরিবর্তন করে ‘অফিস সহায়ক’ নামকরণ করে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়। পিয়ন পদে থাকা বাবলু মিয়াকে ‘অফিস সহায়ক’ পদটি না দিয়ে ওই পদে পছন্দের লোক নিতে একে একে দুবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক।

এ নিয়ে গত ১৭ এপ্রিল রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী। এর কোনো প্রতিকার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী। গত ২৪ জুলাই কুড়িগ্রামের রৌমারী সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন পিয়ন বাবলু মিয়া। পরে ২৮ আগস্ট উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অফিস সহায়ক নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কর্মচারী বাবলু মিয়ার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক।কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত হলেও ‘নিয়োগকৃত পদে’ হাজিরা করা থেকে বিরত রাখছেন তিনি। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী। মামলায় দুই দফা হেরে গিয়ে ওই কর্মচারীকে হয়রানি করতে সার্টিফিকেট নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক। পরে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বরে উভয়পক্ষে শুনানি শেষে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে স্কুল কর্তৃপক্ষ বন্ধকৃত বেতন-ভাতাদি ছাড় করতে বিদ্যালয়ের সভাপতিকে নির্দেশ দেন মাউশি।

ভুক্তভোগী বাবলু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, দুই বছর ধরে বন্ধ থাকা বেতন-ভাতার বিষয়ে জানতে আমার বিদ্যালয়ের সভাপতি ইউএনও স্যার হওয়ায় আজ তার অফিসে গেলে তিনি আমার ওপর ক্ষেপে যান। তুমি আর আমার অফিসে ঢুকবে না বলে হুমকিসহ তাড়িয়ে দেন। এ সময় আমার পক্ষে ন্যায়সঙ্গত সুপারিশ করার চেষ্টা করলে এলাকার মানুষের কাছে সুধীজন হিসেবে পরিচিত অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক আব্দুল আউয়াল স্যারের সঙ্গেও তার অফিস কক্ষে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ইউএনও।

যাদুরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার হালদার অফিস কক্ষ থেকে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বের করে দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রধান শিক্ষককে ডেকে ১০-১৫ দিনের মধ্যে বেতন-ভাতা ছাড় করা হবে। তার আগে ওই কর্মচারীকে অহেতুক অফিসে আসার প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়েছে।