Dhaka ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাথরঘাটায় প্রবাসী স্ত্রীকে মারধর করে টাকা-স্বর্ণালংকার লুট, ১৮ লাখ চাঁদা দাবি

বরগুনার পাথরঘাটায় ওমান প্রবাসী শিরিন আক্তার নামের এক নারীকে মারধর করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক স্বামী সুজন সরদার সেলিমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর আবারও সালিশ ডেকে ১৮ লাখ টাকা দাবি করেন ওই স্বামী। বুধবার দুপুর ১ টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ভুক্তভোগী প্রবাসী নারী।

লিখিত বক্তব্যে শিরিন আক্তার জানান, ২০০১ সালে কাকচিড়া ইউনিয়নের সিংড়া বুনিয়া গ্রামের আব্দুর রব সর্দারের ছেলে সুজন সর্দার সেলিমের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সুজন সর্দার তার স্ত্রী শিরিন আক্তারের কোন খোঁজ খবর রাখেন না। এরমধ্যে তাদের সংসারে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের জন্ম হয়। সংসারের কোন খোঁজ-খবর না রাখার কারণে শিরীন আক্তার ২০১৬ সালে পাড়িদেন ওমান দেশে। সেখানে তার আয় করা টাকা স্বামীর কাছে পাঠান যাতে দেশে  থাকা দুই সন্তানের ঠিকমতো খোঁজখবর রাখেন। কিন্তু স্বামী সন্তানদের কোন খোঁজ খবর না রাখায় টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিলে স্ত্রীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী সুজন সরদার সেলিম সন্তানদের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন শুরু করেন এবং স্ত্রী শিরিন আক্তারকে মুঠো ফোনে অশ্লীল ভাষায় গাল-মন্দ করেন ও বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকেন।

পরে গত ৪ এপ্রিল দেশে এসে স্বামীকে রেজিস্ট্রি করে তালাক দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১০ এপ্রিল রাতে সুজন সরদার সেলিম তার দলবল নিয়ে বাড়িতে হামলা করে ২ ভরি স্বর্ণালংকার এবং নগদ ৫০ হাজার লুট করে নিয়ে যান। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে সালিশ মীমাংসায় বসলে সেখানেও ১৮ লাখ টাকা দাবি করেন। এখানে আবারো মারধর করলে সরকারি পুলিশ সেবা ৯৯৯ কল করলে পাথরঘাটা থানা পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। এ ঘটনার পরে শিরীন আক্তার পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। বর্তমান সময়েও বিভিন্ন লোকজন দিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। এ থেকে বাঁচার জন্য এবং সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য তিনি সাংবাদিকদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

শিরিন আক্তারের মেয়ে রুমি আক্তার জানান, তার মা প্রবাসে যাওয়ার পর থেকেই তার বাবা তাদেরকে শারীরিক এবং মানসিক কষ্টের মধ্যে রাখত। বাবা খোঁজ খবর না নেয়ায় তাদেরকে নানার বাড়িতে থাকতে হয়েছে। এখন তার মা বিদেশ থেকে আসার পরেও তাকে বিভিন্ন রকমের হয়রানি করছে। আমরা এর একটি সুষ্ঠু সমাধান চাই।

স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আল আমিন জানান, দুই পক্ষকে নিয়ে শালিসের মাধ্যমে মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুজন সরদার সেলিম সালিশের কথা স্বীকার করলেও টাকা এবং হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে মুঠোফোনে জানান, তিনি কোন চাঁদা দাবি করেননি, যখন প্রবাসে গেছে তখন যেই টাকা দিয়েছেন সেই টাকা ফেরত চেয়েছেন।

পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান জানান, সম্প্রতি ৯৯৯ থেকে আমাদেরকে জানান এক নারীকে মারধর করছে। ঘটনা শোনার পরেই পাথরঘাটা থানা পুলিশ গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

উলিপুরে গভীর রাতে রড ছাড়াই আরসিসি রাস্তা ঢালাই জনরোষে ঠিকাদার ও লেবাররা পালিয়ে যায়

পাথরঘাটায় প্রবাসী স্ত্রীকে মারধর করে টাকা-স্বর্ণালংকার লুট, ১৮ লাখ চাঁদা দাবি

জন দেখেছেন : ০৬:৫৮:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

বরগুনার পাথরঘাটায় ওমান প্রবাসী শিরিন আক্তার নামের এক নারীকে মারধর করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক স্বামী সুজন সরদার সেলিমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর আবারও সালিশ ডেকে ১৮ লাখ টাকা দাবি করেন ওই স্বামী। বুধবার দুপুর ১ টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ভুক্তভোগী প্রবাসী নারী।

লিখিত বক্তব্যে শিরিন আক্তার জানান, ২০০১ সালে কাকচিড়া ইউনিয়নের সিংড়া বুনিয়া গ্রামের আব্দুর রব সর্দারের ছেলে সুজন সর্দার সেলিমের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সুজন সর্দার তার স্ত্রী শিরিন আক্তারের কোন খোঁজ খবর রাখেন না। এরমধ্যে তাদের সংসারে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের জন্ম হয়। সংসারের কোন খোঁজ-খবর না রাখার কারণে শিরীন আক্তার ২০১৬ সালে পাড়িদেন ওমান দেশে। সেখানে তার আয় করা টাকা স্বামীর কাছে পাঠান যাতে দেশে  থাকা দুই সন্তানের ঠিকমতো খোঁজখবর রাখেন। কিন্তু স্বামী সন্তানদের কোন খোঁজ খবর না রাখায় টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিলে স্ত্রীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী সুজন সরদার সেলিম সন্তানদের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন শুরু করেন এবং স্ত্রী শিরিন আক্তারকে মুঠো ফোনে অশ্লীল ভাষায় গাল-মন্দ করেন ও বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকেন।

পরে গত ৪ এপ্রিল দেশে এসে স্বামীকে রেজিস্ট্রি করে তালাক দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১০ এপ্রিল রাতে সুজন সরদার সেলিম তার দলবল নিয়ে বাড়িতে হামলা করে ২ ভরি স্বর্ণালংকার এবং নগদ ৫০ হাজার লুট করে নিয়ে যান। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে সালিশ মীমাংসায় বসলে সেখানেও ১৮ লাখ টাকা দাবি করেন। এখানে আবারো মারধর করলে সরকারি পুলিশ সেবা ৯৯৯ কল করলে পাথরঘাটা থানা পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। এ ঘটনার পরে শিরীন আক্তার পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। বর্তমান সময়েও বিভিন্ন লোকজন দিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। এ থেকে বাঁচার জন্য এবং সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য তিনি সাংবাদিকদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

শিরিন আক্তারের মেয়ে রুমি আক্তার জানান, তার মা প্রবাসে যাওয়ার পর থেকেই তার বাবা তাদেরকে শারীরিক এবং মানসিক কষ্টের মধ্যে রাখত। বাবা খোঁজ খবর না নেয়ায় তাদেরকে নানার বাড়িতে থাকতে হয়েছে। এখন তার মা বিদেশ থেকে আসার পরেও তাকে বিভিন্ন রকমের হয়রানি করছে। আমরা এর একটি সুষ্ঠু সমাধান চাই।

স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আল আমিন জানান, দুই পক্ষকে নিয়ে শালিসের মাধ্যমে মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুজন সরদার সেলিম সালিশের কথা স্বীকার করলেও টাকা এবং হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে মুঠোফোনে জানান, তিনি কোন চাঁদা দাবি করেননি, যখন প্রবাসে গেছে তখন যেই টাকা দিয়েছেন সেই টাকা ফেরত চেয়েছেন।

পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান জানান, সম্প্রতি ৯৯৯ থেকে আমাদেরকে জানান এক নারীকে মারধর করছে। ঘটনা শোনার পরেই পাথরঘাটা থানা পুলিশ গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।